ফরিদপুরের সালথায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কয়েকটি দোকান-বসতঘর ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে।
উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের মাদ্রাসা মোর এলাকায় রোববার রাত ১০টার দিকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ পরে কানাইড়, চালতা তলা ব্রিজ ও ঝুনাখালী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। রাত ২টার দিকে টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান সংঘর্ষের এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
তবে ওই এলাকায় এখনও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। যেকোনো সময় ফের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, গেল ইউপি নির্বাচনের পর থেকে গট্টি ইউনিয়নে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এর জেরে ইউনিয়নের মাদ্রাসা গট্টি, বালিয়া গট্টি ও কানাইড় গ্রামে কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ইউনিয়নের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি কানাইড় গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য কুদ্দুছ মাতুব্বরের সমর্থক রেজাউল মাতুব্বর প্রতিপক্ষ বর্তমান ইউপি সদস্য পারভেজ মাতুব্বরের দলে যোগ দেন। দল থেকে চলে যাওয়া রেজাউলের কাছে কুদ্দুছ মাতুব্বরের দেশীয় অস্ত্র ৩টি ঢাল ছিল। ওই ঢাল ফেরত চান কুদ্দুছ, কিন্তু ঢাল ফেরত দেননি রেজাউল।
এলাকাবাসী আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। এরই মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় কুদ্দুছ মাতুব্বরের দলের নুরু মাতুব্বর ও তার সমর্থকরা মাদ্রাসা গট্টি মোর থেকে রেজাউলের ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক আটকে রাখেন। তারা রেজাউলকে ঢাল ফেরত দিয়ে ইজিবাইক নিয়ে যেতে বলেন। পরে পুলিশ গিয়ে ইজিবাইক রেজাউলকে ফেরত দেয়।
তারপরও কানাইড় ও মাদ্রাসা গট্টির উভয় পক্ষের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ১০টা থেকে শুরু করে রাত ২টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এ সংঘর্ষ।
সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের অন্তত ৭-৮টি বসতঘরসহ একটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কুদ্দুছ মাতুব্বর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি এলাকাতেই ছিলাম না। শুনেছি দুই মাস আগে রেজাউল আমার দল থেকে পারভেজের দলে যোগ দেয়। সে সময় তার কাছে আমার দলের কিছু সরঞ্জাম ছিল। তা তাকে বারবার ফেরত দিতে বললেও সে দেয় নাই।
‘শুনেছি গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় নুরু মাতুব্বর ওর অটোরিকশা আটক করে। পরে রেজাউল পুলিশে খবর দিলে আমি রেজাউলের অটো ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করে মীমাংসা করে দেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর রাতে পারভেজ ও রেজাউল তার সমর্থকদের নিয়ে আমার সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায়। তখন আমার সমর্থকরাও পাল্টা হামলা করে।’
জানতে চাইলে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পারভেজ মাতুব্বর বলেন, ‘আমি এ বছর নতুন ইউপি সদস্য নির্বাচিত হইছি। আগের সদস্য ছিল কুদ্দুছ মাতুব্বর। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তারা আমার সঙ্গে নানাভাবে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে।
‘আমার সমর্থকদের নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তার দলে নেয়ার চেষ্টা করছে। রেজাউলকে তারা কয়েকবার হুমকিও দিছে। এ বিষয়ে থানায় জিডিও করা আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত রাতে নুরু মাতুব্বর চালতা বাজারে রেজাউলের অটোরিকশা আটকে রাখে। সে আমাকে যখন জানায়, তখন আমি ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল হাসপাতালে আমার ভাতিজাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।
‘এজন্য থানায় খবর দিয়ে পুলিশ পাঠিয়ে তার অটো উদ্ধার করা হয়। অটো নিয়ে ফিরে আসার সময় রেজাউলের উপর নুরু মাতুব্বর হামলা চালায়। পরে রাতে তারা বাড়িতে হামলা চালালে সংঘর্ষ হয়।’
এ বিষয়ে ওসি মো. আশিকুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ কয়েক দফা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেলসহ সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’