কুমিল্লা লাকসাম উপজেলার বিজরা গ্রামের আবদুল মমিনের নার্সারিতে আছে গ্রিনহাউজ ঘর। নার্সারির চারদিকে শক্ত করে বেড়া দেয়া। সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে গাছের চারা।
আবদুল মমিনের দাবি, বাংলাদেশে তিনিই প্রথম গাছের চারা রপ্তানি শুরু করেন। তবে তার দেখাদেখি ২০২১ সাল থেকে তার ভাতিজারাও গাছের চারা রপ্তানি শুরু করেন।
তার নার্সারির চারাগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাহাজে করে চলে যায় কাতার ও আরব আমিরাতে। আর এই চারা রপ্তানি করে কোটি টাকা আয় হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আবদুল মমিন জানান, ১৯৮০ সালে তিনি কাতারে যান। সেখানে চাকরি করতেন তিনি। এক সময় তার বেতন কমিয়ে দেয় কোম্পানি, নিজের অবস্থা পরিবর্তনের আশায় নার্সারির ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
২০০৭ সালের দিকে থাইল্যান্ড, চীন, মালয়েশিয়া, হল্যান্ড, সিরিয়া, মিশর, ইতালিসহ অনেক দেশ ঘুরেন তিনি। এসব দেশ থেকে ফুল ও ফলের চারা আমদানি শুরু করেন।
কাতারে তার নার্সারি আছে। ওই নার্সারির নাম ‘আল নাইমি ল্যা-স্কেপিং নার্সারি’।
২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে চারা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন মমিন। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজের বাড়ি বিজরা এলাকায় এক একর জায়গায় নার্সারি করেন। এর নাম দেন ‘বিজরা এন্টারপ্রাইজ। বেশ কয়েক লটে গাছের চারা রপ্তানিও করেন।
আবদুল মমিন বলেন, ‘২০২০ সালের শুরুতে আমি প্রথম লটের গাছের চারা পাঠিয়েছি। ওই বছর ২৫ লাখ টাকার চারা পাঠাই। তখন চারাগুলো কাতার ও দুবাইতে রোপণ করা হয়েছিল। সফল হওয়ার পরে আরও পাঠাই। বছরে দুই থেকে তিনবার চারা পাঠানো সম্ভব। সবকিছু ঠিক থাকলে বছরে কোটি টাকার চারা রপ্তানি করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গাছ লাগানোর সময়কাল সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। ওই সময় চারার চাহিদা থাকে বেশ। আমার নার্সারিতে ৬ জন লোক কাজ করেন। তাদের প্রতিজনকে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হয়।’
চাচা আবদুল মমিনের থেকে অনুপ্রানিত হয়ে পাশের বরুড়া উপজেলার ঘোষপা এলাকায় হানিফ, সামছুল আলম, রবিউল আলম, খালেদুল ইসলাম মিলে প্রায় তিন একর জমিতে গ্রিন ওর্য়াল্ড নার্সারি করেন।
গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর থেকে তারা চারা রপ্তানি শুরু করেন। ওই বছর তারা প্রায় ১৪ লাখ টাকা আয় করেন।
খালেদুল ইসলাম জানান, চাচা আবদুল মমিনের লাইসেন্স ব্যবহার করে জুন মাসে সমুদ্র পথে কাতার গেছে তাদের নার্সারির সাড়ে ৪ হাজার গাছের চারা। মাস দুয়েক পরে দুবাইতে আরও ৪ হাজার ৪৪০ পিস বিভিন্ন জাতের আমের চারা রপ্তানি করা হয়। ওই চালানে ৪০ লাখ টাকার গাছের চারা বিক্রি করেন তারা।
খালেদুল ইসলাম জানান, নিজেদের ৩ একর জমিতেই ওই নার্সারি করেছেন। নার্সারিতে আছে ১০ জন কর্মচারী।
কী কী গাছের চারা রপ্তানি হয় এমন প্রশ্নে খালেদুল ইসলাম বলেন, ‘চায়না মাল্টা, পয়সা মাল্টা, আম্রপালি, খিরসা, বারি ৪, থাই পেয়ারা, থাই পেয়ারা ৩, ৫, ৮; দেশি আমের চারা, গোলাপজাম, থাই জাম, কাউ, ডেউয়া ও নারকেল।
মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলোতে ফলের চারার চাহিদা জানিয়ে ম্যানেজার খালেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ক্রেতাদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে চারা উৎপাদন করি।’