রাজধানীর কলাবাগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন ছাত্রীর বাবা আল আমিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার ৭ নম্বর নারী ও শিশু ট্রাইবুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুলফিকার হায়াতের কাছে সাক্ষ্য দেন ওই ছাত্রীর বাবা। এ সময় আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামি দিহানকে শনাক্ত করে তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন আল আমিন। এ সময় মামলার এজাহারে বাদীর স্বাক্ষর প্রদর্শনী হিসেবে নথিতে অন্তর্ভুক্ত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
আদালতে সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত জবানবন্দি দেন সন্তানহারা এই পিতা। পরে তাকে জেরা করেন আসামির আইনজীবী বোরহান উদ্দিন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ জানান, আলাচিত এ মামলার অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে ৫৫ জন সাক্ষীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জেরায় আসামির আইনজীবী বাদীকে জেরার সময় বলেন, ‘হাসপাতালে আনার পরে আপনার মেয়ে মারা গেছেন চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসা আর অবহেলায়।’ বাদী উত্তরে তা অস্বীকার করেন।
বিচারক আগামী ২১ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষ্য নেয়ার জন্য তারিখ ঠিক করেন।
জবানবন্দিতে আল আমিন বলেন, ‘গত বছরের ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীর মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এর পর আমিও নবাবপুরে আমার ব্যবসাকেন্দ্রে চলে যাই। দুপুর দেড়টার দিকে আমার স্ত্রী ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার দিয়ে জানায়, আমার মেয়ের বন্ধু দিহান তাকে জানিয়েছে যে, সে নাকি দিহানদের বাসায় এসছিল। সে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
‘আমার স্ত্রী আরও জানায় আমি সেখানে যাচ্ছি। তুমি তাড়াতাড়ি এখানে চলে আসো। ধানমন্ডি আনোয়ার খান মডান হাসপাতালে পৌঁছে দেখি আমার স্ত্রী সেখানে আগেই পৌঁছে গেছে। আমাকে দেখে আমার স্ত্রী জড়িয়ে ধরে বলে আমাদের মেয়ে আর নাই।’
এর পর জবানবন্দিতে তিনি এজাহারে বর্ণণা করা ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
আল আমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘সেদিন সকালে সাড়ে ৮টায় আমার স্ত্রী অফিসে এবং আমি সকাল সাড়ে ৯টায় ব্যবসায়ীক কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাই। পরে আমার মেয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলে সে কোচিংয়ের পেপার্স আনতে বাহিরে যাচ্ছে। এ কথা বলে সে সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।’
‘বেলা ১টা ১৮ মিনিটে ইফতেখার ফারদিন দিহান আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলে আপনার মেয়ে তার বাসায় গিয়েছিল, কিন্তু সেখানে সে হঠাৎ করে অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলের জরুরি বিভাগে ভর্তি করিয়েছি। এ কথা শুনে আমার স্ত্রী বেলা ১টা ৫২ মিনিটের দিকে হাসপালে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে আমার স্ত্রী চিকিৎসকের কাছে জানতে পারে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে মেয়েকে।’
আল আমিন আহমেদ এজাহারে আরও অভিযোগ করেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পারি দিহান আমার মেয়েকে প্রেমের প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে তার বাসায় বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে দিহান ফাঁকা বাসায় আমার মেয়েকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে।
‘ধর্ষণের সময় অমানবিক কার্যকলাপ করায় তার গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অচেতন হয়ে যায়। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দিহান চালাকি করে আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আমার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।’
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন বিচারক।
এর আগে ৭ নম্বর নারী ও শিশু ট্রাইবুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুলফিকার হায়াত আলোচিত এ মামলার একমাত্র অভিযুক্ত দিহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ১৬ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ রাখলেও সেদিন বাদী পক্ষের সময় আবেদনের কারণে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পিছিয়ে ৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার রাখা হয়।
অভিযোগ গঠনের সময় দিহানের পক্ষে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন শুনানি করেন আইনজীবী বোরহান উদ্দিন। আবেদন শুনানিতে তিনি বলেন, ‘পারস্পরিক সম্মতিতে তারা মিলিত হন। কোনো জবরদস্তি সেখানে হয়নি। নিহতের যৌনাঙ্গে কোন বীর্যের দাগ ছিল না বলে চিকিৎসা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সুতরাং আসামি অব্যাহতি পাবেন।’
সেদিন (অভিযোগ গঠনের দিন) এ আইনজীবী দিহানের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার চাইলে বিচারক তা নাকচ করে দেন।
এর আগে তদন্ত করে দিহানের তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
গত বছরের ৮ নভেম্বরে এ মামলায় শুধুমাত্র ইফতেখার ফারদিন দিহানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেনস্টগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক খালেদ সাইফুল্লাহ।
আসামি দিহান এ মামলায় গ্রেপ্তারের পর থেকে কারাগারে আছেন।