নির্ধারিত সময়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আয়োজন করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৬ মে সিটিতে নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ২০ জুনের আগে সেখানে নির্বাচন হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছে ইসি। তাই মেয়াদ শেষ হলেই সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেবে সরকার।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তো প্রশাসক বসবে। পুরো পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। পরিষদ ম্যাচিউর হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে সবাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যার ফলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাদের পছন্দ মতন প্রশাসক নিয়োগ দেবে।’
সরকার পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়ার শেষের পর প্রশাসক নিয়োগ দিতে নতুন একটি আইন চলতি সপ্তাহে সংসদে আইন পাস হয়েছে। আইনে মেয়াদ শেষের পর এসব প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখেছে সরকার।
মঙ্গলবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে প্রথম সভা করেছে সদ্য দায়িত্ব নেয়া নির্বাচন কমিশন। সভা শেষে ইসি সচিব হুমায়ূন কবীর খোন্দকার জানিয়েছেন, আগামী ২০ জুনের মধ্যে কুমিল্লা সিটিতে ভোট করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
নির্বাচন আয়োজন করতে এরইমধ্যে স্থানীয় সরকারকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির চিঠির জবাব দিতে দেরি হয়েছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারের এই সচিব বলেন, ‘আমরা গত নভেম্বরে চিঠি দিয়েছি। কুমিল্লা সিটিতে নির্বাচন করা যেতে পারে মর্মে। পরে তারা (ইসি) আরেকটা চিঠি ইস্যু করছে এখানে কোনো মামলা মোকাদ্দমা আছে কি না। মামলা মোকাদ্দমা আছে কি না এগুলো তো আমাদের তল্লাশি করে দেখতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট সবজায়গায় তল্লাশি করতে আমাদের সময় লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো প্রথমেই বলে দিয়েছি এখানে মামলা মোকদ্দমা নেই এটায় নির্বাচন করা যেতে পারে। তবে তারা নারায়ণগঞ্জ করল, কুমিল্লাটা করল না, না করে তারা দেরি করল। আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিল এখানে মামলা আছে কি না? আমরা বলছি মামলা নেই। আবার তিনমাস পরে এসে জানতে চাচ্ছে মামলা আছে কি না। স্বাভাবিকভাবে এই কয়দিনের মধ্যে মামলা হয়েছে কি না তা তো জানা নেই।’
সচিব বলেন, ‘অথচ আমরা ঠিক সময়ে কিন্তু তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি যে নির্বাচন করতে কোনো অসুবিধা নাই।’
আইনের ব্যত্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রমজান মাস, সামনে ঈদ বিবেচনা করে হয়ত তারা সময় মত করতে পারছে না।’
কুমিল্লা সিটিতে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় একই বছরের ১৭ মে। আইন অনুযায়ী প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর হয় নির্বাচিত করপোরেশনের মেয়াদ।
সে অনুযায়ী এই সিটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ১৬ মে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট নিতে হয়। সেদিক থেকে গত ১৬ নভেম্বর এই সিটি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে।
ইসি সচিবের দাবি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন কমিশনের চিঠির জবাব যথা সময়ে না দেয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না।
দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। ওই বছরই প্রথম নির্বাচন হয়। এরপর ২০১৭ সালে এসে এই সিটির পাশের কয়েকটি ইউপিকে অন্তর্ভুক্ত করে আয়তন বাড়ানো হয় প্রায় তিনগুণ। এতে দেখা দেয় সীমানা জটিলতা। বর্তমানে এই সিটিতে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে।
এই সিটি করপোরেশন গঠনের পর থেকে মেয়র পদে রয়েছেন মনিরুল হক সাক্কু। গত নির্বাচনে এই সিটিতে ১০৩টি কেন্দ্রে ছিল আর ভোটার ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন।