নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বাবার কোলে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের যে বর্ণনা উঠে এসেছে, সেটি গা শিউরে ওঠার মতো।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দোকানি আবদুল্লাহ আল মামুনের বর্ণনা অনুযায়ী, শিশু তাসকিয়া আক্তার জান্নাত ও তার বাবা আবু জাহেরকে গুলি করলে সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর শিশুটির মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে বাবা-মেয়ে দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাদের আবার গুলি করা হয়।
বুধবার বিকেলে চারটার দিকে বেগমগঞ্জের পূর্ব হাজীপুরে বাবার সঙ্গে দোকানে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয় চার বছরের তাসকিয়া। গুলিবিদ্ধ হয় তার বাবা। তিনি দেশের বাইরে থাকেন।
তাসকিয়ার অনুরোধেই সৌদি আরব থেকে দুই মাস আগে দেশে ফেরেন জাহের। জন্মের পর এই প্রথম বাবাকে কাছে পায় শিশুটি।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাড়ির পাশে ডোবায় বাবার সঙ্গে মাছ ধরে তাসকিয়া। বেলা সাড়ে ৩টায় বাবার কাছে বায়না ধরে চকোলেট আর চিপস কিনে দেয়ার।
বাবার সঙ্গে পাশের দোকানে চকোলেট কিনতে গিয়ে নিহত হয় সে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তার মাথা, মুখসহ পুরো শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যায়।
দোকানি মামুন বলেন, ‘দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের রিমন, মহিন, রহিম, আকবর, সুজনসহ ১৫-২০ সন্ত্রাসী আমার দোকানে আসে। তারা আবু জাহের ও তার মেয়েকে লক্ষ্য করে প্রথম এক রাউন্ড গুলি করে।
‘গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে শিশুকন্যাকে ইট দিয়ে আঘাত করে। একপর্যায়ে তারা দোকান থেকে বের হয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় পেছন থেকে রিমন পুনরায় আরও দুই রাউন্ড গুলি করে। এতে লুটিয়ে পড়ে বাবা-মেয়ে।’
গুলিতে নিহত শিশু তাসকিয়ার বাবা মাওলানা আবু জাহের। ছবি: নিউজবাংলাকী নিয়ে বিরোধ
শিশুর দাদা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমাদের বাড়ির খোরশেদ আলম নামে এক ব্যক্তি জমির মাটি বিক্রি করে রিমনের চাচা বাদশার কাছে। বাদশা ওই জায়গা থেকে ছয় ফুট মাটি কাটে। এরপর আরও মাটি কাটতে গেলে আমাদের বাড়ির লোকজন তাকে বাধা দেয়। কারণ এভাবে মাটি কাটতে গেলে তাদের জায়গা ভেঙে পড়বে।
‘একপর্যায়ে মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে সন্ত্রাসী রিমন ও তার সহযোগী রহিম, মহিন, সুজনসহ আরও কয়েকজন গত দুদিন একাধিকবার আমাদের বাড়িতে এসে গোলাগুলি করে এবং আমার অন্তঃসত্ত্বা ভাগ্নিকে পেটে লাথি দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব সন্ত্রাসীর শুধু তাসকিয়াকে হত্যা করেনি। এর আগেও তারা এলাকায় চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, ছিনতাইসহ বহু সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। তাদের ভয়ে এলাকার মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত থাকে।’
তাসকিয়ার বাবা আবু জাহেরের গুলি লাগে শরীর ও চোখে। মেয়ের মতোই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে তিনি ফিরে গেছেন নোয়াখালীতে।
জাহের বলেন, ‘আমার মেয়েটা আমাকে আর দেখে নাই। মেয়ের আবদারে দোকান থেকে চিপস কিনে দিতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে লাশ হয়ে গেল। ওরা আমার কলিজা নিয়ে গেছে।’
গ্রেপ্তার তিন
শিশুর খালু হুমায়ুর কবির বৃহস্পতিবার দুপুরে ১৭ জনকে আসামি করে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেছেন।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।’
নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপারেশন) দীপক জ্যোতি খিসা বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে আমরা বদ্ধপরিকর।’