ইফতারে ছোলা একপ্রকার অপরিহার্য এক খাদ্য অনুষঙ্গ। মুড়ি, পেঁয়াজু ও বেগুনি ভাজার সঙ্গে ছোলা ভুনার মিশ্রণে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার। রোজা এলেই বাড়ে ছোলার চাহিদা। আর বেশি চাহিদার সুযোগে বাড়িয়ে দেয়া হয় দাম।
এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ২০ টাকা বেড়ে বাজারে ছোলার কেজি এখন ৯০ টাকা। এক মাস আগেও এটি ছিল ৭০ টাকার নিচে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে এমন দাম নেয়া হলেও পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কম। কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি ছোলার দাম ৮০ টাকা।
কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক জানান, ছোলার দাম বৃদ্ধির এখন কোনো কারণ নেই। তারপরও শুধু চাহিদা বেশি থাকায় সুযোগ নেয়া হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা রোজাকে কেন্দ্র করে দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা লোটে, যা অনৈতিক।
বাজারদর
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর হিসেবে দেখা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি প্রতি কেজি ছোলা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছিল ৭০-৭৫ টাকায়।
রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ছোলার দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ ভাগ।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে ভালো মানের ছোলা ৮৫ থেকে ৯০ টাকার নিচে মিলছে না। ব্রান্ডের প্যাকেট করা ছোলার কেজি ১০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে ছোলার দাম কেজিতে দুই টাকা কমেছে। কিন্তু সেটার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েনি। খুচরা বাজারে এখন এক কেজি সবচেয়ে ভালো মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকায়, সাধারণ মানের ৮০-৮৫ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে ছোলার দাম কেজিতে দুই টাকা কমেছে। ছবি: নিউজবাংলা
এক সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে সাধারণ মানের ছোলা প্রতি কেজি ৭০ টাকা, মাঝারি মানের ৭৫ টাকা এবং ভালো মানের ছোলা ৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, রোজার মাসে প্রায় প্রতি পরিবার ছোলা খায়। বিভিন্ন সংগঠন ইফতারের আয়োজন করে। ফলে ছোলার চাহিদা বেড়ে য়ায়। প্রতি কেজি ছোলা কিনতে তাদের বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে বিক্রিও করতে হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি দামে।
মিরপুরের শেওড়াপাড়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী লিয়াকত হোসেন বলেন, মার্চের মাঝামাঝি থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতি কেজি ছোলা ৮০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রোজার কারণে চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বাড়তির দিকে। গত মাসে ৭০-৭৫ টাকায় এটি বিক্রি করা হয়।
২০১৯ সালের রোজায় প্রতি কেজি ছোলার দাম ছিল ৭০ টাকা। ২০২০ সালেও একই দর থাকলেও ২০২১ সালে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ছোলা বিক্রি হয় ৭৫ টাকায়।
চলতি বছর এখন প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯০ টাকায়।
টিসিবির ছোলা বিক্রি শুরু
ঢাকায় ছোলা বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতি কেজি ছোলার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ চার কেজি ছোলা কিনতে পারবেন।
২৭ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় দৈনিক ১৫০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি।
টিসিবি জানিয়েছে, ছোলার সঙ্গে সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম আগের মতো চলবে।
শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন টিসিবির ট্রাকে পণ্য পাওয়া যাবে।
পর্যাপ্ত আমদানি
আমদানিতে টান পড়েনি, স্বাভাবিক রয়েছে ছোলার আমদানি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত ২৪ হাজার টন ছোলা আমদানি করা হয়েছে। শুধু চলতি মাসের ১৪ দিনেই ১৬ হাজার টন ছোলা আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে। আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে আরও পণ্য।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, গত তিন অর্থবছরে দেশে গড়ে ২ লাখ ৩০ হাজার টন করে ছোলা আমদানি করা হয়েছে।
দেশে বছরে ছোলার চাহিদা ১ লাখ টন। এর মধ্যে রোজার মাসেই প্রয়োজন হয় ৮০ হাজার টন। মাত্র ৬ হাজার টন স্থানীয় উৎপাদনের বিপরীতে আমদানি করতে হয় আরও প্রায় ১ লাখ টন। ছোলা আমদানির ক্ষেত্রে কোনো শুল্ক নেয় না সরকার।
ছোলা উৎপাদনের শীর্ষে ভারত
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, ছোলা উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে ভারত। ২০২০ সালে দেশটিতে ১ কোটি ১৪ লাখ টন ছোলা উৎপাদিত হয়। দেশের অভ্যন্তরে ছোলার চাহিদার কারণে তারা সামান্য রপ্তানি করে ।
ছোলা রপ্তানির শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির উৎপাদিত ছোলার ৯৫ শতাংশই রপ্তানি হয়। বাংলাদেশে মোট আমদানি করা ছোলার প্রায় ৯৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে।