রংপুরে ঢাকাগামী বাসচালকদের ধর্মঘট চলছে। পূর্বঘোষণা ছাড়া মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হয়।
দিনশেষে বিকেলের দিকে এই ধর্মঘটের দায় নিচ্ছেন না শ্রমিক নেতারা। তারা ধর্মঘটের দায় চাপাচ্ছেন মালিকপক্ষের ওপর। আর মালিকপক্ষের ভাষ্য, শ্রমিকরাই ধর্মঘটে গেছেন নিজেদের স্বার্থে।
দিনভর সাধারণ শ্রমিকদের ধর্মঘটে দূরপাল্লার বাস ও কোচ চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।শ্রমিক নেতারা এখন ধর্মঘটের দায় না নিলেও সকালে অনেক চালক-হেলপার জানান, বেতন বৃদ্ধি, নিয়োগপত্র প্রদান, হয়রানি বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহার দাবিতে তারা ধর্মঘট করছেন।রংপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ বলেন, ‘এই ধর্মঘট শ্রমিকরা করছেন না। মালিকপক্ষের ইশারায় ধর্মঘট চলছে। রমজানে যাত্রীদের দুর্ভোগ আমরা চাই না। আমরা ধর্মঘট পালন করছি না। আমরা কোনো গাড়ি বন্ধ করিনি। আমরাও জানতে চাই কীভাবে এই গাড়ি বন্ধ হলো, কার ইশারায় ধর্মঘট চলছে।’
শ্রমিক নেতা মজিদ বলেন, ‘মালিকরা গাড়ি না দিলে শ্রমিকরা যাবে কেমনি, কেমন করি গাড়ি চালাবে। ম্যানেজরদেরকে তো ফোন দিয়ে বন্ধ করছে। অনেক মালিকের পক্ষেই গাড়ি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। মালিকরা গাড়ি বন্ধ রাখতে বললে শ্রমিকরা কার গাড়ি চালাবে?’ রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আফতাবুজ্জামান লিপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ধর্মঘটের সঙ্গে মালিক সমিতির কোনো সম্পর্ক নেই। গাড়িগুলো বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আওতায়। তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব। মালিক সমিতির কিছু নেই এখানে।’ শ্রমিকদের অভিযোগ, নামকরা দু-তিনটি কোম্পানি তাদের পরিবহনের চালকদের ১ হাজার ৯৫০ টাকা, সুপারভাইজাদের ৯০০ টাকা আর হেলপারকে ৮০০ টাকা বেতন দেয়। সেখানে অন্য পরিবহনের স্টাফদের এর অর্ধেক বেতন-ভাতাদি দেয়া হয়। গাড়ি বন্ধ থাকলে খোরাকিও দেয়া হয় না। দেশে সব জিনিসের দাম বাড়ছে, শুধু বাস শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। সকালে রংপুরের কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এনা আর আগমনী তাদের ড্রাইভার ও হেলপারদের অনেক বেতন দেয়। অন্য কোম্পানির গাড়ির চালকদের সেই বেতন দেয়া হচ্ছে না। আমরা বেতন বৃদ্ধির জন্য এই আন্দোলন করছি।’তিনি বলেন, ‘ঢাকায় যাওয়া-আসা মাত্র ৭০০ টাকা। এই টাকায় কী সংসার চলে? প্রতি বছর বলে বেতন বাড়াবে, নিয়োগপত্র দিবে, কিন্তু বেতনও বাড়ায় না, নিয়োগপত্রও দেয় না।’প্রবীর সাহা নামে আরেক চালক বলেন, ‘মূলত বেতন বৃদ্ধির জন্য আমরা ধর্মঘট ডেকেছি। রাস্তায় পুলিশ হয়রানি করে, মামলা দেয়। এসবের বিরুদ্ধেও আমাদের আন্দোলন। দাবি পূরণ না হলে আমরা ইউনিয়নকে জানাব। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।’নগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, চালক, শ্রমিক ও কাউন্টার মাস্টাররা অলস সময় পার করছেন। যাত্রীরা স্ট্যান্ডে এসে ফিরে যাচ্ছেন। ঢাকা যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।আব্দুল ওয়াহাব নামে এক যাত্রী বলেন, ‘মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বে কষ্ট করতে হচ্ছে আমাদের। এটা দেখার কি কেউ নেই। আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করব, দ্রুত গাড়িগুলো ছেড়ে দেন, আমাদের ঢাকা যাওয়া জরুরি।’
যাত্রী ইয়াকুব আলী বলেন, ‘আমাদের মতো অনেক যাত্রীর সামর্থ্য নেই বিমানে যাওয়ার। আর ট্রেনে তো টিকিট নেই। আমরা নিরুপায়। কাকে কী বলি, এর সমাধানই কে দেবে?’রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম) আবু মারুফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেতন-ভাতা নিয়ে শ্রমিকরা ধর্মঘট করছেন। আমরা বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি আজই গাড়ি চলবে।’