সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে থাকা মন্তব্যকে ভুল বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তার বিবেচনায়, সেই প্রতিবেদনে বেশ কিছু তথ্যগত ভুল আছে।
বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা হতো তখন, যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। পেছনের কথা যদি তারা বলে, এটা আমার জানা নেই।
‘যখন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন থেকে কোনো ধরনের অন্যায়-অত্যাচার নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ করলে সে কিন্তু আইনের মুখোমুখি হয়। আমি সেটাই বারবার স্পষ্ট করে বলছি।’
কারাগারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচুর কর্মকর্তা
কারাগারে পুলিশ-র্যাবের শীর্ষস্থানীয় বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা রয়েছে- এ বিষয়টি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে যেই অন্যায় করে তাকেই বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। আমি মনে করি, এটা তারা যেটা করেছে, তাদের তথ্য বিভ্রাট হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, জেলখানায় আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর যথেষ্ট পরিমাণ; ইন্সপেকটর লেভেল থেকে ডিআইজি লেভেল পর্যন্ত কর্তকর্তা রয়েছেন। এটাই শুধু নয়, র্যাবেরও অনেক সদস্য রয়েছেন। এর অর্থ কেউই বিচারের ঊর্ধ্বে নয় আমাদের দেশে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বিভ্রাট
নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে তথ্য বিভ্রাটও দেখছেন মন্ত্রী। বলেন, ‘প্রথম কথা হলো এই অভিযোগটা বোধহয় ২০২১ এর, ২০২২ এর নয়। ২০২১-এ যে পরিমাণ গুম-খুনের কথা এখানে বলা হচ্ছে আমাদের রেকর্ডে কিন্তু সে পরিমাণ নেই।
‘আমরা সব সময়ই আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা যদি কেউ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়, নিরাপত্তা বাহিনী আত্মরক্ষার ভয়ে যদি গুলিও করেন, তাহলে প্রত্যেক ঘটনায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইনকুয়েরি করেন।
‘এতে যদি ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হয় তাহলেই সে বিষয়টি আমরা ক্লোজ করে দিই। আর যদি নির্বাহী মেজিস্ট্রেট মনে করেন এখানে ঘটনাটি অন্যায় বা অসতর্কতায় হয়েছে, এটা আমরা বিচার বিভাগে পাঠিয়ে দিই।’
গুমের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আত্মগোপন
গুমের একাধিক অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গুম-খুনের কথা যেগুলো বলছেন, এগুলো প্রায়ই অনুসন্ধান করে আমরা দেখেছি, তারা অনেকেই হয়তো আত্মগোপন করে গুম বলে চালিয়ে দিয়েছে। হয়তো ব্যবসায়ে লস করে নিজেই কোথাও চলে গেছেন।
‘এই কিছুদিন আগেও আপনারা দেখেছেন, এক লোক আড়াই বছর পর বলেছে ইচ্ছা করেই গুম হয়েছিল পরিবারের অশান্তির কারণে। আমরা নিরাপত্তা বাহিনী অনেককেই খুঁজে বের করে দিয়েছি। আমি এখনও জোর গলায় বলতে পারি, যে রিপোর্টটা বের হয়েছে তাতে তথ্যের গরমিল রয়েছে।’
পয়লা বৈশাখে সীমিত উদযাপনের পরামর্শ
পয়লা বৈশাখের আয়োজন নিয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু কোভিড এখনও শতভাগ যায়নি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এখনও বাসা থেকেই সব কাজ করেন। কাজেই সবাইকে বলব, কোভিডের বিষয়টি মাথায় রেখেই তারা যেন সবাই এটাকে সীমিত আকারে করেন।’
‘ফেসবুকের গুজবে মানুষ এখন বিশ্বাস করে না’
ফেসবুকে ছড়ানো গুজবের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিটিআরসি ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। আমরা কালকেও তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, ফেসবুকের সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিরা এখান থেকে এসে ঘুরে গেছেন। একটা সুপারিশ যেটা আমরা করেছি, তারা সেটার বাস্তবায়ন করবেন বলে আমাদের বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘যারা ফেসবুকে এসব প্রচার করেন তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নিই। কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে বিচার চায়, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেব। মানুষ এখন ধীরে ধীরে টের পাচ্ছে এসব গুজব ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণে ফেসবুক কিন্তু এখন বিশ্বাসও করে না। মানুষ বিশ্বাসের আগে যুক্তিটা জানতে চায়। তথ্যটা জানতে চায়।’