বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাওরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, কাঁচা ধান কাটার হিড়িক

  •    
  • ৪ এপ্রিল, ২০২২ ১৩:৪৯

খালিয়াজুরীর পুরানহাটি গ্রামের কৃষক সুজন মিয়া বলেন, ‘এই জমিগুলো পাকতে আরও ১০-১৫ দিন দরকার ছিল। এখন কাটলেও বেশিরভাগ চিটা হয়ে যাবে। কিন্তু নিরূপায়ে সবাই খোড়াকির ধান (খাবারের ধান) ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন।’

উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলে ধনু নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। তবে রোববার বেলা ১২টা থেকে সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোনো জমির ফসল প্লাবিত হয়নি।

নদীর পানি বৃদ্ধি দেখে নিম্নাঞ্চলের হাওরগুলোতে কাঁচা ধান কাটার হিড়িক পড়ে গেছে।

নেত্রকোণার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত ও খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেছেন, ‘অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল। এখনও বিপদমুক্ত আছি।’

খালিয়াজুরী পয়েন্টে ধনু নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে উল্লেখ করে পাউবোর এ কর্মকর্তা বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় প্রদেশের চেরাপুঞ্জিতে ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে সুরমা ও ধনু নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পরিমাপ করে দেখা গেছে, ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বিকেলের পর থেকে নদীর পানি কিছুটা কমতে পারে বলেও জানান তিনি।

খালিয়াজুরীর কৃষি কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের হিসেবে এখন পর্যন্ত প্লাবিত জমির পরিমাণ ৩৭০ একর। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোনো জমি প্লাবিত হয়নি।’

তলিয়ে যাওয়া জমিগুলো কীর্তনখোলা, লক্ষ্মীপুর, চুনাই, বাইদ্যারচর, কাটকাইলের কান্দা, টাকটার, মনিজান, লেবরিয়া, হেমনগর, গঙ্গাবদর, নয়াখাল, বাগানী, বৈলং ও ডাকাতখালী হাওরের নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মদন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, ওই উপজেলার তলার হাওরের নিম্নাঞ্চলের ২৫ একর বোরো জমি পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এলাকার কৃষকদের দাবি, দুই উপজেলা মিলে প্লাবিত জমির পরিমাণ অন্তত এক হাজার একরের ওপরে।

নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে হাওরাঞ্চলের বোরো চাষিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কাঁচা ধান কাটার হিড়িক পড়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের হাওরগুলোতে। সরজমিনে দেখা গেছে, অনেকে পানিতে ডুবে যাওয়া কাঁচা ধান কেটে কিছু পরিমাণ হলেও ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন।

খালিয়াজুরীর পুরানহাটি গ্রামের কৃষক সুজন মিয়া বলেন, ‘এই জমিগুলো পাকতে আরও ১০-১৫ দিন দরকার ছিল। এখন কাটলেও বেশিরভাগ চিটা হয়ে যাবে। কিন্তু নিরূপায়ে সবাই খোড়াকির ধান (খাবারের ধান) ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন।’ লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পানি এখন কিছুটা থমকে আছে। এ অবস্থায় থাকলে অনেকের ফসল রক্ষা পাবে। আর যদি আরও দুই-তিনদিন পানি বাড়ে তাহলে সমস্ত ফসল তলিয়ে যাবে। ২০১৭ সালের অবস্থা হয়ে যাবে।’

২০১৭ সালে একই সময়ে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে সৃষ্ট আগাম বন্যায় খালয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, মদন ও কলমাকান্দা উপজেলার হাওড়ের শতভাগ ফসল তলিয়ে গিয়েছিল।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, ‘নদীর পানি বৃদ্ধি ঠেকানোর কোনো উপায় আমাদের নেই। আমাদের শেষ ভরসা হচ্ছে ফসল রক্ষা বাঁধ। খালিয়াজুরী ও মদনসহ জেলার পাঁচ উপজেলার ৩শ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধের কোনো অংশ এখনও ভাঙেনি। আমরা বাঁশ এবং জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধগুলো আরও শক্ত বা মজবুত করার চেষ্টা করছি। বাঁধ রক্ষায় কৃষকদের নিয়ে কমিটিও গঠন করেছি।’

নেত্রকোণার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফ এম মোবারক আলী বলেন, ‘হাওরের কিছু এলাকায় আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে কাটা-মাড়াই শুরু হবে আরও ১০-১৫ দিন পর। এরই মধ্যে পাহাড়ি ঢল আসতে শুরু করায় আমরা কিছুটা আতঙ্কিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হাওরের কৃষকদের সবসময় আগাম জাতের ধান চাষ করতে বলি। কিন্তু অধিক ফলনের আশায় তারা আগাম জাতের বদলে ব্রি-২৮ জাতের চাষ বেশি করে। এগুলো একটু দেরিতে পাকে। এ কারণে ঝুঁকিও বেশি থাকে।’

এ বিভাগের আরো খবর