আগামীতে বাংলাদেশেরও অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মেগা প্রজেক্টের জন্য লাখ লাখ কোটি টাকা ঋণ করে, সেই ঋণের টাকা দিয়ে পোলাও খাওয়ার দরকার ছিল না।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নতুন কমিটির পরিচিতি সভা ও ইফতার মাহফিলে তিনি এমন আশঙ্কার কথা জানান।
জি এম কাদের বলেন, ‘কিছুদিন আগে হঠাৎ করে দেখা গেল শ্রীলঙ্কার মতো একটি দেশ যাদের শিক্ষিতের হার ৯৫ শতাংশ। যারা অনেক আগেই মধ্য আয়ের দেশ হয়েছে। তাদের রিজার্ভ প্রচুর ছিল। লোকসংখ্যা অনেক কম। মাত্র দুই কোটি। কিন্তু এই সমৃদ্ধশালী দেশ হঠাৎ করে দেউলিয়া হয়ে গেল।’
শ্রীলঙ্কার বিষয় নিয়ে চিন্তার বিষয় আছে জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি মনে করি যে বিষয়টি সরকার যেভাবে দেখছে, আরও বেশি গভীরভাবে দেখা প্রয়োজন। ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিভিন্ন কারণে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমি যতটুকু খবর পেয়েছি, গত অর্থবছরে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে এই মুহূর্তে আমদানি করতে হয়েছে। সেই হিসাবে আমাদের আয় অনেক কম।’
জি এম কাদের বলেন, ‘বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বলছেন, আগে যেটা ১০ মাস চলত। এখন পাঁচ মাস চলবে। সামনের দিকে আরও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ হয়ে গেছে। আমরা সেটাকে হয়তো সামলে উঠতে পারতাম। কিন্তু বড় কথা হলো আমরা অনেক বড় ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়েছি। মেগা প্রজেক্টের নামে বিভিন্ন সূত্র থেকে বিভিন্ন ধরনের ঋণ গ্রহণ করেছি। অনেক সময় অনেক বেশি সুদ দিয়ে। আমাদের রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার।’
তিনি বলেন, ‘এক অর্থনীতিবিদ আমাকে সামনে পেয়ে বলে দিয়েছেন, গত অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ছিল সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকার মতো এবং সাড়ে ১১ লাখ কোটি টাকার মতো বর্তমান সরকারের এখন ঋণ রয়েছে। এ বছরও দেশি-বিদেশি ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার জন্য একটা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে আমরা যদি সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকি এবং এই খরচগুলো যখন আমাদের করতে হবে, তখন বাংলাদেশের দেউলিয়া হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।’
সরকার মেগা প্রকল্পের টাকা দিয়ে পোলাও খেয়েছে বলে দাবি করেন জাপা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘মেগা প্রজেক্ট করে, লাখ লাখ কোটি টাকা ঋণ করে, সেই ঋণের টাকা দিয়ে পোলাও খাওয়ার দরকার ছিল না। আমাদের দরকার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। যাতে আমরা সঠিকভাবে চলতে পারি।’
মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে পাঁচটা-দশটা প্রকল্প হাতে নেয়ার দরকার ছিল না। আমরা আস্তে আস্তে একটা একটা করে করতে পারতাম। যাতে, তাতে আমরা সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারতাম। এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হতে বাংলাদেশের একটি আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের ঋণের বোঝা আর বাড়ানো ঠিক হবে না। আর যদি ঋণ নিতেই হয় তাহলে দেশের দরিদ্র মানুষকে বাঁচানোর জন্য নেয়া যেতে পারে।’
সভার সভাপতিত্ব করেন জাপার ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও দলের চেয়ারম্যান আবু হোসেন বাবলা। এ সময় দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।