‘দেশের মানুষের মানসিকতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, আজ তারা কপালের টিপ নিয়ে হৈচৈ করেন। আর চুরি তো বাড়তেই পারে। দিন দিন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে টিউবওয়েলের হেড চুরি হতেই পারে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে না আসলে চুরি তো আরও বাড়তে পারে।’
নীলফামারীতে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম এই মন্তব্য করেছেন বলে সোমবার নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন।
সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমানের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম।
এ ছাড়া ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর্জা মুরাদ হাসান বেগ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কান্তিভুষণ কুণ্ডু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, জলঢাকা পৌরসভার মেয়র ইলিয়াছ হোসেন বাবলু, ডিমলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, রেলওয়ে পুলিশের সার্কেল কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার, ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকী, নীলফামারী প্রেস ক্লাবের সভাপতি তাহমিন হক ববিসহ আরও অনেকে।
সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কান্তিভুষণ কুণ্ডু চুরি বৃদ্ধির বিষয়টি উত্থাপন করে বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে টিউবয়েলের হেড (হাতলসহ মাথা), শ্যালো মেশিন চুরি হচ্ছে। মাদকাসক্তদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মাদকাসক্তরা ওই সব চুরির সঙ্গে জড়িত।’
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, সভার শেষ অংশে ওই বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ তিনি নিজেসহ সৈয়দপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহিন হোসেন করেন বলে জানান শাহিদ মাহমুদ।
তারা ওই পুলিশ কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি সরকারের পুলিশ বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে এমন ব্যাখ্যা দিতে পারেন না। যা বললেন তা সঠিক না। আমরা আপনার এমন ব্যাখ্যা মেনে নিতে পারি না।’
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ বলেন, ‘তার বক্তব্যের পরে ডিসি মহোদয় বক্তব্য দেন। তিনি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) বক্তব্যে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে দুষছিলেন, এটার প্রথম প্রতিবাদ জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা কান্তিভূষণ। তারপরেই আমি প্রতিবাদ জানাই।’
‘দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে উনি এ কথা বলতে পারেন না, মাদকের সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সম্পর্ক নেই। তিনি নিজের দায় এড়াতে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। আর টিপ নিয়ে সভায় কোনো সদস্যই কোনো কথা বলেননি। ওই কর্মকর্তাকে নিয়ে আমাদের সন্দেহ যে তিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছেন, না কি অন্য কারও এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।’
তিনি বলেন, এক এক করে হাউজের অনেকে তার কথার প্রতিবাদ জানান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কান্তিভূষণ বলেন, ‘পুলিশের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি তিনি। তার মুখ থেকে এ রকম বক্তব্য আশা করা যায় না। আমার কাছে খারাপ লেগেছে, যে কারণে আমি প্রথম এর প্রতিবাদ জানাই।’
আইন শৃঙ্খলা কমিটির আরেক সদস্য ও মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সারওয়ার মানিক বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলা মিটিং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
কথার পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তা। তবে তার চেয়ার, তার ড্রেস থেকে এটা বলা উচিত হয়নি।’
সম্প্রতি রাজধানীর এক কলেজ শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, তিনি হেঁটে যাওয়ার সময় এক পুলিশ সদস্য তার কপালের টিপ নিয়ে কটূক্তি করেছেন। প্রতিবাদ করায় তার শরীরে মোটরসাইকেল তুলে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
ঘটনাটি দেশে আলোড়ন তোলে। পরে পুলিশ সেই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি এরই মধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে। বাহিনীর সদস্যের অপেশাদার নানা আচরণের প্রমাণ মেলার কথা জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের নৈতিকতার স্খলন নিয়ে কথা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে কোনো কথা বলিনি। আমি বলেছি, রডের দাম বৃদ্ধির কথা। রডের দাম বৃদ্ধির কারণে টিউবওয়েলের হেড চুরি যাওয়ার কথা বলেছি।’
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। দেখা হচ্ছে কী পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন। তবে এরই মধ্যে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব জিনিসপত্রের দাম বেশি এটা ঠিক না। আমরা দায়িত্বশীল ব্যক্তি, আমরা এটা বলতে পারি না। তবে ডিসি বলেন, যদিও পরে উনি তার ভুলের জন্য ক্ষমা চান।’