ফরিদপুর পৌরসভায় কিছুদিনের মধ্যে সপ্তাহব্যাপী কুকুর নিধন কার্যক্রম শুরুর কথা মাইকিং করা হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা পৌরবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই কার্যক্রম চালাবে।
যদিও বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ব্যক্তি মালিকানাবিহীন প্রাণী হত্যা অপরাধ।
কয়েক দিন ধরে পৌরসভার পক্ষ থেকে করা মাইকিংয়ে বলা হচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যে শহরে কুকুর নিধন শুরু হবে। সবাই যার যার পালিত কুকুর যেন ঘরে আটকে রাখে।
পৌরসভার সচিব তানজিলুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শহরে কুকুরের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। মাঝে মাঝে কুকুরের কামড়ে আহত অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মোড়ে মোড়ে অসংখ্য কুকুর। কুকুরের আতঙ্কে শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা চলাফেরা করতে পারে না।
‘উচ্চ আদালত কুকুর নিধন নিষিদ্ধ করেছে। তবে এর পরিবর্তে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে কুকুরের প্রজনন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। তা তারা করছে না। ফলে কুকুরের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে ও মানুষ আক্রমণের শিকার হচ্ছে।’
পৌরসভা থেকে দাবি করা হচ্ছে, কুকুর নিধনের বিষয়ে পৌরসভার নাগরিক সমন্বয় সভা ও প্রশাসনিক সভায় সবার মতামত নিয়েই এই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
প্যানেল মেয়র মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘পৌরসভার অর্থায়নে ও পরিচালনায় আগামী রোববার থেকে এক সপ্তাহ বিভিন্ন এলাকায় কুকুর নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পৌরবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই কুকুর মারা হবে। তবে কারো পালিত কুকুর মারা হবে না। পালা কুকুরের গলায় বেল্ট বা গায়ে চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে। শুধু পাগলা ও ঝুঁকিপূর্ণ কুকুর মারা হবে।’
প্রাণিকল্যাণ আইন-২০১৯ এর ৭-এর-২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি মালিকবিহীন কোনো প্রাণী হত্যা করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে। এ ছাড়া ২০১৪ সালে একটি সংগঠনের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কুকুর নিধনে আদালতেরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্যানেল মেয়র বলেন, ‘আমি বিষয়টা জানি। তবে মানুষকে নিরাপদে রাখতে কিছু কিছু এলাকায় কুকুর মারা হবে।’
কুকুর নিধনের মাইকিংয়ে অনেকেই এর নিন্দা জানিয়েছেন।
পিপল ফর এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার (পিএডব্লিউ) ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড পেজে লেখেন, ‘ফরিদপুরের স্থানীয়রা জানালেন, সেখানে যেকোনো সময় গণহারে কুকুর নিধন করা হবে- এই বিষয়ে মাইকিং করেছে এলাকায়। প্যানেল মেয়র, সিইও এবং শেষ পর্যন্ত মেয়রের পারসোনাল নম্বর জোগাড় করে ফোন করা হলো। কেউ ফোন ধরছেন না। মেয়রকে মেসেজ পাঠিয়ে রেখেছি।
‘ফরিদপুরের প্রাণিপ্রেমীরা সচেতন থাকবেন। এ রকম কিছু ঘটতে দেখলে বাধা দেবেন। লাইভ করবেন। এটা রাষ্ট্রের আইনবিরোধী এবং সরকারের জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচিকে ব্যাহত করবে।’
এ বিষয়ে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘কুকুর নিধন সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। এভাবে নির্বিচারে কুকুর হত্যা যেন না করে আমি সে জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি।’
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা বলেন, ‘এই পৃথিবী শুধু মানুষের নয়, সব জীবজন্তু, সব প্রাণীর। মানুষের যেমন অধিকার আছে, তেমনি প্রত্যেক প্রাণীর অধিকার আছে বেঁচে থাকা আর নিরাপত্তার। তাই বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের নামে জীব হত্যা কোনোভাবেই কাম্য কিংবা সমর্থনযোগ্য নয়।
‘হাইকোর্টের রায় মেনে পুরুষ কুকুরগুলোকে বড়জোর বন্ধ্যা করা যেতে পারে। তবে প্রাণী হত্যা কখনোই, কোনোভাবেই কাম্য নয়।’