শরীয়তপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ শাখায় যাকে ছাত্রলীগ সভাপতি করা হয়েছিল তিনি ওই কলেজের শিক্ষার্থীই ছিলেন না বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ।
কাগজে-কলমে এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন সোহাগ ব্যাপারী। তিনি কলেজের বাংলা বিভাগের এক শিক্ষককে বুধবার ‘লাঞ্ছিত’ করেন। এ ঘটনার পর তার ছাত্রত্ব না থাকার বিষয়টি সামনে আসে। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে কলেজ শাখা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন জেলা ছাত্রলীগের নেতারা।
কলেজের অধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদ জানান, ‘কলেজের নথিতে সোহাগ ব্যাপারী নামে আমাদের কোনো ছাত্র নেই। কলেজের ছাত্র না হয়েও তাকে এই কলেজে ছাত্রলীগের সভাপতি কেন করা হয়েছিল, তা আমার বোধগম্য নয়। এর আগেও সে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।’
কলেজ কমিটি গঠনের নীতিমালা কী- এ প্রশ্নের উত্তরে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহসিন মাদবর বলেন, যারা কমিটিতে আসবেন তাদের অবশ্যই ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ছাত্র হতে হবে।
এই কমিটি তাহলে কীভাবে হলো- এই প্রশ্নের উত্তরে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘কমিটির গঠনের বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তাই কীভাবে এই কমিটি হয়েছে তা আমি বলতে পারব না।’
তিনি জানান, কলেজ শাখার এই কমিটি ২০১৮ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী অনুমোদন দিয়েছিল।
সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে এক বছরের জন্য কমিটি করা হলেও তা বহাল থাকে তিন বছর। কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য না করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার মধ্য দিয়ে তার ছাত্রত্ব না থাকার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এমন ঘটনা শোনার পর পরই নিন্দাপ্রস্তাব এনে কলেজ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’
কলেজের অধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদ জানান, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিতে পালং মডেল থানায় অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে। তবে সেই অভিযোগ আমলে নেয়নি পুলিশ। দীর্ঘ ২৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেল, এখনও মামলা হয়নি ওই ছাত্রলীগ নেতার নামে।
কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, বুধবার কলেজে বাংলা বিভাগের স্নাতক সম্মান (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিশেষজ্ঞ এবং ওই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। তাদের সংবর্ধনা ও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে বাংলা বিভাগ।
এই আয়োজনে ছাত্রলীগ নেতাদের দাওয়াত দেয়া হয়নি কেন তা জানতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ ব্যাপারী ও সাধারণ সম্পাদক রাসেল জমাদ্দার দলের কয়েকজন কর্মী নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে বিভাগে যান। শিক্ষক বি এম সোহেলের কাছে এ বিষয়ে জবাবদিহি চান।
তিনি তখন একটি অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তখন সোহাগ ব্যাপারী ওই শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে অন্য শিক্ষকরা এসে তাকে উদ্ধার করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে কলেজের শিক্ষার্থীরা।
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র বিকাশ মণ্ডল বলেন, ‘সোহাগ ব্যাপারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার নেয়ার দাবিতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। কেন মামলা নেয়া হচ্ছে না, কার ইন্ধনে, কার প্রশ্রয়ে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে না, আমরা এর জবাব চাই।’
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ ২০২১ সালের আগে শরীয়তপুর সরকারি কলেজ নামে পরিচিত ছিল। নতুন নামে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা করে গত বছরের জুনে।