বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওষুধ দরকার ২০ টাকার, খরচ করতে হচ্ছে ২০০

  •    
  • ১২ এপ্রিল, ২০২২ ০৮:২৩

এক চিকিৎসক এক বিশেষ সমস্যায় ‘বেকলো-২৫ মিলিগ্রাম’ এর একটি ট্যাবলেট সেবন করার পরামর্শ দিলে ফার্মেসির কর্মী তা বিক্রি করতে রাজি হননি। এর একটি ওষুধের দাম ২০ টাকা, ওই বিক্রেতা ২০০ টাকায় ১০টির এক পাতা ছাড়া বিক্রি করবেন না বলে জানান। অন্য এক চিকিৎসক ১৮০ টাকা দামের ফুসফুসের ৬টি ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিলে ৭২০ টাকা অযথা খরচ করে কিনতে হয়েছে ১০টি। ওষুধের দোকানে এই প্রবণতা একেবারেই নতুন।

আইনজীবী নাহিদা খানমের হাতের মাসল স্প্যাজমের কারণে তীব্র ব্যথা, সেই সঙ্গে হাত নাড়ানো বন্ধ। পরিচিত চিকিৎসক ফোনে তাৎক্ষণিক দুটি ওষুধ সেবন করতে বলেন।

এর মধ্যে ‘মায়োলাক্স’ নামের ওষুধটি পাওয়া যায় রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ফার্মেসিতে। কিন্তু সেখানে একটি ওষুধ কেটে বিক্রি করা হবে না, জানানো হয় নিতে হবে পুরো পাতা। ফলে সাত টাকার জায়গায় ব্যয় করতে হলো ৭০ টাকা।

দ্বিতীয় ওষুধ ‘জেনোল ৫০০’ এর দাম ১৩ টাকা। পাওয়া যায় ইস্কাটনের লাজফার্মায়। সেখানেও একই কথা বিক্রেতার। একটি ওষুধ কেটে বিক্রি করবে না সেখানেও। জানানো হলো এক পাতা নিতে হবে।

লাগবে ১৩ টাকার একটা, ১৩০ টাকায় ১০টা কেন নেব- এই বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কির পর বিক্রেতা বললেন, ‘তাহলে পাঁচটা নেন। কেটে দেয়া যাবে। এর নিচে বেচা নিষেধ।’

অগত্যা ৬৫ টাকা দিয়ে পাঁচটি ওষুধ কিনতে হলো।

এই দুটি ওষুধে কাজ না করায় পরে সেই চিকিৎসক ‘বেকলো-২৫ মিলিগ্রাম’ সেবন করার পরামর্শ দেন। এর দাম ২০ টাকা। ইস্কাটনের দিলু রোডের একটি ওষুধের দোকানে যাওয়ার পর সেই একই চিত্র। একটি ওষুধ দেয়া হবে না, কিনতে হবে ১০টার এক পাতা।

একটি কেটে না দিলে দুটি দেন অন্তত- এমন প্রস্তাবেও বিক্রেতা বললেন, ‘না, নিলে ১০টাই নিতে হবে।’

অর্থাৎ এই ২০ টাকার ওষুধ একটি সেবন করতে হলেও কিনতে হবে ২০০ টাকার ১০টি।

এর কী মানে- এই প্রশ্নে বিক্রেতা বলেন, ‘এটা কোম্পানি নিয়ম করেছে। কাটা ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নেবে না। যদি পুরা পাতা থাকে তাহলেই তারা নেবে।’

বিক্রেতা এই কথা বলার পর সেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে বেকলো ১০ মিলিগ্রামের দুটি ওষুধ দিতে বললে ঠিকই ১০টার পাতা থেকে দুটি দেন বিক্রেতা, দাম নেন ১৯ টাকা।

কেন একজনকে একটির বদলে ১০টি ওষুধ কিনতে হবে- এমন প্রশ্নে বেকলো-২৫ মিলিগ্রামের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এটা অপসোনিন কোম্পানির ওষুধ। তারা পাতা কেটে বিক্রি করতে নিষেধ করেছে। যদি কাটা ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, কোম্পানি ফিরিয়ে নেবে না।’

তবে অপসোনিন ফার্মার এরিয়া ম্যানেজার মাসুদ রানা এই ধরনের কোনো নির্দেশ দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি থেকে পাতা কেটে ওষুধ বিক্রি করা যাবে না, এমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ফার্মেসিগুলো নিজেদের সুবিধার জন্য এমন বলতে পারে।

‘তবে কিছু প্যাকেটজাত ওষুধ রয়েছে, যেগুলো একটা-দুইটা বিক্রি করলে প্যাকেটে থাকা অন্য ওষুধগুলো সমস্যা তৈরি হবে। সেগুলো একসঙ্গে বিক্রি করতে হবে- এমন নির্দেশনা আমাদের কোম্পানিগুলো দিয়ে থাকে।’

