লোকমুখে শোনা যায়, আনুমানিক সাড়ে তিন শ বছর আগে হেঁটে হজ পালন করতে গিয়েছিলেন বর্তমান মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের করমদি গোশাই ডুবি গ্রামের দশরত আলী।
হজ থেকে গ্রামে ফিরে নামাজ আদায়ের জন্য নিজ অর্থায়নে ইট সুরকি দিয়ে একটি মসজিদ তৈরি করেছিলেন তিনি।
পরে কালক্রমে দেয়ালে গজিয়ে ওঠা বটগাছের শিকড়বাকড় গ্রাস করে নেয় পুরো মসজিদটিকে। এতে দেয়ালের আস্তরণ, ইট, সুরকি খসে পড়লেও সেই সময়ের কিছু কারুকাজ এখনো প্রদীপের মতো যেন জ্বলজ্বল করছে।
বর্তমানে নামাজের জন্য কেউ না গেলেও এই মসজিদ নিয়ে জেলাজুড়ে নানা মত প্রচলিত। কেউ কেউ মনে করে পরিত্যক্ত এই মসজিদ এখন জিনদের আস্তানা! তাদের মতে, এই মসজিদটি এখন জিনেরাই রক্ষণাবেক্ষণ করছে।
শারীরিক সুস্থতা কামনা করে এ মসজিদে অনেকে মান্নতও করেন। ছবি: নিউজবাংলামসজিদের পাশেই রয়েছে এর প্রতিষ্ঠাতা হাজি দশরত ও তার স্ত্রীর কবর। আছে দুটি বড় তেঁতুল গাছও। আর মসজিদের ওপরেই প্রায় কয়েক বিঘা জায়গাজুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে আছে বিশাল বটগাছটি।
গ্রামের অনেকেই বিশ্বাস করেন, এই বটগাছের ডাল কেটে কেউ বাড়িতে নিয়ে এলে তার ক্ষতি হবে। যদি কেউ ভুলক্রমে নিয়েও যায়, পরে তাকে তা ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি দিতে হয় শিন্নিও।
আবার অনেকেই মনের বাসনা, শারীরিক সুস্থতা কামনা করে মসজিদে মান্নত করেন। আবার কেউ কেউ আধ্যাত্মিক বিশ্বাসে গাছে লিখে রাখেন পছন্দের মানুষটির নামও।
অনেকেই দাবি করেন, এখানে মান্নত করে তারা সুফলও পেয়েছেন।
কেউ বলছেন, এখান থেকে সাহস করে বটগাছের ডাল কেটে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
পুরোনো ওই মসজিদটিকে আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে অনেকের মত। ছবি: নিউজবাংলাএই মসজিদে মান্নত করা জুয়েল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি খুব অসুস্থ হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। তখন আমার মা ও বোন আমার সুস্থতার জন্য দুটি ছাগল মান্নত করে। একটি এই মসজিদে, আরেকটি বড় মসজিদে। সে অনুযায়ী, গত সপ্তাহে একটি ছাগল জবাই করে লোকজনকে খাওয়ানো হয়েছে। তারপর থেকে এখন আমি অনেক সুস্থ!’
বটগাছের পাতা কেটে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন দাবি করা কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘কিছুদিন আগে বৃষ্টির মধ্যে এই বটগাছের পাতা কেটে বাড়ি নিয়ে ছাগলকে খেতে দিছিলাম। পাতা খাওয়ার পর আমার ১০টি ছাগল মইরি যায়। তার মধ্যে একটি বড় ছাগল ছিল, যার দাম পঁচিশ হাজার টাকার কম না।’
এদিকে বিশ্বাস অবিশ্বাসে ঘিরে থাকা সাড়ে তিন শ বছরের পুরোনো ওই মসজিদটিকে আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হক বিশ্বাস।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম বলেন, ‘যেহেতু এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। তাই এটি সংরক্ষণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগকে জানানো হবে।’