প্রথমে বলল ব্যাংক, এরপর সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি। এরপর মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলাররা। পাশাপাশি অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঘোষণা- পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের মধ্যে বাজারে তারল্য বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কোনো পদক্ষেপই কাজে লাগছে না।
সবশেষ ঘোষণা ছিল, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো রোজায় তিন শ কোটি টাকা আর আড়াইশ স্টক ডিলার এক কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করবে। কিন্তু রোজার তিন কর্ম দিবসেই লেনদেন কমল ক্রমাগত।
রোজার আগে শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার হাতবদল হয়েছিল এক হাজার এক শ কোটি টাকার বেশি শেয়ার। রোজার প্রথম কর্মদিবস রোববার নাম নেমে আসে আট শ কোটির ঘরে। পরের দিন তা নামে ছয় শ কোটির ঘরে।
মঙ্গলবার আরও কমে তা নেমেছে ৫৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ১২ হাজার টাকা। গত বছরের ১৫ এপ্রিলের পর লেনদেন এত নিচে আর নামেনি। প্রায় এক বছর আগের সেদিন হাতবদল হয়েছিল ৫৫৬ কোটি ৪২ লাখ ১২ হাজার টাকা।
আগের দিনের মতোই ঢালাওভারে কমেছে শেয়ারদর। সব মিলিয়ে কমেছে ২৮৬টি কোম্পানির দর, বেড়েছে ৫১টির দর। ৪৪টি কোম্পানি দর ধরে রাখতে পেরেছে।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের চিত্র
লেনদেন বাড়ানোর যত উদ্যোগ ব্যর্থ
গত সেপ্টেস্বর থেকে টানা সংশোধনের মধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলার পর বাজারে যে ধস নামে, তাতে দরপতন ঠেকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় বিএসইসি।
এক দিনে শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করার পাশাপাশি বাজারে তারল্য বাড়াতে নানা চেষ্টা করে বিএসইসি।
গত ৯ মার্চ ৩৩টি ব্যাংকের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের পর জানানো হয়, যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশের নিচে, সেগুলো দ্রুত ২ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াবে। যেসব কোম্পানি বিশেষ তহবিলে এখনও ২০০ কোটি টাকা জমা দেয়নি, সেগুলো দ্রুত জমা দেবে, আর যেসব ব্যাংক টাকা জমা দিয়েও বিনিয়োগে যায়নি, তারা দ্রুত বিনিয়োগে যাবে।
পরের দিন মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে জানানো হয়, মৌলভিত্তির অনেক কোম্পানির শেয়ারদর অনেকটাই কমে এসেছে। এই মুহূর্তে সেগুলোতে বিনিয়োগ লাভজনক হতে পারে। বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা আসে এই বৈঠক শেষেও।২৩ মার্চ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে চিঠি দেয় বিএসইসি। এতে বলা হয়, অনেক ব্যাংক সেই বিনিয়োগসীমা ও ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের চেয়ে কম বিনিয়োগ করেছে। এমনকি অনেকেই এখনও সে বিশেষ তহবিল গঠনই করেনি।
এমন অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগসীমা অনুযায়ী ও বিশেষ তহবিল থেকে বিনিয়োগের জন্য চিঠিটি পাঠানো হয়। যারা বিশেষ তহবিল গঠন করেনি তাদের সেটি গঠন করতেও বলা হয় তাতে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে বিএসইসির ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে গত ৩১ মার্চ বাজার ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে হয় আলোচনা
গত ২৯ মার্চ আরও একটি পদক্ষেপ নেয় বিএসইসি। ২৬টি অতালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) জন্য ফাইল দাখিল ও তাদের ইক্যুইটির ২০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে পদক্ষেপ নিতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ-আইডিআরএকে চিঠি দেয় সংস্থাটি।
সবশেষ গত ৩১ মার্চ বাজার মধ্যস্ততাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএসইসি। বৈঠক শেষে জানানো হয়, সু প্রতিটি ডিলার এই এক মাসে কমপক্ষে ১ কোটি করে ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। পাশাপাশি পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকেও বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। মার্চেন্ট ব্যাংক বিনিয়োগ করবে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা। বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।
ফলে এই মাসে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা নিশ্চিত বিনিয়োগের আশ্বাস আসে।
পরের দিন বৃহস্পতিবার লেনদেন ছাড়ায় এক হাজার ১৬৯ কোটি টাকা, যা ছিল আগের দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু এর পরের তিন দিনে তা সেখান থেকে অর্ধেকে নেমে এলো।
১৪ বছরের সেরা লভ্যাংশেও দরপতন
মঙ্গলবার লেনদেনের শুরু থেকেই বেশিরভাগ কোম্পানি দর হারানোয় সূচক পড়ে যায়। আগের দিন বড় পতনের পর এই অবস্থায় আরও ক্ষতির আশঙ্কা করতে থাকে বিনিয়োগকারীরা।
এদিনও বিপুল সংখ্যক কোম্পানির লেনদেন হয়েছে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমায়। তবে এই দরে শেয়ারের ক্রেতা ছিল না অনেকগুলোরই।
দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ না থাকলে কী প্রভাব পড়তে পারত, সেটি বোঝা যায় প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দরের চিত্রে। শেয়ার দরে কোনো মূল্যসীমা না থাকার দিন দরপতন হয়েছে ২.৬০ শতাংশ।
অথচ কোম্পানিটি এবার ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যেটি ২০০৭ সালের পর সর্বোচ্চ। ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ এবং কোম্পানির আয় অনেকটাই বেড়ে যাওয়ার পরও ই দরপতন হলো।
এর আগে সাড়ে ২২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার পরেও দরপতন হয়েছিল প্রিমিয়ার ব্যাংকের।
গত রোববার আর্থিক খাত হঠাৎ চাঙা হয়ে উঠলেও পরের দুই দিন দর হারায় এই খাতের কোম্পানি। এদির ২২টি কোম্পানির মধ্যে দর হারায় ১৯টি, বাড়ে একটি। আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা করা ব্যাংক খাতেও ৫টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ১৬টির দর।
গত রোববার হঠাৎ চাঙা হয়ে যাওয়ার পর বিমায় যে ঢালাও দরপতন শুরু হয়েছে, সেটি থামছেই না।
প্রধান অন্য খাতগুলোর মধ্যে প্রকৌশল, বস্ত্র, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ওষুধ ও রসায়ন, বিবিধসহ এমন কোথাও বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি ছিল না।
দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমায় কেবল নতুন কোম্পানি
তালিকাভুক্ত হওয়ার টানা চতুর্থ দিন দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন হলো জেএমআই হসপিটালের। ২০ টাকা থেকে শেয়ারদর বেড়ে হয়েছে ২৯ টাকা ২০ পয়সা।
আগে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪.১৭ শতাংশ বেড়েছে লোকসানি জিলবাংলা সুগারের।
এছাড়া তিন শতাংশের বেশি দুটি, পাঁচটির দর দুই শতাংশের বেশি বেড়েছে। সবচেয়ে দর বৃদ্ধি পাওয়ার শীর্ষ তালিকার দশম স্থানে থাকা মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দর বেড়েছে ১.৬১ শতাংশ।
এছাড়া ২৩টি কোম্পানির দর এক শতাংশের বেশি এবং বাকি ১৯টি কোম্পানির দর বেড়েছে নামমাত্র।