ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাটবাজারে এবারও কেজিদরে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। এতে অধিক মুনাফা করছেন ব্যবসায়ী আর ঠকছেন ক্রেতা। কেজিতে অতিরিক্ত দামের কারণে তরমুজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর পেছনে তাদের কোনো কারসাজি নেই। পাইকার থেকে বেশি দামে কেনার কারণে বাধ্য হয়ে কেজিদরে বিক্রি করছেন তারা।
বিক্রেতাদের এ দাবি মানতে নারাজ ক্রেতারা। তাদের দাবি, বিক্রেতারা সিন্ডেকেট করে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন। তাই নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালালে এ পদ্ধতিতে তরমুজ বিক্রি বন্ধ হওয়াসহ দাম কমে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
শহরের চরপাড়া ও পাটগুদাম ব্রিজমোড় বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শত শত তরমুজ নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। দোকানের পেছনের দিকে ডিজিটাল পাল্লা রাখা হয়েছে। ক্রেতার সমাগম থাকলেও কেজি দরে অতিরিক্ত দাম চাওয়ার কারণে তরমুজ না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে এখন যে তরমুজ পাওয়া যায়, একেকটির ওজন ৪ থেকে ৭ কেজি পর্যন্ত। বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। সে হিসেবে আস্ত একটি তরমুজের দাম পড়ে ২৮০ টাকা থেকে ৪৯০ টাকা পর্যন্ত।
দামের কারণে যা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। মধ্যবিত্তরাও যেন কুলিয়ে উঠতে হিমশিম খান এতে।
পাটগুদাম ব্রিজমোড়ে তরমুজ বিক্রি করেন তাহের আলী তালুকদার। কেজি দরে বিক্রির কারণ কী? জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খুলনা থেকে পাইকারি দরে কিনে আনি। সেখানে মাঝারি আকারের তরমুজের দাম পড়ে ২০০ টাকা। ফলে ময়মনসিংহে ওই তরমুজটির দাম পড়ে ৩০০ টাকা। যাতায়াত খরচের বিষয়টি মাথায় রেখে এখানে ৭০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। এ জন্য গোপনে কেজিতে বিক্রি করছি। কিন্তু এতে লাভের পরিমাণ খুব কম।’
তরমুজ বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, ‘কেউ কেজি হিসেবে নিতে না চাইলে পিস হিসেবেও নিতে পারে। তবে দাম পড়বে ২৮০ টাকা থেকে ৪৯০ টাকা পর্যন্ত', যা কেজিদরের সমানই।
চরপাড়া বাজারের কয়েকজন তরমুজ বিক্রেতা জানান, এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কোনো কারসাজি নেই। ক্রেতারা দামাদামি করে চলে যাওয়ায় বিক্রি কম হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কম দামে বিক্রি করতে পারছেন না তারা।
বিক্রেতাদের এমন অজুহাত মানতে নারাজ ক্রেতারা। ফয়জুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তরমুজ এখন নিম্নবিত্তদের নাগালের বাইরে। একজন শ্রমিক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারা দিনে ৫০০ টাকা রোজগার করলে ২৮০ টাকা দিয়ে তরমুজ কিনবে না। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী তাকে আগে কিনতে হবে।
‘আমি তরমুজ কিনতে গিয়েও না কিনে চলে আসছি। এক কেজির দাম ৭০ টাকা। যদি পিস হিসেবেও কিনি তবুও ৭০ টাকা কেজি হিসেবেই দাম পড়ে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে, এ জন্য এই অবস্থা’ বলেন তিনি।
ফরহাদ নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘সামনে রোজা। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের চেষ্টা করছে। পাইকারিভাবে কত টাকায় কিনে কত টাকা বিক্রি করছে, সেটা রসিদ দেখে তদারকি করা প্রয়োজন। এ জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চললে কেজিদরে তরমুজ বিক্রি বন্ধ হওয়াসহ দাম কমে আসবে।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তরমুজ বিক্রিতে ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে কি না আমাদের জানা নেই। তবে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। ব্যবসায়ীরা কেজি নাকি পিস হিসেবে তরমুজ কিনেছেন ক্রয়ের রসিদ দেখা হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভের চেয়ে অতিরিক্ত দাম নেয়া হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’