বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয়ের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে বিভ্রান্তি

  •    
  • ৭ এপ্রিল, ২০২২ ২৩:০৮

মামলার বাদী মো. আসাদ শুরুতে দাবি করেন প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে তিনি এ মামলা করেন। তবে এক ঘণ্টার মধ্যে বক্তব্য পরিবর্তন করে আসাদ বলেন, তিনি সংক্ষুব্ধ হয়ে নিজেই মামলা করেছেন।

বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ মামলা কীভাবে হলো, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এ মামলার বাদী তারই স্কুলের অফিস সহকারী মো. আসাদ।

আসাদ শুরুতে দাবি করেন, প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মেদের নির্দেশে তিনি মামলাটি করেছেন। তবে প্রধান শিক্ষক বলছেন, তিনি এ ধরনের কোনো নির্দেশ দেননি।

মো. আসাদ এখন বলছেন কারও নির্দেশে নয়, সংক্ষুব্ধ বোধ করায় স্বপ্রণোদিতভাবে তিনি শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে ক্লাসে আলোচনা করেন হৃদয় মণ্ডল। তিনি ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। গোপনে তার অডিও ধারণ করে এক শিক্ষার্থী।

ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে ওই শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেয়। প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে।

বিদ্যালয় চত্বরের পাশের রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেন। স্কুলে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে ভেস্তে যায় সেই আলোচনা। একপর্যায়ে হৃদয় মণ্ডলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর রাতেই হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্কুল সহকারী মো. আসাদ।

আসাদ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হেড স্যার আমাকে ডেকেছিল, আমি গিয়েছিলাম। পরে তিনি আমাকে বাদী হতে বলেন, তাই বাদী হয়েছি।

অভিযোগের বিস্তারিত জানা নেই আসাদের। তবে তিনি বলেন, ‘ধর্ম বিষয়ে সে (হৃদয় মণ্ডল) কথা বলছে বলে… এরপর হেড স্যার আমাকে মামলার বাদী করেছে।’

প্রধান শিক্ষক ছাড়া আর কেউ মামলা করতে বলেছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নে আসাদ বলেন, ‘না অন্য স্যার ছিল। নাম হচ্ছে সাদ্দাম।’

চাপের কারণে মামলার বাদী হয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আমি চাকরি করি। হেড স্যারের কথায় মামলা করেছি।’

তবে এর এক ঘণ্টা পরেই আগের দাবি থেকে সরে আসেন আসাদ। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্ররা হেড স্যারকে অভিযোগ করার সময় আমি বিষয়টি জানতে পারি। এর পর নিজেই মামলা করেছি। মামলায় উল্লেখ করেছি, ধর্ম নিয়ে আপত্তিজনক কথা বলেছেন তিনি (হৃদয় মণ্ডল)।

‘মামলার জন্য আমাকে কেউ জোর করেনি অথবা প্রভাব খাটায়নি। আমি নিজে থেকেই মামলা করেছি।’

আসাদকে মামলার বাদী হতে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি বলে দাবি করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মেদ।

আরও পড়ুন: বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় ঠিক করেননি: ঢাবি শিক্ষক নেতা

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসাদকে কে মামলার বাদী হতে বলেছে তা আমি জানি না। পুলিশ তাকে বলতে পারে। তবে, শিক্ষককে শোকজ দেয়া ও পুলিশকে খবর দেয়া আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। স্কুলের অন্য শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধি এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেই সব করা হয়েছে।’

পুলিশও দাবি করছে, মামলা করার জন্য তারা কাউকে চাপ দেয়নি বা প্ররোচিত করেনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজ উল ইসলাম (সদর সার্কেল) নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসন থেকে কোনো জোর করেনি মামলা করার জন্য। বাদী নিজের ইচ্ছাতেই এ মামলা করেছেন।’

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির যে ধারায় মামলা করা হয়েছে সে ধারায় মামলা গ্রহণ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন বলে এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। মামলার কপিতে ২৯৫/২৯৫ (ক) ধারার উল্লেখ রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পেনাল কোডের ২৯৫ ধরায় কেউ মামলা করতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। তবে এর সঙ্গে ২৯৫ (ক) ধারা যোগ হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে না।’

ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ ধারায় 'কোনো শ্রেণিবিশেষের ধর্মের প্রতি অবমাননা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উপাসনালয়ের ক্ষতিসাধন করা বা অপবিত্র করার’ সংজ্ঞা ও শাস্তির প্রসঙ্গ রয়েছে।' এতে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি এ ধরনের অভিপ্রায়ে বা এ ধরনের অবগতি সহকারে জনগণের যে কোনো শ্রেণির উপাসনালয় বা ওই যে কোনো ব্যক্তিবর্গের পবিত্র বলে বিবেচিত কোনো বস্তু বিনষ্ট করেন, ক্ষতিগ্রস্ত করে অপবিত্র করেন যে, তার দ্বারা তিনি জনগণের যেকোনো শ্রেণির ধর্মের প্রতি অবমাননা করবে বা জনগণের যেকোনো শ্রেণির অনুরূপ বিনষ্টকরণ, ক্ষতিসাধন বা অপবিত্রকরণকে তাদের ধর্মের প্রতি অবমাননা বলে বিবেচনা করার সম্ভাবনা রয়েছে, সে ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

অন্যদিকে, ২৯৫ (ক) ধারায় ‘কোনো শ্রেণিবিশেষের ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে আবমাননা করে ওই শ্রেণির ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বিদ্বেষাত্মক কাজের’ সংজ্ঞা ও শাস্তির প্রসঙ্গ রয়েছে।

এই ধারায় বলা হয়, ‘যে ব্যক্তি, বাংলাদেশের নাগরিকদের যে কোনো শ্রেণির ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর অপমানিত করার অভিপ্রায়ে ইচ্ছাকৃত ও বিদ্বেষাত্মকভাবে উচ্চারিত বা লিখিত শব্দাবলির সাহায্যে বা দৃশ্যমান কোনো বস্তুর সাহায্যে ওই শ্রেণির ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমানিত করে বা অবমাননা করার চেষ্টা করে, সে ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করার ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো জোর বা প্রভাব বিস্তার করা হয়নি। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা রজু হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর