পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই রংপুর থেকে ঢাকাগামী বাস ও কোচ বন্ধ রাখার পেছনে আসলে কে, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খেলেও জবাব দেয়ার কেউ নেই। রংপুর মোটর মালিক সমিতি বলছে এই ধর্মঘট তাদের নয়, আর শ্রমিক ইউনিয়ন ধর্মঘটের দায় নিচ্ছে না।
মঙ্গলবার ভোর ৬ টা থেকে চলা এই ধর্মঘটের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও তা প্রত্যাহারের কোনো ঘোষণা নেই। আর এ কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোটর মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদকে নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) কক্ষে বৈঠক হবার কথা ছিল। সেখানে শ্রমিক নেতা এম এ মজিদ উপস্থিত হননি। তবে মালিক সমিতির পক্ষে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আফতাবুজ্জামান লিপন গেছেন।
লিপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে বসার কথা ছিল। আমি সেখানে গিয়েছি। জেলা প্রশাসনকে স্পষ্ট করে বলেছি, এই ধর্মঘট রংপুর মোটর মালিক সমিতির বিষয় নয়।
‘বিষয়টা হলো মজিদ সাহেবের আর যারা বন্ধ রাখছে তাদের অর্থাৎ কোম্পানির মালিকদের। কোম্পানির মালিকরা বাস ট্রাক অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার, তারা বুঝবে। আর মজিদ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত, সংগঠন হিসেবে তারা বুঝবেন।
তিনি বলেন, ‘সবারই ধারণা ছিল যে, মোটর মালিক সমিতি এটা করেছে । আমরা আজ সেটা স্পষ্ট করে বুঝিয়েছি যে ধর্মঘট আমাদের নয়।’
এম এ মজিদকে তার ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তিনি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রমজান মাসে যাত্রীদের দুর্ভোগ হোক আমরা সেটা চাই না। বাংলাদেশে যারা এ রকম অঘোষিত ধর্মঘট করে তাদের মধ্যে কিন্তু আমরা না। বিষয়টা হলো আমরা কোনো ধর্মঘট কল করি নাই। আমরা কোনো গাড়ি বন্ধ করি নাই, কোনো কর্মবিরতিও ডাকি নাই।
‘আমরা তো কাউকে গাড়ি বন্ধ করতে বলি নাই, গাড়ি বন্ধ। তাহলে কীভাবে গাড়ি বন্ধ হলো, কার নির্দেশে গাড়ি বন্ধ হলো সেটা আমরা জানতে চাই।’
বৃহস্পতিবার বিকালে রংপুর কামারপাড়া কোচ স্ট্যান্ডে গিয়ে একাধিক কাউন্টার মাস্টারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালিকপক্ষ থেকেই তাদের নিষেধ করা হয়েছে গাড়ি না ছাড়তে। তবে চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।
তবে সঞ্জিব নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘এটা শ্রমিক ইউনিয়ন বন্ধ করে নাই। যারা গাড়ির স্টাফ, তারা পরিবহন বন্ধ করছে। কারণ, তাদের বেতন ভাতা ও খোরাকি বাড়ছে না। এটা মালিকদের বলছে মালিকরা মানে নাই।’
ধর্মঘট প্রত্যাহার দাবি যাত্রীদের
নিতাই চন্দ্র নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আজ চাকরিতে যোগ দেয়ার কথা ছিল। যেতে পারি নাই। ফোন করে বলেছি, কিন্তু স্যার রাগ করছে। জানি না চাকরিটা থাকবে কি না।’
জহুরুল হক নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘আমি ঢাকার কাপাসিয়ায় যাব, কাউন্টারে এসে দেখি কাউন্টার বন্ধ। টিকিট কিনছিলাম। কিন্তু গাড়ি যাচ্ছে না। টিকেটও নিচ্ছে না, বলছে গাড়ি ছাড়লে ওই টিকিট দিয়ে যেতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ এত কিছু তো বুঝি না। গাড়ি ছাড়লে হলো।’
ক্ষুব্ধ সাধারণ শ্রমিকরাও
মিন্টু মিয়া নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘গাড়ি চললে সংসার চলে, না চললে নাই। কিন্তু তিনদিন ধরি গাড়ি বন্ধ, আমাদের সংসার চলে না। সবাই বলতেছে শ্রমিকরা গাড়ি বন্ধ করছে, কিন্তু আমরা তো গাড়ি চলবার চাই।’
রংপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এ ডব্লিও এম রায়হান শাহ্ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৈঠকে মজিদ সাহেব আসেননি। তবে ধর্মঘট প্রত্যাহার নিয়ে প্রাথমিকভাবে একটা কথা হয়েছে। কেন্দ্রে যারা মালিক তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা যতটুকু শুনেছি শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকদের বনিবনা হয়নি এজন্য এই সংকটটা তৈরি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সংকটটা দ্রুত সমাধান করতে।’
বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।