পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আরএসআরএম এবার ঘোষণা না দিয়েই উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।
মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে এই তথ্যটি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদেরকে না জানালেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পরিদর্শকে কারখানাটি বন্ধ পাওয়া গেছে বলে রোববার ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জকে জানানো হয়েছে।
এই বিজ্ঞপ্তিটি আসে বিএসইসির পক্ষ থেকে।
২০২১ সালের শুরুতেও কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায় যান্ত্রিক ত্রুটিতে। এরপর বকেয়ার কারণে বিদ্যুৎ বিভাগ লাইনও কেটে দিয়েছিল। তবে টাকা পরিশোধের পর সেই সংযোগ আবার দেয়া হয়।
আর যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামতের পর গত অক্টোবর থেকে কারখানাটি চালু হবে বলে গত ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এরপর কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৯টি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এর একটি লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত বোর্ড সভা করার, একটি বোর্ড সভা পেছানোর, একটি লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা জানানো, একটি নিরীক্ষকের বক্তব্য, একটি রেকর্ড ডেটের আগে স্পটে থাকা ও রেকর্ড ডেট সংক্রান্ত, একটি লেনদেন বন্ধ থাকা সংক্রান্ত, একটি লেনদেন পুরনায় চালু হওয়ার বিষয়ে এবং একটি বার্ষিক সাধারণ সভা বিষয়ে।
কিন্তু কারখানা বন্ধ, এমন কোনো কথা কখনও জানানো হয়নি।
উৎপাদন বন্ধের তথ্য গোপন করার বিষয়ে জানতে আরএসআরএমের কোম্পানিসচিব মঈন উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিএসইসির এসআরএমআইসি বিভাগ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার পরে কোম্পানিকে শো-কজ করা হবে। এরপর শুনানি হবে এবং সেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গত এক বছরে আরএসআরএম এর শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ছিল ৩৬ টাকা ৮০ পয়সা। সর্বনিম্ন দর ১৮ টাকা ৪০ পয়সা। রোববার লেনদেন হয়েছে ১৯ টাকা ৮০ পয়সায়।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করে। বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪০ টাকা মূল্যে শেয়ার বিক্রি করেছে কোম্পানিটি।
কোম্পানিটি বাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা তুলে চলতি মূলধন অর্থায়ন, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করে।
এর ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আরএসআরএমের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণও আছে। ২০১ কোটি টাকা খেলাপি আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির স্থাবর সম্পত্তি নিলামে তুলতে গত জানুয়ারিতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও দেয় সোনালী ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- কোম্পানিটির কাছে সোনালী ব্যাংকের ২০১ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৫ টাকা। এই পাওনার বিপরীতে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় গ্রুপটির কারখানাসহ ১০০ শতক জমি বন্ধক রয়েছে। দীর্ঘদিনেও ঋণ পরিশোধ না করায় অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ (সংশোধন ২০১০) এর ১২ ধারার বিধান মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটির স্থাপনাসহ এসব স্থাবর সম্পত্তি নিলামে তোলা হবে।
রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (আরএসআরএম) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত৷ ৩১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণখেলাপির দায়ে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় গত ফেব্রুয়ারিতে।
তথ্য গোপনের অভিযোগ নতুন নয়
এর আগেও নানা সময় নানা কোম্পানির বিরুদ্ধে উৎপাদন বন্ধ ও চালুর বিষয়টি গোপন করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু বিএসইসি কখনও কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বিনিয়োগকারীদেরকে না জানিয়ে বস্ত্র খাতের কোম্পানি মিথুন নিটিং বিক্রি করে দেয়া হয়েছে নিলামে। বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেটি জানানো হয়েছে।
এর চেয়ে অবাক করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে তাল্লু স্পিনিং। কোম্পানিটি উৎপাদন শুরুর বিষয়টি ১৫ মাস গোপন রাখে। এই সময়ে কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা অভিহিত মূল্যের চেয়ে কম দামে কয়েক লাখ শেয়ার কিনেছেন।
কোম্পানিটি ২০২০ সালের ৩১ মে ঢাকা ও চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জকে নোটিশ দিয়ে জানায়, ওই বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে তাদের উৎপাদন বন্ধ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে তা।
- আরও পড়ুন: উৎপাদনের তথ্য ১৫ মাস গোপন তাল্লুর
অথচ ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট ডিএসইতে কোম্পানিটি জানায়, তাদের উৎপাদন ২০২০ সালের ৬ মে থেকে চালু আছে।
তখনই প্রশ্ন আসে, ৬ মে থেকে উৎপাদন চালু থাকলে ৩১ মে কীভাবে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় যে, কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ।
মাঝে শেয়ারদরে উল্লম্ফনের কারণ জানতে একবার নোটিশও করা হয়। তখনও কারখানা চালুর বিষয়ে কিছু না জানিয়ে বলা হয়, কোম্পানির কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। কিন্তু কারখানা চালুর বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।