ব্যস্ত সড়কের ধারে কিংবা গলির মোড়ে ঝালমুড়ির দোকানে ভোজনরসিকদের জটলা লেগেই থাকে। আবহাওয়া প্রতিকূল না হলে অস্থায়ী দোকানগুলোতে বন্ধ হয় না বিক্রি।
বছরের ১১ মাস ধরে এ চিত্র দেখা যায় রাজধানীতে, কিন্তু রমজান এলে পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
রোজার দিনে বিক্রির সুযোগ থাকে না। ইফতারের পর ঝালমুড়ির ক্রেতা পাওয়া যায় না। ফলে মাসজুড়ে সম্ভব হয় না এ পেশায় টিকে থাকা।
রমজানের পুরো সময় কী করেন ঝালমুড়িওয়ালারা, তার উত্তর খুঁজতে দুজনের দ্বারস্থ হয় নিউজবাংলা। তাদের একজন আব্দুর রহমান মুড়ি বিক্রি করেন বাড্ডা ইউলুপসংলগ্ন এলাকায়।
অন্য সময়ে দিনে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বিক্রি হয় তার, কিন্তু রোজায় সে সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে তাই আব্দুর রহমানকে চলে যেতে হয় গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মজিদবাড়িয়ায়।
৪৯ বছর বয়সী এ ঝালমুড়িওয়ালা জানান, ঝালমুড়ি বেচে মাসে গড়ে তার আয় হয় ১৫ হাজার টাকা। এ মাসে সেটা শূন্যে নেমে যাবে।
রোজায় কীভাবে চলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিস্তি উঠায়ে চলি। রোজার পর কিস্তি টানি। বিভিন্ন সমিতি কিস্তি দেয়।’
আব্দুর রহমান জানান, ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা ঋণ করতে হয়। সে টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে হয় বাকি ১১ মাস ধরে।
বাড্ডার আরেক ঝালমুড়ি বিক্রেতা শফিকুল ইসলামের অবস্থাও আব্দুর রহমানের মতো। রোজায় কী করবেন জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক মাস পুরাই লস। চিন্তায় মাথা ঘুরে যাচ্ছে, কী করমু, না করমু।’
আব্দুর রহমানের মতো শফিকুলও চলে যাবেন নিজ গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে। সেখানে গিয়ে তাকেও ধারদেনা করে চলতে হবে একটা মাস।
এই ঝালমুড়ি বিক্রেতা জানান, গত বছর লকডাউনের মধ্যে রোজার সময়ে ২৫ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন। সেটার সুদ এখনও টানছেন।
‘এবার কী করব, সে চিন্তা করতেছি’, বলেন ৩৪ বছর বয়সী শফিকুল।
দুই ঝালমুড়ি বিক্রেতাই জানান, এ পেশার লোকজনের কোনো সমিতি বা সংগঠন নেই। ফলে বিপদে ভরসার জায়গা পান না তারা।