বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাওরে বাড়ছে পানি, দুশ্চিন্তায় কৃষক

  •    
  • ৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৬:১৩

মৃগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দারুল ইসলাম বলেন, ‘সারাদিন হাওরেই ছিলাম। লাইমপাশার উত্তরের হাওর, বাবনদিঘা হাওর এবং বুড়িরলাইন হাওরে আজকে পানি বেড়েছে ৬-৭ ইঞ্চি। খুব আতংকে আছি। পানি যেভাবে বাড়ছে, বহু জমির ধান তলিয়ে যাবে।’

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার হাওরে পানি বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার যে পরিমাণ পানি বেড়েছিল বুধবার তার দ্বিগুণ বেড়েছে। পানিতে ইতোমধ্যে হাওরের কয়েকশ একর নিচু জমির ধান তলিয়ে গেছে।

কৃষকরা বলছেন, এভাবে পানি বাড়তে থাকলে আর একদিনের মধ্যে উঁচু হাওরগুলোতেও পানি ঢুকে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে এসব হাওরের আধাপাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, মূল হাওরগুলো এখনও সুরক্ষিত। হাওরে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ পানি প্রবেশ করেছে, মূল হাওরের জমিগুলো তার চেয়ে আরও এক মিটার উপরে আছে। ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি হলে অনেক জমির ফসল তলিয়ে যেতে পারে।

উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের তেরাইল্লা বাঁধে ছিলেন মৃগা গ্রামের কৃষক ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মারজান মিয়া। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গতকাল যেভাবে পানি বেড়েছে আজকেও যদি বাড়ে তবে এই হাওরের বহু ধানের জমি পানিতে তলিয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই হাওরে যাদের জমি আছে, তাদের সবার চোখেমুখে এখন হতাশার ছাপ। আর কদিন পরই কৃষকের ঘরে যে ফসল আসত, সে ফসল এখন তলিয়ে যাওয়ার পথে। এরই মধ্যে হাওরে বর্তমানে শ্রমিক সংকটও চলছে।’

‘যাদের জমির ধান পেকে গেছে তারা শ্রমিক পাচ্ছেন না। অনেকের আবার নিজেদের লোক আছে কিন্তু জমির ধান এখনো আধাপাকা। জমির ফসল নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছেন তারা,’ বলেন তিনি।

এ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লাইমপাশা গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে বামনদিঘা হাওর থেকে বাড়ি ফিরেছি। হাওরের বিভিন্ন বাঁধে কৃষকেরা নিজেদের ফসল রক্ষার্থে নিজ উদ্যোগে কাজ করছেন। যেদিক দিয়েই পানি ঢোকার সম্ভাবনা সেখানেই মাটি ফেলা হচ্ছে। তারপরও পানি আরেকটু বাড়লে আমাদের সারা বছরের স্বপ্নের ফসল তলিয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাওরের বেশিরভাগ কৃষকরাই সুদের উপর ঋণ নিয়ে অথবা এনজিও থেকে লোন তুলে আবাদ করে। আবার বৈশাখ শেষে নিজেদের খোরাকের ধান রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করে। এরপর সারাটা বছর খুব কষ্ট করে চলেন।’

মৃগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সারাদিন হাওরেই ছিলাম। লাইমপাশার উত্তরের হাওর, বাবনদিঘা হাওর এবং বুড়িরলাইন হাওরে গতকালকে পানি বেড়েছে ৬-৭ ইঞ্চি। খুব আতংকে আছি। পানি যেভাবে বাড়ছে, বহু জমির ধান তলিয়ে যাবে।’

ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে আফাইন্না হাওরের ৪০০ একর জমির ফসল একেবারে তলিয়ে গেছে। এদিকে চাচুয়ার হাওরের জমির পরিমাণ ৮০০ একর। যেকনো সময় এ হাওরের ধান পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। যারা চাচুয়ার বাঁধ ঠেকাতে সেখানে গিয়েছিল, তারা হাওরের আশা ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে এসেছে।’

ইটনা কৃষি কর্মকর্তা উজ্জল সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত দুইদিন পূর্বেও ২-৩ ইঞ্চি করে পানি বেড়েছে কিন্তুু গতকাল ৬-৭ ইঞ্চি বেড়েছে। পুরো উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৫০০-৬০০ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধনপুর ইউনিয়নের আফাইন্নার হাওরটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’

আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বরাতে তিনি জানান, ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সে অনুযায়ী, এ অঞ্চলের নদ-নদী সমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। তবে বিপৎদসীমা অতিক্রম করে আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা নেই।

কিশোরগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান মতি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল হাওরে এখনও পানি ঢুকেনি। বাঁধগুলোও ঠিক আছে। ইটনার জিওলের বাঁধের পাশে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ১ মিটার পানি বাড়লে মূল হাওরে পানি ঢুকবে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বারত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল সারারাত একটু একটু করে পানি বেড়েছে । আজকে হয়তো এটা স্ট্যাবল হয়ে যেতে পারে। তবে ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি হলে পানি বেড়ে যাবে। এতে হাওরের ফসলি জমি তলিয়ে যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর