বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নৌকাই সাঁকো

  •    
  • ১ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:৫৬

আসলাম মিয়া নামের এক মাঝি বলেন, ‘নদীতে অহন পানি কম। প্রতিজন মানুষ পার অইলে ৫ টাকা কইরা লই (নেই)। আর নদীত হেনা (কচুরিপানা) জমলে হগ্গলের (সবার) নৌকা একলগে (একসঙ্গে) কইরা পুল বানাই।’

তিতাস নদীর পাড়ে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়নের কান্দা পিপিড়িয়া বাজার। আরেক প্রান্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ বাজার। এই দুই বাজারে যাতায়াতের জন্য আছে একটি খেয়াঘাট।

নদীতে পানি ভরপুর থাকলে খেয়াঘাটে অনায়াসেই চলে নৌকা, তবে পানির স্রোত যখন কমে যায়, কচুরিপানা জমে যায়, তখন আটকে যায় নৌকা। তাতে অবশ্য লোকজনের যাতায়াত থেমে থাকে না। যাত্রী পারাপারে তখন মাঝিরা তৈরি করে নেয় নৌকার সাঁকো।

তারা নিজেদের নৌকাগুলোকে এক পাড় থেকে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে আরেক পাড় পর্যন্ত নিয়ে রাখেন। দেখতে একটা সেতুর মতোই লাগে। লোকজন তখন নৌকাগুলোর ওপর দিয়ে হেঁটে যাতায়াত করে। সে জন্য জনপ্রতি গুনতে হয় ৫ টাকা।

এই খেয়াঘাট পারাপারে নিয়োজিত আছে ৪০টি নৌকা। প্রতিদিন ২০ জন মাঝি পালা করে নৌকা চালান।

খেয়াঘাটে গিয়ে কথা হয়ে মাঝি আসলাম মিয়া ও তমিজ মিয়ার সঙ্গে। তারা জানান, এই খেয়াঘাটে নৌসেতু চলে আসছে অনেক বছর ধরে। কচুরিপানা জমে গেলেও যেন বেকার থাকতে না হয়, সে জন্য মাঝিরা এই সেতু তৈরির বুদ্ধি বের করেন। লোকজনেরও এতে উপকার হয়।

আসলাম মিয়া বলেন, ‘নদীতে অহন পানি কম। প্রতিজন মানুষ পার অইলে ৫ টাকা কইরা লই (নেই)। আর নদীত হেনা (কচুরিপানা) জমলে হগ্গলের (সবার) নৌকা একলগে (একসঙ্গে) কইরা পুল বানাই। যেই টেহা (টাকা) ওডে, হেই টেহা হগ্গলে মিল্লা (সবাই মিলে) ভাগ করি নেই।’

তমিজ মিয়া নামের মাঝি বলেন, ‘নদীতে বেশি পানি অইলেও কষ্ট। পানি কইম্মা গেলেও মাইনসের কষ্ট অয়। আমডা চাই একটা সেতু অউক।

‘দেশ স্বাধীনের পর থাইক্কা এইডা খেয়াঘাট অইছে। দেশ তো বহুত আগুইছে। এহন এইনদিয়া একটা বড় সেতু অউক।’

মাঝিদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার মানুষ দুই পাড়ে যাতায়াত করে।

কান্দা পিপিড়িয়া গ্রামের হানদু মিয়া ও নবীর হোসেন জানান, এক থেকে দেড় মাইল দূরে একটি সেতু করা হয়েছে। মানুষ সেটি খুব একটা ব্যবহার করে না। কান্দা পিপিড়িয়ার এই অংশ দিয়েই লোকজনের চলাচল বেশি। পানি ভরপুর থাকলে নৌকায় চলাচল করা যায়, তবে পানি কমে গেলে সারিবদ্ধ নৌকায় হেঁটেই লোকজন তিতাস পাড়ি দেয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ গ্রামের মাইন উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম জানান, কুমিল্লার মুরাদনগরের শ্রীকাইল সরকারি কলেজে বাঞ্ছারামপুরের শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। তারা নিয়মিত নদীর বাজারের অংশ দিয়েই ওই পাড়ে যায়।

সাঁকোরূপী নৌকায় এখন আর ভরসা নেই স্থানীয়দের। তারা নদী পারাপারের জন্য চান স্থায়ী সেতু।

শ্রীকাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার বলেন, ‘এইখানে একটি সেতু হলে কুমিল্লার মুরাদনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর এই ৩ উপজেলার ১৫ হাজার মানুষের চলাচলে অনেক সহজ হবে। এখানকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।’

তার সঙ্গে একমত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের ফরদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলামও।

দুই চেয়ারম্যান জানান, সেতু নির্মাণের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানোর ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর