বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্যে করোনামুক্তির বার্তা

  •    
  • ১০ এপ্রিল, ২০২২ ০৮:১৯

চারুকলা অনুষদের প্রবেশ পথের মুখে বারান্দা, জয়নুল গ্যালারি, জয়নুল স্কুল ঘর ও মাঠের মধ্যে প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। সুযোগ পেলেই এই কর্মযজ্ঞে হাত মেলাচ্ছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও। ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ প্রতিপাদ্যে বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা রাজপথে নামতে বাকি আর মাত্র কয়েক দিন।

বাঙালির সবচেয়ে বড় সর্বজনীন উৎসব বাংলা বর্ষবরণ। আর মাত্র কয়েক দিন। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ১৪২৯ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখে আনন্দে মাতবে সারা দেশ। আর বর্ষবরণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আনুষ্ঠানিকতা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। এর প্রস্তুতিতে মুখর চারুকলা প্রাঙ্গণ।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত দুই বছর নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠিত হয়নি মঙ্গল শোভাযাত্রা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবার রাজপথে ফিরছে এই বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য-‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে।’

প্রতি বছর এক মাস আগে থেকেই মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হলেও এবার কিছুটা দেরিতে শুরু হয়েছে। শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেল মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে মুখর ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থী।

চারুকলার প্রবেশপথের মুখে বারান্দা, জয়নুল গ্যালারি, জয়নুল স্কুল ঘর ও মাঠের মধ্যে কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। সুযোগ পেলেই এ কর্মযজ্ঞে হাত মেলাচ্ছেন চারুকলার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও।

মঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের আয়োজনে দায়িত্বে রয়েছেন চারুকলার ২২ ও ২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

চারুকলার প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই জয়নুল গ্যালারির মুখে দেখা গেল দেয়ালে সারি করে সাজানো রয়েছে জলরং ও অ্যাক্রেলিকে আঁকা বিভিন্ন আকার ও রকমের চিত্রকর্ম। সেখানে দায়িত্বে রয়েছেন ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম হীরক।

তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমরা ওয়াটার কালার অ্যাক্রেলিকে অনেক চিত্রকর্ম করেছি। সেগুলোই এখানে ডিসপ্লে করা হচ্ছে বিক্রির জন্য। এখান থেকেও আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রার কিছু ফান্ড কালেক্ট হবে।’

পাশেই সাজানো রয়েছে মাছ, ময়ূর, পাখি, ফুল, লতাপাতাসহ নানা মোটিফের সরাচিত্র। সেগুলোও বিক্রির জন্য।

জয়নুল গ্যালারির এক কক্ষে প্রবেশ করতেই দেখা গেল বাঘ, সিংহ, হাতি, পেঁচাসহ নানা কিছুর লোকজ ফর্মের মুখোশে রং করতে ব্যস্ত একদল শিক্ষার্থী। তাদের মাঝে চারুকলার প্রাক্তন শিক্ষার্থী অভিনেতা প্রাণ রায়কেও দেখা গেল।

তিনি বলেন, ‘অনেক বছরই হলো চারুকলার পাঠ চুকিয়েছি। কিন্তু বৈশাখ এলেই প্রাণটা নেচে ওঠে। সুযোগ পেলেই ছুটে আসি, ছোট ভাই-বোনদের সঙ্গে কাজ করি। এখনও প্রতি বছর মঙ্গল শোভাযাত্রায় সবচেয়ে বড় দুটি মুখোশ থাকে আমার বানানো।’

চারুকলার জয়নুল স্কুল, যেটাকে চারুকলার শিক্ষার্থীরা ডাকেন ‘পাখি ঘর’ নামে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল একদল শিক্ষার্থী মাউনবোর্ডে বানানো ছোট ছোট পাখিতে রং চড়াচ্ছেন।

এই কাজগুলো নিয়ে ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সোনালী বলেন, ‘আমরা কবুতর, ছোট রাজা-রানি ও তুহিন পাখিসহ নানা রকমের পাখি বানাচ্ছি, যেগুলো বিক্রির জন্য। তবে শোভাযাত্রাতেও থাকবে। আমাদের কাজগুলো বেশ এগিয়েছে। ফার্স্ট ইয়ার থেকে মাস্টার্স সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাসের সঙ্গে কাজ করছেন। ১৩ তারিখ পর্যন্ত আমরা এই কাজগুলো করব।’

চারুকলার মাঠে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল মোটিফগুলোর কাজ। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে টেপা পুতুল, ঘোড়া, পাখি ও মাছের কাঠামো।

এই কাজগুলোর দায়িত্বে থাকাদের একজন সুমিত সেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মোটিফগুলোর কাঠামো মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেছে। কাল রাত থেকেই আমরা এসবের ওপর কাগজের পেস্টিংয়ের কাজ শুরু করব। এরপর তা সাজিয়ে তুলতে আরও কাজ আছে।’

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্যের নেপথ্যে

এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে।’

এই প্রতিপাদ্য নিয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছরই আমাদের একটি প্রতিপাদ্য থাকে। আমরা সময়ের সঙ্গে, পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটা প্রতিপাদ্য তৈরি করি। পুরো আয়োজনটাও থাকে মোটামুটি সেটা ধরেই।

‘আমরা যে শিল্পকর্মগুলো করি তাতে প্রতিপাদ্যের একটা রিফ্লেকশন থাকে। আর এই বার্তাটার জন্য কিন্তু সবাই অপেক্ষা করে- আমরা কী বলতে চাইছি, আমরা কীভাবে সময়টাকে নিরূপণ করছি। এই সময়ে মানুষের চিন্ত-চেতনাটা কী রকম হওয়া উচিত সে রকম একটা নির্দেশনা আমরা দেই।’

এবারের প্রতিপাদ্যে সময়কে ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে এই অধ্যাপক বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গোটা বিশ্বে মানুষের মধ্যে হতাশা আছে। এই যুদ্ধের কারণে গোটা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক জায়গাতেও চাপ তৈরি হয়েছে। তার আঘাত আমাদের দেশেও এসেছে। এগুলোর প্রতিফলন হিসেবে আমাদের অনেক কিছুই করার ছিল বা ভাববার ছিল। কিন্তু আমরা সেসব কিছু বাদ দিয়ে করোনা থেকে মুক্তির বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা একটা স্বাভাবিক সময়ের মধ্যে এসেছি, এটাকে গ্রহণ করে আমরা কী করতে চাই, কোন দিকে এগোতে চাই- সে ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি রেখে আমরা এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছি।’

অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিনও মর্ম মুছায়ে' প্রতিপাদ্যের মধ্য দিয়ে করোনার কারণে যে বিশেষ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আমরা পড়েছিলাম, আমাদের জীবনযাত্রা, চিন্তা-ভাবনা, দর্শন- এসব কিছুর মধ্যে যে মলিনতার ছাপ পড়েছিল তা থেকে মুক্ত হয়ে আবার নির্মল পরিবেশ আমরা চাইছি এবং নির্মল ভবিষ্যতের দিকে এগোতে চাইছি।

‘এটা মাথায় রেখে আমাদের ফোক মোটিফ, তার মধ্যে একটা পুতুলের মোটিফ নেয়া হয়েছে। যেটা অনেকটা মাতৃকা মূর্তির মতো, মানে মায়ের একটা আদল। এটা বাচ্চাদের খেলনা হিসেবে ব্যবহার হয়। কিন্তু সেটাকে একটু পরিবর্তন করে দেয়া হচ্ছে। মানবজাতির প্রতিনিধি হিসেবে এটাকে নেয়া হয়েছে। সেখানে দুই হাত তুলে একটা মালা সময়টাকে বরণ করার দিকে ধাবিত। তার হাত দুটো এবং তার গোটা শরীরে নানা ধরনের মোটিফ, যার পুরোটাই প্রাকৃতিক, ফুল-পাতা নানা কিছু। আমরা যদি নির্মল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করি, সবকিছুই কিন্তু নির্মল প্রকৃতি, আমরা কিন্তু সেটিই আশা করি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী দিনটাকে যেভাবে আশা করি, আমরা নতুন করে কোনো কিছু যখন ভাবতে চাই তখন সবকিছুর মধ্যেই কিন্তু আমাদের প্রাকৃতিক যে বৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক যে নির্মলতা সজীবতা, সেগুলোকে আমরা প্রতীক হিসেবে নেই। এবারের আয়োজনে সেভাবেই মোটিফগুলোকে নেয়া হয়েছে। এরকম বর্ণময় মোটিফ আগে কখনো হয়নি। অত্যন্ত বর্ণিল, সুন্দর এবং সাদা যে জমিন থাকবে সেটা নির্মলতার প্রতীক। সেভাবেই এই মোটিফটা করা হচ্ছে।’

মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার চারুকলার সামনে থেকে শুরু না হয়ে টিএসসির সামনে থেকে শুরু হবে বলে জানান নিসার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এবারও শোভাযাত্রা সকাল ৯টায় শুরু হবে। আগের রাতে মোটিফগুলো আমরা টিএসসিতে নিয়ে রাখব।’

এ বিভাগের আরো খবর