পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের মধ্যে রোজার মাসে মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের বড় বিনিয়োগের ঘোষণার পরদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল। এদিন লেনদেনের অর্ধেক সময় পর্যন্ত সূচক কমতে থাকলেও শেষ পৌনে ১ ঘণ্টায় হারানো দর ফিরে পেতে থাকে কোম্পানিগুলো।
দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১৬ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, যা গত ১৬ ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ। সেদিন ১ হাজার ২১৩ কোটি ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছিল।
এর আগে শেষ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল গত ১৫ মার্চ। সেদিন হাতবদল হয়েছিল ১ হাজার ৬৫ কোটি ৬৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
গত সেপ্টেম্বর থেকে দর সংশোধনে থাকা পুঁজিবাজার চলতি বছরের শুরুতে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েও ভালো করতে পারেনি। এর মধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু হলে দেখা দেয় আতঙ্ক। একপর্যায়ে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে না গিয়ে বাজার পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।
দরপতন ঠেকাতে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশে নামিয়ে আনার পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়ানো ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএসইসি। পাশাপাশি অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতেও বিনিয়োগের নির্দেশ দেয় সংস্থাটি।
এতকিছুর পরও লেনদেনের এক পর্যায়ে ৬০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে আসে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বুধবার বৈঠকে বসে বিএসইসি।
বৈঠক শেষে রোজায় বিনিয়োগ বাড়ানোর সুস্পষ্ট ঘোষণা আসে। বলা হয়, প্রতিটি ডিলার অ্যাকাউন্টে রমজান মাসে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করবে। এতে শেয়ারবাজারে নতুন ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে।
এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওর মাধ্যমে রমজান মাসে নতুন করে ২০০-৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সমিতি বিএমবিএর সভাপতি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।
আবার পুঁজিবাজারের জন্য বিএমবিএ যে ১০ হাজার কোটি টাকা তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, সে বিষয়েও বিএসইসি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়।
আগামী রোব বা সোমবার থেকে রোজা শুরু হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে লেনদেনের শুরুতে শেয়ারগুলো দর হারাতে থাকে। লেনদেনও কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে হতাশা আরও গাঢ় হতে থাকে।
সপ্তাহের শেষ দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের শেষ সময়ে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ায়
দুপুর সোয়া ১২টার দিনে সূচক আগের দিনের চেয়ে কমে যায় ২৩ পয়েন্ট। সেখান থেকে কিছুটা বাড়লেও বেলা পৌনে ২টার সময়ও সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৭ পয়েন্ট কম ছিল। শেষ পৌনে ১ ঘণ্টায় সেখান থেকে সূচক বাড়ে ২৭ পয়েন্ট। তবে একেবারের শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ে আগের দিনের চেয়ে ৪ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন।
তবে সূচক বাড়লেও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর হারিয়েছে। বেড়েছে ১৩৪টি কোম্পানির দর। বিপরীতে কমেছে ১৮৩টি। অপরিবর্তিত ছিল বাকি ৬২টি কোম্পানির শেয়ারদর।
লাফানোর পরদিনই বিমায় দরপতন
কোম্পানির শেয়ারের ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকরা ধারণ করবেন, এক দশক আগে আগে করা এমন একটি বিধান কার্যকরে কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর চিঠির পরদিন বুধবার এই খাতের কোম্পানির শেয়ারদর লাফালেও পরের দিনই দর হারিয়েছে বেশিরভাগ।
আগের দিন এই খাতের ৪০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছিল ৩৯টিরই। একটির দর ছিল অপরিবর্তিত।
দ্বিতীয় দিনই এই কোম্পাগুলোর ২০টি দর হারিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানির ক্রেতাই ছিল না।
আগের দিন সর্বাধিক দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৯টিই ছিল বিমা খাতের। এদিন এই ১০টির মধ্যে একটি এই খাতের।
প্রধান খাতগুলোর মধ্যে ওষুধ ও রসায়ন খাতে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। খাদ্য, আর্থিক, প্রকৌশল খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা।
ব্যাংক খাতে দুটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২২টি। বুধবার লভ্যাংশ ঘোষণা করা দুটি ব্যাংকই দর হারিয়েছে এদিন। সবচেয়ে বেশি দর হারানোর তালিকায় ছিল এই দুটি।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
এই তালিকায় শীর্ষে ছিল জেএমআই হসপিটাল, যেটি পুঁজিবাজারে প্রথম লেনদেন শুরু করেছে। ২০ টাকায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১০ শতাংশ। তবে এই দামে ক্রেতা ছিল না বললেই চলে। সারা দিনে কেবল ৪৬৭টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯.৮৬ শতাংশ বেড়েছে ইয়ানিক পলিমারের দর। আর্থিক খাতের আইডিসির দরও বেড়েছে প্রায় সমান।
এই তালিকায় আরও ছিল লোকসানি মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, লাভেলো আইসক্রিম, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, জেমিসি সি ফুড, জুট স্পিনার্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স এবং ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
দরপতনের শীর্ষ ১০
লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা থাকায় দরপতনের ২ শতাংশের সীমা কার্যকর না থাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবির দর কমেছে সবচেয়ে বেশি ৩.৮২ শতাশং।
কোম্পানিটি এবার ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে, যেটি বিনিয়োগকারীদের মতপুঃত হয়নি। ১৫ টাকা ৭০ পয়সা থেকে শেয়ারদর কমে হয়েছে ১৫ টাকা ১০ পয়সা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩.৩৭ শতাংশ বা ৮০ পয়সা দর হারিয়েছে যমুনা ব্যাংক। এই ব্যাংকটি আগের বছরের মতোই শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আগের দিন শেয়ারদর ছিল ২৩ টাকা ৭০ পয়সা, দর কমে হয়েছে ২২ টাকা ৯০ পয়সা।
ইমাম বাটন, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, নর্দার্ন জুট, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, রানার অটো, সমতা লেদার, ড্রাগন স্যোয়েটার, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, স্টাইলক্রাফট ও জিকিউ বলপেন ছিল দরপতনের শীর্ষ তালিকায়।