পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে কোম্পানি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো দাবি করছে, তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এর মধ্যেও লেনদেন কমে যাওয়া বা শেয়ারের ঢালাও দরপতনের কারণ কী, সে বিষয়ে অবশ্য সুষ্পষ্ট ধারণা করতে পারছেন না কোম্পানিগুলোর সমিতি মার্চেন্ট ব্যাংকস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান।
বাজারে মন্দাভাবের মধ্যে গত বুধবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে বসে মাজার মধ্যস্থতাকারীরা। বৈঠক শেষে ঘোষণা আসে রোজায় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তিন শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। আর সবগুলো প্রতিটি ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।
এই ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে রোজায় সাড়ে পাঁচ শ থেকে ছয় শ কোটি টাকা বিনিয়োগ হওয়ার কথা।
তবে এই মাসের দুই দিনে লেনদেন কমল প্রায় পাঁচ শ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম কর্মদিবস রোববার লেনদেন কমে আগের দিনের চেয়ে ২৮০ কোটি ৩১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। সোমবার সেখান থেকে কমে আরও ২১৫ কোটি ৯৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।
লেনদেন কেবল কমছে এমন নয়, দর পতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ কমেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। বিনিয়োগকারীরা ভাবছেন, শেয়ারদর আরও কমবে, এই দরে কেন তারা কিনবে।
মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজার পড়ছে কী কারণে আমার কাছে ব্যাখ্যা নেই। রিটেইল ইনভেস্টররা নাকি অন্য কেউ শেয়ার বিক্রি করছেন জানি না।’
ব্রোকারদের ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগ করছি। যাদের প্রয়োজন মনে হচ্ছে তারা বিক্রি করছে, তারা কারা সেটা আমার পক্ষে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।’
সর্বোচ্চ দরপতনেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিএসইসি নির্ধারিত দর পতনের নতুন সার্কিটের কারণে সর্বোচ্চ সীমায় দরপতন বলা হচ্ছে। আসলে সেই দরে পোষালে কিনছে না হলে কিনছে না।’
একটি আয়োজনে কথা বলছেন মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান। ফাইল ছবি
বাজারের এই পতন স্বাভাবিক হিসেবে উল্লেখ করে ছায়েদুর এও বলেন, ‘কিছুদিন পরে আবার বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে, লেনদেনও বাড়বে আশা করা যায়।’
পুঁজিবাজারে টানা এক দশকের হতাশা শেষে ২০২০ সালের মে মাস থেকে চাঙাভাব দেখা দেয়। বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখি থাকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত।
তিন মাসের মন্দাভাবের পর এপ্রিল থেকে আবার চাঙাভাবে ছিল পুঁজিবাজার। চলে মে পর্যন্ত। এরপর এক মাস একটি বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়ার পর জুলাইয়ের শুরু থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সূচক, লেনদেন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ১১ বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে গিয়ে ২০১০ সালের মহাধসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠা যাবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
তবে গত অক্টোবর থেকে বাজারে শুরু হয় দর সংশোধন, যা বছর শেষ পর্যন্ত বজায় থাকে। চলতি বছরের শুরুতে বাজারে আবার চাঙাভাব ফেরার ইঙ্গিত দিয়েও স্থায়ী হয়নি। এর মধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। বাজারে নামে ধস।
এই পর্যায়ে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ ছাড়াও বিনিয়োগ বাড়াতে নানা চেষ্টা করতে থাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
এই কয় দিনে ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপক, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলাররা সবাই বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। তবে লেনদেন বাড়ার পর উল্টো নেমেছে তলানিতে।