বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেয়ারের ক্রেতা ঘাটতির কারণ ২ শতাংশের সীমা?

  •    
  • ৫ এপ্রিল, ২০২২ ২০:৪৩

একটা নির্দিষ্ট দিনে যখন বায়াররা দেখেন যে একটা লো রেটে সেলার বসে রয়েছে। তখন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো পরের দিনের জন্য অপেক্ষা করে। যার কারণে একটা কিউমিলেটিভ নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ভলিউমে দেখা যাচ্ছে: ডিবিএ সভাপতি

পুঁজিবাজারে সূচকের বড় পতন ঠেকানোর ‘টোটকা’ এক দিনে কোনো একটি শেয়ারের দরপতনের সীমা ২ শতাংশ বেঁধে দেয়াকে লেনদেন কমার একটি কারণ হিসেবে দেখছেন ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও।

তিনি বলেছেন, মন্দা বাজারে শেয়ারদর ২ শতাংশ কমে যাওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মনে ধারণা জন্ম হচ্ছে দর আরও কমে যাবে। ফলে এই দামে ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে লোকসান দিয়েও শেয়ার থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলছে না।

আবার ২ শতাংশ কমে পতন কবে থামবে- এটা দেখার জন্য শেয়ারের ক্রেতা না আসায় চাহিদা তৈরি হচ্ছে না। এতে আবার সেই শেয়ারের দর বৃদ্ধির সুযোগও তৈরি হচ্ছে না- বলছেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা।

পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের মধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলার পর যে ধস নামে, তখন বড় পতন ঠেকাতে এক দিনে দরপতনের সীমা সর্বোচ্চ ২ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় বিএসইসি।

রাশিয়া-ইউক্রেন, শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি গ্লোবাল ইস্যুতে সব দেশের পুঁজিবাজারেই একটা প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব বিদ্যমান। কী হবে না হবে সেই হিসাব কষতে ব্যস্ত সবাই। যার কারণেও লেনদেন কম হচ্ছে: এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

এর পাশাপাশি বাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংক, স্টক ডিলারসহ বাজার মধ্যস্থতাকারীদের বৈঠকে বসে বিএসইসি। সব বৈঠকেই বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা আসে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, লেনদেন এখন প্রায় এক বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানে। আর যে হারে তা কমছে, তাতে আগামী দিনে কোন অবস্থানে পৌঁছে, তা নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে পুঁজিবাজারবিষয়ক নানা ফেসবুক পেজে।

ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে ওঠানামা থাকবেই। ১০০-১৫০ পয়েন্ট কমবে আবার বাড়বে, এটা কিন্তু কোনো বড় ব্যাপার নয়। এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে কনসার্ন হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যদি ভলিউম কমে তাহলে মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়।’

লেনদেন বাড়ানোর লক্ষ্যে নানা আলোচনা আর উদ্যোগের মধ্যে উল্টো কেন কমছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভলিউম কমার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশ দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা।’

এই ধারণা করার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ধরুন, কারও পোর্টফোলিওতে সাতটি আইটেম আছে। আজকে তিনি লাফার্জ কিনেছেন, অন্য একটি শেয়ার বিক্রি করার কথা।

বাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংক, স্টক ডিলারসহ বাজার মধ্যস্থতাকারীদের বৈঠকে বসে বিএসইসি। সব বৈঠকেই বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা আসে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, লেনদেন এখন প্রায় এক বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানে। আর যে হারে তা কমছে, তাতে আগামী দিনে কোন অবস্থানে পৌঁছে, তা নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে পুঁজিবাজারবিষয়ক নানা ফেসবুক পেজে।

‘ধরি তার কাছে প্রগতি ইন্স্যুরেন্স আছে। ভেবেছিলেন তিনি সেটা বিক্রি করে লাফার্জের টাকাটা সমন্বয় করবেন। কিন্তু ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার পরও দাম পড়ে গেছে অনেকটা। তখন তিনি কী করবেন?

‘ধরা যাক, তার কাছে বেক্সিমকোও ছিল। তিনি সেটা বিক্রি করতে চাননি। কিন্তু প্রগতির দর ২ শতাংশের বেশি পড়ে যাওয়ায় সেটি বিক্রি করতে না পেরে বেক্সিমকো বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ, উপায় নেই।

‘তার মানে যে শেয়ারগুলো সেল হওয়ার কথা নয়, সেগুলোও সেল হচ্ছে। এর কারণে একটা হচ্ছে ভলিউম কমছে এবং অযাচিত শেয়ারের সেল আসছে।’

ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও মনে করেন, ইউক্রেন হামলার পর ধস ঠেকাতে দরপতনের সীমা ২ শতাংশ করা যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু এটা এখন গলার কাঁটা হয়েছে

তিনি বলেন, ‘যখন ২ শতাংশ দর পড়ে যায়, তখন বায়াররা আর বাই দিতে চায় না। পরের দিন দেখতে চায়। ট্রেড ভলিউম ফল করার এটি একটি অন্যতম কারণ হয়ে গেছে।’

ডিবিএ সভাপতি বলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট দিনে যখন বায়াররা দেখেন যে একটা লো রেটে সেলার বসে রয়েছে। তখন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো পরের দিনের জন্য অপেক্ষা করে। যার কারণে একটা কিউমিলেটিভ নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ভলিউমে দেখা যাচ্ছে।’

তাহলে ২ শতাংশের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া কি ঠিক হয়নি?- জানতে চাইলে রোজারিও বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের আতঙ্কে মার্কেট ফল ঠেকাতে ওই সময়ে বিএসইসির সিদ্ধান্ত হয়তো ঠিক ছিল। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই বাজারকে এভাবে ঠেকা দেয়া কোনো সুস্থ পদ্ধতি না। বাজারকে আপন গতিতে চলতে দিতে হবে।’

২ শতাংশের সীমা না থাকলেও পারত। তবে থাকলেও এক রকম লাভ আছে। হঠাৎ করে দাম কমে আতঙ্ক তৈরি হতে পারত। আবার এর খারাপ দিকও আছে: শাকিল রিজভী

বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে যেসব ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে রোজায় এক কোটি করে আড়াই শ কোটি আর মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তিন শ কোটি বিনিয়োগ করবে অঙ্গীকার দিয়ে এসেছে- তার কী হবে?

