কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় এবার আশানুরূপ হয়েছে আলুর ফলন। গতবার বাজার চড়া থাকায় চাহিদার চেয়ে আবাদ হয়েছে অনেক বেশি। কিন্ত কাঙ্খিত দাম না পেয়ে অনেকটাই হতাশ আলু চাষীরা। দাম না বাড়লে বড় ধরনের লোকশানের আশংকা করছেন তারা। বিশেষ করে উপজেলার ব্রাক,সিদ্দিক ও হিমালয় (কোল্ডস্টোর) আলুর হিমাগারে রয়েছে পর্যাপ্ত মজুদ। কৃষকরা জানান উৎপাদন খরচ উঠাতেই তারা উৎকণ্ঠিত। এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস জানায়,এবার আলুর উৎপাদন বেশি থাকায় দাম অনেকটাই কম।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৪৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার ৪৫১ মেট্রিক টন।
উপজেলার নতুন ফেরিঘাট এলাকায় অবস্থিত ব্র্যাক, হিমালয় ও সিদ্দিক এই তিনটি কোল্ডস্টোরে (হিমাগারে) বর্তমানে ১৮ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন খাবার ও বীজ আলু মজুত আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তিনটি হিমাগারের মোট ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি হিমাগারের শেডের মেঝেতে বিছানো শত শত মণ আলু। ভিতরে বস্তায় বস্তায় আলু সংরক্ষিত আছে। নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা পচে যাওয়া আলু আলাদা করে ফেলে দিচ্ছেন। নামমাত্র বিক্রি থাকায় হিমাগার থেকে খুচরা বাজারে আলু যাচ্ছে খুবই কম বলছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
শ্রীরায়ের চর গ্রামের কৃষক সন্তোষ সরকার জানান,প্রতিবছর ভুট্টা চাষে ভালো লাভ হতো। এবার আলু চাষ করে বিপদ ডেকে এনেছি। উৎপাদনের খরচই তুলতে পারছি না। ফলন ভালো হলেও বিক্রি করতে গেলে মাথায় হাত।
চর চাষি গ্রামের আলু ব্যবসায়ী জামসেদ আলী হতাশা প্রকাশ করে বলেন,খুচরা বাজারে দাম কিছুটা ভালো হলেও হিমাগারে ন্যায্যমূল্য মিলছে না। প্রতি কেজি আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণে খরচ ২৫–৩০ টাকা, অথচ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১২–১৩ টাকায়। এতে কেজিপ্রতি ১২–১৫ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
দৌলতপুর ইউনিয়নের কৃষক আবু হাসান বলেন,আগস্টে কৃষি মন্ত্রণালয় হিমাগার থেকে প্রতি কেজি ২২ টাকায় আলু বিক্রির নির্দেশ দিয়েছিল এবং সরকার ৫০ হাজার টন আলু কেনার সিদ্ধান্তও নেয়। কিন্তু বাস্তবে সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না। হিমাগারে রাখা ৪ হাজার বস্তার মধ্যে বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৫০ বস্তা তাও তিনগুণ লোকসানে।
ব্র্যাক কোল্ডস্টোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীর তারেক মাসুদ বলেন,বীজ আলু ছাড়া এখন সব আলু বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারছেন না। তাদের লোকসানের কথা ভেবে আমরা কোল্ডস্টোর ভাড়া কমিয়ে দিয়েছি, তবুও ক্ষতি এড়ানো কঠিন।
দাউদকান্দি উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, এ বছর আলুর উৎপাদন চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। তবে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার শিগগিরই সরকারি ক্রয় ও সংরক্ষণ কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে। আশা করছি, কৃষকরা লোকসান থেকে কিছুটা হলেও বাঁচতে পারবেন।