বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বিসিএস ক্যাডার’ কনস্টেবল কর্মস্থলে অনুপস্থিত এক বছর

  •    
  • ১০ এপ্রিল, ২০২২ ২০:২৩

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘উনি অনেকদিন ধরেই লাপাত্তা। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে যে বিতর্কটি উঠেছে তা একেবারেই তার ব্যক্তিগত বিষয়। এর সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে নিজের এএসপি হওয়ার ভুয়া খবর ছড়ানো সেই পুলিশ কনস্টেবল হাকিম উদ্দিন এক বছর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন।

২০২১ সালের মার্চে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগ থেকে ঢাকা রেঞ্জে বদলি হন। ডিপ্লোম্যাটিক বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নিলেও ঢাকা রেঞ্জে যোগ দেননি হাকিম।

এক বছরের বেশি সময় ধরে এভাবে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত করছে।

হাকিম উদ্দিন কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে নায়েক হলেও কনস্টেবল হিসেবেই তার বিসিএস উত্তীর্ণের খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ সদরদপ্তর থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালে কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেয়ার পর ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি তিনি নায়েক পদে উন্নীত হন।

৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর আলোচনায় আসেন হাকিম উদ্দিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাকিম ছড়িয়ে দেন, তিনি বিসিএস পুলিশে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। খবরটি ছড়িয়ে গেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছাবার্তা আর অভিনন্দন জানাতে থাকেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষও।

তার সঙ্গে কথা বলে একাধিক সংবাদমাধ্যম সংবাদও প্রকাশ করে। তিনি দাবি করেন, ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে তিনি ৬৭তম হয়েছেন।

পরে জানা গেছে, ৬৭তম হয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থী সঞ্জীব দেব।

হাকিম উদ্দিনের বিএসএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণের খবর নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ সদর দপ্তর।

তবে কোন উদ্দেশ্যে তিনি এই তথ্যটি ছড়িয়েছেন তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, হাকিম উদ্দিনের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। সায়েদাবাদ হাই স্কুল থেকে তিনি ২০১০ সালে মানবিক শাখায় এসএসসি পাশ করারর পর ২০১৩ সালে কনস্টেবল হিসেবে নিয়োগ পান।

২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর শিল্পাঞ্চল পুলিশে ছিল তার প্রথম কর্মস্থল। এরপর ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স, পিওম (উত্তর বিভাগ), ডিএমপি প্রটেকশন ও সর্বশেষ ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন।

সেখান থেকে হাকিম উদ্দিনের বদলি হয় ঢাকা রেঞ্জে। কিন্তু ঢাকা রেঞ্জে তিনি যোগদান করেননি।

ঢাকা রেঞ্জের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফিন্যান্স) জিহাদুল কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা রেঞ্জে তার পোস্টিং হয়েছিল, কিন্তু উনি জয়েন করেননি। আমাদের এখানে যেহেতু জয়েন করেননি তাহলে ডিএমপিতে থাকার কথা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যতদূর শুনেছি, তিনি আনঅথরাইজড অনুপস্থিত রয়েছেন। প্রায় এক বছর আগে পোস্টিং হলেও তিনি আমাদের এখানে আসেননি। এ জন্য সম্ভবত তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, হাকিম উদ্দিন ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগে ছিলেন। এরপর থেকে তিনি লাপাত্তা।

ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে এক বছরের বেশি সময় আগে চলে গেছেন। তার ট্রান্সফার হয়েছিল ঢাকা রেঞ্জে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদেরটা সাব ইউনিট। কারও বদলি হলে সেন্ট্রালে রিপোর্ট করতে হয়। সেখান থেকে সিসি নিয়ে যেখানে বদলি সেখানে যোগদান করতে হয়। আমাদের এখান থেকে ডিপার্চার নিয়ে হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট করেছে। আর সিসি নেয় নাই। ঢাকা রেঞ্জে আর যোগদানও করে নাই।’

ডিএমপির এই কর্মকর্তা জানান, কর্মস্থল থেকে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকলে এটাকে গরহাজির বলা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। হেডকোয়ার্টারে হাকিম উদ্দিনের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘উনি অনেকদিন ধরেই লাপাত্তা। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে যে বিতর্কটি উঠেছে তা একেবারেই তার ব্যক্তিগত বিষয়। এর সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

তিনি জানান, কেন তিনি অনুপস্থিত তা হেডকোয়ার্টার্সের ডিসিপ্লিন বিভাগ দেখছে।

তবে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তা জানতে ডিসিপ্লিন বিভাগের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলার জন্য হাকিম উদ্দিনের দুটি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে একটি বন্ধ পাওয়া যায়। সচল নম্বরটিতে কল ও এসএমএস দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

হাকিমকে নিয়ে নরসিংদীতে তোলপাড়

নরসিংদীতে রায়পুরার শ্রীনগর ইউনিয়নে এবার ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে তিনজন মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কৃষিতে ফারুক, প্রাণীতে তারেক ও পুলিশে হাকিম। এ খবরের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ এলাকায় আনন্দ উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে।

তবে এএসপি হওয়ার মিথ্যা গল্প সাজানোর বিষয়টি সামনে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবারও বিষয়টি আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

হাকিম পরীক্ষা না দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর কেনো ছড়িয়েছেন তা নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি তার পরিবারের লোকজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাকিমের গ্রামের লোকজন বলছেন, ‘আব্দুল হাকিম পুলিশ কনস্টেবল চাকরি করেন ঠিক আছে। তবে সে খুব-চালাক ও চতুর ছেলে। এখন শুনছি এএসপি হইছে, আবার শুনি মিথ্য কথা।’

এ বিষয়ে শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খান রাসেল নিউজবাংলাকে জানান, ‘এই ইউনিয়নে এবার ৪০তম বিসিএসের ফলাফলে পুলিশ ক্যাডারে মেধাতালিকায় হাকিমসহ তিন চূড়ান্ত হয়েছেন শুনেছি। এর মাঝে শ্রীনগর গ্রামে বজলুমিয়ার ছেলে মোহাম্মদ ওমর ফারুক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

‘বালুয়াকান্দি গ্রামের আওলাদ হোসেন এর ছেলে সোরাফ উদ্দিন তারেক প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এরা সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এই প্রথমবার এ ইউনিয়নে এক সাথে তিনজন বিসিএস ক্যাডারের মেধাতালিকায় নাম এসেছে। এতে আমরা ইউনিয়নবাসী গর্বিত। ঈদের পর সবাইকে ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে সংর্বধনা দেয়া হবে। তবে হাকিমের বিষয়টা বুঝে উঠতে পারছি না।’

হাকিমের বিষয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান এর কাছে জানাতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি জানান, ‘বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি আব্দুল হাকিমের বিষয়। তবে আমরা অফিসিয়াল ভাবে তার বিষয়ে কোন অবগত নই।

এ বিভাগের আরো খবর