বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ডের যৌথ অনুশীলন থেকে পারস্পরিক শিক্ষার পাশাপাশি সম্পর্ক জোরদারকে গুরুত্বপূর্ণ মানছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক যদি ভালো তৈরি করতে না পারি, আমরা কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভালো পারফর্ম করতে পারব না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যৌথ অংশগ্রহণে ‘অনুশীলন টাইগার লাইটনিং-৩’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিংয়ে (বিপসট) সমাপনী আয়োজন ছিল ১৩ দিনের এই অনুশীলনের।
বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতা ও সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় করা ছিল অনুশীলনের মূল লক্ষ্য। অনুশীলনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণে অংশগ্রহণকারীদের পারদর্শী করে তুলতে বাস্তবধর্মী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি চিফ অফ মিশন হেলেন জি লাফেভ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডিং জেনারেল মেজর জেনারেল রেজিনাল্ড জি এ নিল।
প্রশিক্ষণার্থীদের মহড়া শেষে মিট দ্য প্রেস-এ এসে সেনাপ্রধান বলেন, ‘শেখাটা গুরুত্বপূর্ণ হলে, সেটা মূল কথা নয়। সম্পর্ক তৈরি করাটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা যদি সম্পর্ক ভালো তৈরি করতে না পারি, আমরা কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভালো পারফর্ম করতে পারব না।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যৌথ অংশগ্রহণে ‘অনুশীলন টাইগার লাইটনিং-৩’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ছবি: আইএসপিআর
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী হিসেবে বিশ্বে অনেক নাম করেছে। বর্তমানে আমরা এক নম্বর ট্রুপস কন্ট্রিবিউটিং কান্ট্রি।’
প্রশিক্ষণকে সেনাবাহিনী গুরুত্ব দিয়ে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করি এটাকে কীভাবে উন্নত করা যাবে। একা একা প্রশিক্ষণ নেয়ার চেয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমরা প্রশিক্ষণ নিই।’
যৌথ অনুশীলন সম্পর্কে সেনাপ্রধান বলেন, ‘অনেক কিছু আমরা শিখতে পেরেছি। ভবিষ্যতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অনেক সহায়ক হবে। আমরা আমাদের সহযোগিতার জন্য অঙ্গীকার করেছি, আমরা একসঙ্গে ভবিষ্যতেও এ ধরনের এক্সারসাইজ করব।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, ‘আমাদের শক্তিশালী সামরিক সহযোগিতা রয়েছে। আমরা যৌথভাবে সামনে আরও অনেক কিছু করব। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান বেশ শক্তিশালী ও যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।’
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি চিফ অফ মিশন হেলেন জি লাফেভ বলেন, ‘টাইগার লাইটনিংয়ের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী যৌথভাবে কাজ করে আসছে। সামনে আরও আসছে। দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে, এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডিং জেনারেল মেজর জেনারেল রেজিনাল্ড জি এ নিল বলেন, ‘শান্তিরক্ষা মিশনে যোগাযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। শান্তিরক্ষা বাংলাদেশের চেয়ে ভালো কেউ বোঝে না। এটি দুটি দেশের যৌথ প্রশিক্ষণ।
‘এই প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে আমরা একে অপরের কাছে শিখতে পেরেছি। বিভিন্ন এজেন্সির বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের মধ্য দিয়ে আমরা শিখেছি অভিন্ন ভাষায় কীভাবে যোগাযোগ করতে হয়। মৌলিক বিষয় হলো যোগাযোগ। আমরা একে অপরকে বোঝার মধ্য দিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারি।’
এ ছাড়া এই অনুষ্ঠানে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী এবং বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুশীলন টাইগার লাইটনিং-৩-এ বছরের ৬ মার্চ শুরু হয়। সেনাসদর সামরিক প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিপসট এই অনুশীলনটি আয়োজন করে। অনুশীলনে মার্কিন প্যাসিফিক আর্মি কমান্ডের ৩৪ জন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৮২ সেনাসদস্যসহ সর্বমোট ১১৬ জন অংশ নেন।
২০১৭ ও ২০২১ সালে টাইগার লাইটনিং ১ ও ২ যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর বাংলাদেশে টাইগার লাইটনিং-৩ অনুষ্ঠিত হলো।