‘প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি’, ‘পিচ ব্লেন্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি' এবং 'পিস ল্যান্ড ইউনিভার্সিটি' নামে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনটিরই অস্তিত্ব নেই। আর এর ভিসি মো. নুরু হক সরকার ভুয়া। কিন্তু এই ভুয়া ভিসি দুই যুগের বেশি সময় ধরে শত শত ব্যক্তির কাছে ১৪৪টি বিষয়ে ডাক্তারি পাসে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে আসছিলেন। এমবিবিএসের প্রতিটি সার্টিফিকেটের জন্য নিতেন ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা। আর এসব ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে বেড়াচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যক্তি।
বুধবার রাজধানীর মালিবাগের প্যারামাউন্ট টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, তার সহযোগী ও চারজন ভুয়া ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ।
অন্য গ্রেপ্তার হলেন- নুরুলের সহযোগী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন; চার ভুয়া চিকিৎসক সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ, আমান উল্ল্যাহ ও দেবাশীষ কুন্ডু।
গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ভুয়া সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, অ্যাডমিট কার্ড, নকল সিল, চারটি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, প্রেসক্রিপশন, ভিজিটিং কার্ড, নব দিগন্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ডক্টর্স চেম্বারের প্যাডের কপি, কম্পিউটার জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, প্রতারক চক্রটি প্রায় দুই দশক ধরে ‘প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি’ নামক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার্টিফিকেট বিক্রির ব্যবসা করতো। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা ভুয়া ওয়েবসাইটে এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতো। বিজ্ঞাপনে কম্পিউটারাইজড ক্যাম্পাসের কথা উল্লেখ থাকতো, যা বাস্তবে অস্তিত্বহীন।
তিনি আরও জানান, চক্রটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুয়া আদেশ ও একটি হাইকোর্টের জাল রিট প্রদর্শন করতো। তাদের রোগী দেখার চেম্বার ছিল অত্যাধুনিক। নামফলক ছিল নানা গুরুত্বপূর্ণ ডিগ্রি সম্বলিত। এই ধরনের ১৪৪টি বিষয়ের ওপরে অসংখ্য সার্টিফিকেট দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে চক্রটি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, দেবাশীষ কুণ্ডু, আমান উল্ল্যাহ ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজসহ অসংখ্য ব্যক্তিদের ভুয়া ডাক্তারি সনদসহ অন্যান্য বহু বিষয়ে ভুয়া সনদ দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের চিকিৎসা গ্রহণ ও নিজেদের সন্তানদের যেকোন মেডিক্যাল অথবা ডেন্টাল কলেজে ভর্তির আগে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ক্ষেত্র বিশেষে ইউজিসির অনুমোদিত কি-না তা যাচাই করার পরামর্শ দেন তিনি।
ভুয়া ডাক্তারি সনদ নিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান ডিবির এ কর্মকর্তা।