ওষুধের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা একেবারেই নতুন। তাও মফস্বলে দেখা যায়নি। ঢাকা শহরের দোকানগুলোতে এটি দেখা যাচ্ছে।

চিকিৎসক সাত দিনের জন্য যদি ১৪টি ওষুধ সেবন করতে বলেন, কিনতে হচ্ছে ২০টি আর দিনে তিনটি করে যদি ২১টি সেবন করতে বলা হয়, তাহলে কিনতে হচ্ছে ৩০টি।

এটি বিশেষ করে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা গ্রহণকে কঠিন করে তুলছে।

অন্যান্য নানা পণ্যের মতো ওষুধের দামও গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন না হলেও বাড়তি ওষুধ কিনতে হচ্ছে মানুষকে।

ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন মো. সাইদুজ্জামান। তাকে একটি ওষুধের ছয়টি ডোজ সেবন করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। একেকটির দাম ১৮০ টাকা।

কিন্তু পাতা কেটে বিক্রি করবেন না উত্তরার ১৪ সেক্টরের কোনো ওষুধ বিক্রেতা। তাই তার ছেলেকে কিনতে হয়েছে ১০টি ওষুধ। অর্থাৎ অযথাই খরচ করতে হয়েছে ৭২০ টাকা।

সাইদুজ্জামানের ছেলে সারোয়ার প্রতীক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওষুধ তো লাগবেই। না নিয়ে উপায় নেই। বিক্রেতারা বলছে, তারা কেটে বিক্রি করলে অন্যরা বাকি ওষুধ কিনতে চায় না।’

ফার্মেসিতে এই প্রবণতার বিষয়ে ওষুধ কোম্পানির মালিকপক্ষের সংগঠন ওষুধ শিল্প সমিতির কোনো ধারণা নেই। সমিতির মহাসচিব নিশ্চিত করেছেন, তারা এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেননি।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, ওষুধের পাতা কেটে বিক্রি করা যাবে না- এমন কোনো বিধান নেই। কেটে ওষুধ বিক্রি করা না হলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিয়ে মেইল করার পরামর্শ দিয়েছেন অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।

সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই পাল্টাল বক্তব্য

লার্জফার্মার যে বিক্রয়কেন্দ্র থেকে একটি ওষুধের বদলে পাঁচটি কিনতে হয়েছে, সেটিতে বিকেলে সাংবাদিক পরিচয়ে ফোন দিলে অভিযোগ অস্বীকার করেন ফার্মেসির কর্মকর্তা ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফার্মেসি বা কোম্পানিতে এমন কোনো নীতিমালা নেই। তবে কিছু ওষুধ রোগীর স্বার্থে পুরো পাতা নিতে বলা হয়। আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বিক্রি করে থাকি।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে তৎপর হওয়ার তাগিদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোগ সারানোর জন্য চিকিৎসক মনে করেছেন তিনটা ট্যাবলেটই যথেষ্ট। তবে ফার্মেসিগুলো হয়তো মনে করছে, ওষুধের পাতা কেটে বিক্রি করলে পরে বাকি ওষুধ বিক্রি করতে সমস্যা হবে। এই ভেবে হয়তো কিছু ফার্মেসি এমন করছে। এসব বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আরও তৎপর হওয়া উচিত।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর মুখপাত্র ও উপপরিচালক আইয়ুব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাতা কেটে ওষুধ বিক্রি করা যাবে না- এমন কোনো নীতিমালা অধিদপ্তর থেকে দেয়া হয়নি। ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমাদের একটি তদারকি দল রয়েছে, যারা নিয়মিত বাজার মনিটর করে। তারাও এই ধরনের কোনো অভিযোগ পায়নি।

‘বহু আগে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই ধরনের নীতিমালা বাস্তবায়ন করেছিল। তবে সেটা সব রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু আপনার মাধ্যমে নতুন অভিযোগ এসেছে, এটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখব।’

ভুক্তভোগীরা এমন সমস্যায় পড়লে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া মেইলে লিখিত অভিযোগ করারও পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, ‘মেইল পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এমন নির্দেশনা নেই: ওষুধ শিল্প সমিতি

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খুচরা ও পাতা ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা যাবে এমন নির্দেশনা কোনো ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া হয়নি। কিছু ফার্মেসি নিজেদের মতো এমন কাজ করতে পারে। ওষুধ শিল্প সমিতি থেকে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

‘যেহেতু আপনি এই বিষয়ে কোম্পনিগুলোর অবস্থা জানতে চেয়েছেন, তাই বিষয়টি আমরা সমিতিতে আলোচনা করব।’

এ বিভাগের আরো খবর