রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় ফেরিঘাটের পাশাপাশি রয়েছে দুটি লঞ্চঘাট। ভাঙনে ধসে পড়েছে এই ঘাট এলাকার নদীর পাড়। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ রয়েছে লঞ্চ টার্মিনালে ওঠানামা করার দুটি সংযোগ সেতু। সেগুলো দীর্ঘ সাত মাসেও ঠিক না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নারী, শিশু ও বয়স্ক হাজারো যাত্রীকে।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালে ওঠানামার দুটি সেতুই বন্ধ। বিকল্প পথ হিসেবে সংযোগ সেতুর নিচ দিয়ে জিও ব্যাগ ফেলে বানানো হয়েছে রাস্তা। কিন্তু এটি অনেক ঢালু ও উঁচু-নিচু হওয়ায় নারী, শিশু ও বয়স্ক যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাস্তা থেকে ঘাট পর্যন্ত প্রায় ২০-২৫ ফুট নিচে ঢালু এ পথে যাত্রীদের ভারী মালামাল পরিবহন করতেও কষ্ট হয়।
জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করছে। দিনে প্রায় ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন লঞ্চে। বিপুল এ যাত্রীদের ওঠানামার পথে জিও ব্যাগের তৈরি এ রাস্তায় পা হড়কে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাই দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত এ ঘাট ও সেতু সংস্কার চান যাত্রী, লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা।
সালাউদ্দিন শেখ নামে এক যাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই লঞ্চঘাট দিয়ে আসা-যাওয়া করি। কিন্তু কয়েক মাস ধরে দেখছি লঞ্চ টার্মিনালে যাওয়ার সংযোগ ব্রিজটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ব্রিজের নিচ দিয়ে টার্মিনালে যাওয়ার পথ করা হয়েছে। যখন নদীর পানি বাড়বে, তখন সবাই কোন জায়গা দিয়ে যাবে?’
লঞ্চে করে এ ঘাটে আসা যাত্রী শিমলা আক্তার বলেন, ‘ছোট বাচ্চা নিয়ে এই উঁচু-নিচু পথে ওঠা অনেক কষ্টকর। সেতু থাকলে সহজেই টার্মিনালে ওঠানামা করা যায়।’
ষাটোর্ধ্ব হামিদ মিয়া বলেন, ‘এখন বুড়ো হয়ে গেছি। এত ওপরে ওঠানামা করতে পারি না। লঞ্চ থেকে নেমে ওপরে উঠতে একেবারে হাঁপিয়ে গেছি।’
জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার মিলন শেখ বলেন, ‘এই নৌপথ ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু প্রায় সাত মাস আগে নদীভাঙনে লঞ্চঘাটটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আজ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ সংস্কারের প্রয়োজন মনে করেনি। এর ফলে যাত্রীদের পাশাপাশি লঞ্চ মালিক-শ্রমিকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।’
তিনি জানান, বর্ষায় এ পথের অবস্থা হবে বেহাল। আরও বাড়বে যাত্রীদের দুর্ভোগ। বলেন, ‘এখন যাত্রীরা কোনো রকম জিওব্যাগ দিয়ে তৈরি রাস্তায় চলাচল করলেও বর্ষায় অবস্থা খুব খারাপ হবে। তখন পানি বাড়লে এই রাস্তা ডুবে যাবে। সিঁড়ি না থাকলে ওঠানামা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর হবে।’
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলার নির্বাহী অফিসার আজিজুল হক বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছে, লঞ্চঘাটটির স্থান পরিবর্তন হবে, তাই এই সেতু দুটি সংস্কার করা হচ্ছে না। তবে যাত্রীরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন, সে জন্য অস্থায়ীভাবে মেরামত করে অন্তত চলাচলের উপযোগী করার জন্য তাদের বলা হয়েছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা অঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় দৌলতদিয়ায় ছয় কিলোমিটার স্থায়ী কাজ হবে। গত বর্ষায় নদীভাঙনে ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যাত্রীদের চলাচলের জন্য জিও ব্যাগ ফেলে রাস্তা করে হয়েছে। বর্তমানে যাত্রীরা সেই রাস্তা ব্যবহার করছেন। প্রকল্পটি এলে ঘাট মেরামত হবে।’