করোনার বিস্তারের কারণে কার্যত দুই বছর বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন চালু রাখা খুবই দরকার বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি৷ তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একাংশের দাবির কারণে, মাধ্যমিকে ক্লাস কিছুদিন কম নেয়া হতে পারে।
শুক্রবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এক সম্মেলনে যোগ দিয়ে এই বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন মন্ত্রী।
জবাবে তিনি বলেন, ‘সবাই চাইছে রমজানে একটু গরম, বন্ধ রেখে দেন। আসলে তো এখন ক্লাস করা খুবই দরকার। দুটো বছর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস হয়নি। এখন শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে না পারলে তাদের জন্য সিলেবাস শেষ করা কষ্টকর হয়ে যাবে।’
রোজায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে সরকারের সিদ্ধান্তের পর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একটি অংশ এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে। তারা করোনার আগে কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় রোজায় স্কুল-কলেজ বন্ধ চাইছে।
আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম মেয়াদে যানজটের কথা চিন্তা করে রোজায় রাজধানীতে ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর টানা কয়েক বছর একই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আবার ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ হলে ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরের বছরে সেপ্টেম্বরে স্কুল-কলেজ পর্যায়ক্রমে চালু হতে থাকলেও করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে আবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়, ক্লাস চলে অনলাইনে।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর মাস্ক পরা ছাড়া বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হলে শিক্ষাঙ্গনে ফেরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি। আর এতে রাজধানীতে যানজটের তীব্রতা ফিরে এসেছে।
এর মধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রোজায় প্রাথমিকে ক্লাস চলছে ২০ রোজা পর্যন্ত। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ২৪ রোজা পর্যন্ত ক্লাস নেয়া হবে।
মন্ত্রী জানান, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকেও প্রাথমিকের মতোই ২০ রোজা পর্যন্ত ক্লাস নেয়া হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা যোগাযোগের মধ্যে রয়েছি। হয়ত একই সময়ে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করব। এই ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে।’
প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষকদের কর্মসূচির দরকার নেইমন্ত্রী বাংলা অ্যাকাডেমিতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর উদ্যোগে সপ্তম বার্ষিক এই সম্মেলনে। সেখানে তিনি স্কুল-কলেজের ক্লাস ছাড়াও শাহবাগে প্রতিবন্ধী শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন।
এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ১৩ দিন ধরে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবন্ধী স্কুলের নীতিমালার মধ্যে যদি তারা পড়েন নিশ্চয়ই হবে। আশা করছি শীগগিরই নতুন এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারব। এটি নিয়ে কাজ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে আমি মনে করি, কোনো শিক্ষকের আন্দোলনে নামার দরকার নেই। তাদের দাবি যদি যৌক্তিক হয়, তাহলে কোনো দাবি ছাড়াই শেখ হাসিনা সরকার এমনিতেই করবেন। প্রতিবন্ধী স্কুল যারা চালান, তাদের কথা আমরা অবশ্যই চিন্তা করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘নীতিমালা না, আমরা যে নিয়মগুলো পালন করি, সেগুলোর কথাই বলা হয়েছে। খুবই সচেতনভাবে সেগুলো অনুসরণ করা হয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে কোনো বিষয়ে ঢালাওভাবে মন্তব্য করতে পছন্দ করি। এটি ঠিক নয়। ভালোমন্দ সব জায়গায় আছে। দুজন বা পাঁচজন ভালো কাজ করলেন না। হয়ত একটু ভুল কাজ করলেন তার জন্য সকলকে সে দায়ে দায়ী করা ঠিক নয়।’