দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের চিকিৎসক দলের সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এর আগেও দেশবাসী ওনার (খালেদা জিয়া) জন্য দোয়া করেছে। আল্লাহর রহমতে অনেক সংকটকাল অতিক্রম করে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন কারারুদ্ধ অবস্থায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য দেশবাসীর কাছে উনি দোয়া চেয়েছেন।
‘দেশের মানুষের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন, যাদের মাধ্যমে এই অবস্থায় আসতে পেরেছেন। আপনারা সবাই ওনার জন্য দোয়া করবেন।’
এ চিকিৎসক বলেন, ‘ওনার যে চিকিৎসা প্রয়োজন সেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড বলেছে বিদেশে নেয়ার জন্য। অত্যন্ত দুর্ভাগা দেশ যে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশে চিকিৎসা হচ্ছে না। কয়েক দিন আগে কয়েকজন নেতানেত্রী পার্শ্ববর্তী দেশে, বিদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন। শুধু যেতে পারছেন না খালেদা জিয়া। আশা করব এই অবস্থা থেকে নিশ্চয়ই পরিত্রাণ ঘটবে।’
এর আগে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রাজধানী এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সাড়ে ৬টায় বাসায় পৌঁছান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আল মামুনসহ অনেকে।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বেশ কয়েক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, দাঁত, চোখের সমস্যাসহ শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।
দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়। করোনার কারণে ২০২০ বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এখন পর্যন্ত পাঁচবার খালেদা জিয়ার মুক্তির সময় বাড়ানো হয়েছে।
বাড়ি ফেরার এক বছর পর গত বছরের এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি নেত্রী। ৫১ দিন পর বাড়ি ফেরার পর একই বছরের ১২ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত আবার তিনি একই হাসপাতালে যান।
এরপর ১৩ নভেম্বর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮১ দিন হাসপাতালে থাকেন বিএনপিপ্রধান। সে সময় তার দলের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে নানা কর্মসূচি পালন করে। দাবি করা হয়, দেশের বাইরে না নিলে তাদের নেত্রীকে বাঁচানো যাবে না। কারণ তার যে রোগ, তার চিকিৎসা দেশে নেই।
খালেদা জিয়ার কী রোগ, সেটি জানানো হয়নি শুরুতে। পরে জানানো হয়, লিভার সিরোসিস হয়েছে তার। আর শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ একবার কোনো রকমে সামাল দেয়া গেছে। এর চিকিৎসা শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দু-একটি স্থানে আছে।
খালেদা জিয়ার বাড়ি ফেরার দিন তার চিকিৎসক ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী এক ব্রিফিংয়ে বলেন, হাসপাতালে বিপুলসংখ্যক করোনা রোগী আছে, তাই তারা বিএনপি নেত্রীকে সেখানে রাখতে চাইছেন না।
বাসায় ফেরার পর বেগম খালেদা জিয়ার দুটি ছবি এসেছে গণমাধ্যমে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তার হাতে একটি সনদ তুলে দিতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গিয়েছিলেন ফিরোজায়। সে সময় খালেদা জিয়া সোফায় বসেছিলেন। ফখরুল তার কাছে যান পিপিই পরে।
এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি বাসার বাইরে যান খালেদা জিয়া করোনার টিকার বুস্টার ডোজ নিতে। মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তিনি টিকা দিতে যান নিজের গাড়িতে করে। সেদিন দলের নেতাকর্মীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। হাসপাতালের কর্মীরা গাড়িতে বসা অবস্থায় তাকে টিকা দেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হলে কারাগারে যেতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়াকে।
পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার সাজা হয় সাত বছর।
সেই থেকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারেই থাকতে হয় তাকে। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।