বাংলা নববর্ষে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে নানা বিষয়ের পাশাপাশি উঠে এসেছে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গও। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর দেশে দেশেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, সরকার বসে নেই, সাধ্যমতো বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। আর নানা পদক্ষেপে পণ্যমূল্য কমে আসছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
বাংলা ১৪২৮ সালের সূর্য এরই মধ্যে অস্ত গেছে। আর সূর্য ডোবার ১ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় পর শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভি ছাড়াও দেশের বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিওতে এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের শুরুতেই দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। পাশাপাশি সংকীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতা ছেড়ে উদার জীবনব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদও জানান। নতুন বছর থেকে এই প্রেরণা দিতে চান তিনি।
বর্তমান সরকারের নেয়া নানা মেগা প্রকল্প নিয়েও কথা বলেন তিনি। চলতি বছর থেকেই প্রকল্পগুলো চালু হতে থাকলে দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে সে দেশের নানা মেগা প্রকল্পের জন্য বিদেশি ঋণও ভূমিকা রাখার পর বাংলাদেশের প্রকল্প নিয়ে নানা মহল থেকে ওঠা সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, এসব প্রকল্প নেয়ার আগে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে অর্থনৈতিক সমীক্ষা করা হয়েছে।
শেষ দিকে সরকারপ্রধান কথা বলেন পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে। বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য পরিবহনেও ভাড়া ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে আমাদের দেশেও কিছু কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।’
সরকার চুপচাপ বসে নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসার।’
চলমান পবিত্র রমজানে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে প্রায় এক কোটি পরিবারকে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাশ্রয়ী দামে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘রাজধানী ঢাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৫টি ফ্রিজার ভ্যানে করে সাশ্রয়ী দামে মাংস, ডিম ও দুধ বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর ফলে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ইতোমধ্যে কমে স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে।’
ঈদ উপলক্ষে ১ কোটি ৩৩ হাজার ৫৪টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে ১ লাখ ৩৩০ মেট্রিক টনের বেশি চালের বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ধরনে ক্ষোভসরকারের এসব পদক্ষেপ গ্রহণের পরও গণমাধ্যমে আসা খবর নিয়ে চটেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কিছু কিছু গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যেন দেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজ করছে। আমি দৃঢ়ভাবে আপনাদের জানাতে চাই যে, দেশে চালসহ কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই।’
টিসিবির ট্রাকের পেছনে নিম্ন আয়ের মানুষদের ভিড় নিয়ে নানা বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাশ্রয়ী দামে পণ্য কেনার জন্য টিসিবির দোকানে মানুষ ভিড় করবে- এটাই স্বাভাবিক। এটাকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার কী কারণ থাকতে পারে?’
করোনাভাইরাসের মহামারির সময়ও ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত অর্থবছরে রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এ বছরও আশানুরূপ রেমিট্যান্স আসছে।’
গত বছর রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এ বছর রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশ নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে।’
কৃষিকে অর্থনীতির মূল শক্তি মানছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির ফলে চাল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ উৎপাদনে আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে।’