এমন প্রশ্নে রোজারিও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। শেয়ারদর কমলে ভবিষ্যতে লাভের সম্ভাবনায় তো সবাই বিনিয়োগ করবেই।’

তিনি মনে করেন, শেয়ারদর কমা একটি সুযোগও। বলেন, ‘দাম কমলে কিনবে, বাড়লে বেচবে- এটাই তো বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। এটা যদি না থাকত, তাহলে কেউ আসত না। যদি খালি দাম বেড়েই যায়, তাহলেও কেউ আসবে না। আবার যদি দাম কমেই যায়, তাহলে কেউ আসবে না।’

তাহলে ২ শতাংশের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া কি ঠিক হয়নি?- জানতে চাইলে রোজারিও বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের আতঙ্কে মার্কেট ফল ঠেকাতে ওই সময়ে বিএসইসির সিদ্ধান্ত হয়তো ঠিক ছিল। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই বাজারকে এভাবে ঠেকা দেয়া কোনো সুস্থ পদ্ধতি না। বাজারকে আপন গতিতে চলতে দিতে হবে।’

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২ শতাংশের সীমা না থাকলেও পারত। তবে থাকলেও এক রকম লাভ আছে। হঠাৎ করে দাম কমে আতঙ্ক তৈরি হতে পারত। আবার এর খারাপ দিকও আছে।’

তিনি বলেন, ‘এক দিনে ১০ শতাংশ করে শেয়ারদর পড়ে গেলে ১০০ থেকে দেড় শ পয়েন্ট সূচক পড়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা আরও ভয় পেয়ে যেত। আমাদের মার্কেটটা ম্যাচিউরড না। এটাও তো একটা বিষয়।’

লেনদেন কমে যাওয়ার পেছনে তিনি আরও একটি বিষয় তুলে এনেছেন। সেটি হলো ব্রোকারেজ হাউস থেকে ক্যাশ টাকা তুলে নেয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া।

শেয়ারদর কমা একটি সুযোগও। দাম কমলে কিনবে, বাড়লে বেচবে- এটাই তো বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। এটা যদি না থাকত, তাহলে কেউ আসত না। যদি খালি দাম বেড়েই যায়, তাহলেও কেউ আসবে না। আবার যদি দাম কমেই যায়, তাহলে কেউ আসবে না।’

নিউজবাংলাকে তিনি বলেছেন, ‘অনেক সময় দেখা যেত জরুরি প্রয়োজনে, বিশেষ করে সপ্তাহের শেষ দিন কারও ৫০ হাজার বা ১ লাখ টাকা ক্যাশে নিয়ে যেত। বিভিন্ন হাউসে এই সুযোগে নানা অনিয়ম হওয়ার কারণে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন নিয়ম করা হয়েছে অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক লাগবে। কিন্তু সেটার জন্য তো এক দিন বাড়তি সময় লাগে। আর বৃহস্পতিবার নিলে তো সেটি ভাঙানো যায় না। আমার মনে হয় এটাও লেনদেন কমার একটি কারণ।’

শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণে রেখেছেন বিনিয়োগকারীরা

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক মন্দার পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণে রেখেছেন বিনিয়োগকারীরা।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন, শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি গ্লোবাল ইস্যুতে সব দেশের পুঁজিবাজারেই একটা প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব বিদ্যমান। কী হবে না হবে সেই হিসাব কষতে ব্যস্ত সবাই। যার কারণে লেনদেন কম হচ্ছে।’

মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘মার্কেট ভালো করার জন্য, ট্রেড বাড়ানোর জন্য উচিত হবে ভালো কোম্পানিগুলোকে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা। শেয়ার ছাড়াও অন্য আইটেম নিয়ে আসা।’

সূচকের অবস্থান সাত হাজারের কাছাকাছি থাকলে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীলই বলতে চান তিনি। বলেছেন, ‘দু-তিন দিন হয়তো কমেছে। সেটা উঠে যাবে।’

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সন্দেহ অবিশ্বাস

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করছে না। মাসুম জামান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ব্রোকাররা যে বিনিয়োগ করছে, লেনদেনের পরিমাণ দেখে কিন্তু তা মনে হচ্ছে না। তারা বিনিয়োগ করছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।’

বাজারের পতনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আগেই বেশি দামে শেয়ার কিনেছেন। এদিকে শেয়ারের দাম কমতে থাকায় তাদের পুঁজি আটকে গেছে। অন্যদিকে হাতে পুঁজি না থাকায় আর শেয়ার কিনতে পারছেন না।’

আহসান হাবীব নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘বাজার খারাপের স্বাভাবিক কোনো কারণ নেই, কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। একটি চক্র বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে এনে বাজার নিয়ে খেলছে।’

এ বিভাগের আরো খবর