বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তবু সহজে বিশ্বাস রেল মহাপরিচালকের

  •    
  • ৩১ মার্চ, ২০২২ ১২:২১

রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সহজ-এর ভুল থাকবে না, ভুল সংশোধন হয়ে যাবে। ওরা তো নতুন, তাই ভুল করছে।’

অবকাঠামোগত প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা ছাড়াই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রির কাজ বাগিয়ে নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলা সহজ ডটকমকে আরও সময় দিতে চায় রেলওয়ে।

সংস্থাটির মহাপরিচালক দাবি করেছেন, নতুন কেউ দায়িত্ব নিলে সমস্যা হতেই পারে। তিনি বিশ্বাস করেন, তারা সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবে।

গত ২৬ মার্চ থেকে অনলাইনে নতুন ব্যবস্থাপনায় সহজের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও সেটি সফল হয়নি। এতদিন সিএনএসবিডি নামে যে প্রতিষ্ঠান এই টিকিট বিক্রির কাজ করত, তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও সহজের অধীনে যে ঘটনা ঘটছে, তা হয়নি কখনও।

অনলাইনে টিকিট বিক্রির শুরুর দিনেই অচল হয়ে যায় সহজের সাইট। পরে কখনও বিনা পয়সায়, কখনও ২০ টাকায় ঢাকা-জামালপুর এক্সপ্রেসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে টিকিট বিক্রির মতো ঘটনা ঘটিয়েছে সহজ।

সিএনএসবিডি প্রতি টিকিটের জন্য রেলের কাছ থেকে ২ টাকা ৯৯ পয়সা করে নিত। সেখানে সহজ অস্বাভাবিক কম দামের একটি অফার দেয় রেলকে। টিকিট পিছু ২৫ পয়সা করে নেবে- এমন একটি প্রস্তাবের পর তাদের আদৌ টিকিট বিক্রির অবকাঠামো আছে কি না, সেটি রেল যাচাই-বাছাই করেছে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন এখন বড় হয়ে গেছে।

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে পৌনে তিন টাকা বাঁচাতে গিয়ে টিকিটের পুরো টাকাটাই গচ্চা যাচ্ছে রেলের। এত ক্ষতি ও যাত্রী ভোগান্তির পরেও সহজকে নিয়ে আশা ছাড়ছে না রেলওয়ে।

রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাটির মহাপরিচালক নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তারা আশা প্রকাশ করছেন, শুরুতে সহজডটকমের যে ভুল ও অব্যবস্থাপনাগুলো রয়েছে সেগুলো তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

এতদিন যে ক্ষতি ও দুর্ভোগ হয়েছে, তার কী হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সহজকে জরিমানা দিতে হবে।

সিএনএস থেকে বেরিয়ে সহজের সঙ্গে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি টিকেটিং বিষয়ে চুক্তি করে রেলওয়ে। ২৬ মার্চ থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনায় ট্রেনের অনলাইন টিকিট বিক্রি শুরুর ঘোষণা আছে।

প্রথম দিনই সাইট অচল পাওয়া যায়। যারা ঢুকতে পেরেছেন, তারা ওয়েবসাইটের ধীরগতির কারণে পড়েন ভোগান্তিতে।

বহু যাত্রী অভিযোগ করেছেন- অনলাইনে নিবন্ধন এবং টিকিট কাটতে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। নিবন্ধনে ওটিপি এলে তা দিয়ে কন্টিনিউ হচ্ছে না। টাকা কেটে নিলেও অনেকে টিকিট পাচ্ছেন না। আবার টিকিট বিক্রি হলেও টাকা না কাটার কথাও জানিয়েছেন একজন।

রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সহজ-এর ভুল থাকবে না, ভুল সংশোধন হয়ে যাবে। ওরা তো নতুন, তাই ভুল করছে।’

যদি ভুলগুলো দূর না হয়?- এমন প্রশ্নে তিনি আবার বলেন, ‘রিকভারি হবে। এর মধ্যেই হয়ে যাবে। নতুন কোনো কিছু শুরু হলে এমন সমস্যা হয়। কারণ, টিকিটিং সিসটেম কঠিন আছে।’

রেলের যে ক্ষতি হচ্ছে- সেই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘ওদের যত ভুল হবে, তত তাদের জরিমানাও দিতে হবে।’

সামনে ঈদ আসছে। এর মধ্যে যটি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে তো বড় সমস্যা হয়ে যাবে- এমন প্রশ্নে রেলের মহাপরিচালক বলেন, ‘ঈদের সময় সেটা ভিন্ন জিনিস। এক সঙ্গে তখন অনেক মানুষ ভ্রমণ করবে, সমস্যা হবেই।’

কী কারণে সহজ ডটকমকে দায়িত্ব দেয়া হলো- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আগে যারা ছিল (সিএনএস বিডি) তাদের অনেক দিন সময় পার হয়েছে। তারা অনেক বেশি নিতো। অনেক অনিময় ছিল।’

১৪ মার্চ সহজডটকমকে রেলের অনলাইন টিকিটিং ঘোষণার দিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘রেলের টিকেটিং ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য ব্যবস্থাটিকে আরও আধুনিক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুরোনো প্রতিষ্ঠান থেকে টিকেটিং কার্যক্রম নতুন প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। আশা করি এখন থেকে টিকিট কালোবাজারি, টিকিট না পাওয়া এবং যাত্রী হয়রানির অভিযোগ আর থাকবে না।’

দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে যাত্রীদের দুর্ভোগ, বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় সহজ ডটকমের কাছে। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহাত আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের চুক্তিতে বলা হয় ২১ কর্মদিবসের মধ্যে আগের টিকিট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান যে সফটওয়্যার সল্যুশন ব্যবহার করে ৭৭টি রেলস্টেশনে টিকিটিং পরিচালনা করত, সেটা তারা রেলওয়েকে বুঝিয়ে দেবে। পরে রেলওয়ে আমাদের বুঝিয়ে দেবে।

‘কিন্তু তারা (সিএনএসবিডি) ২১ কর্মদিবসের শেষ দিন ২১ মার্চ সফটওয়্যারটি রেলকে বুঝিয়ে দেয়। আমাদের ২১ কর্মদিবসের মধ্যে কাজ শুরু করতে হবে চুক্তিতে ছিল, তাই আমরা নতুন একটি সফটওয়্যার এই সময়ে তৈরি করি।’

সহজের এত বড় মাপের অনলাইন টিকিটিং ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা ২০১৪ সাল থেকে বাস এবং লঞ্চের টিকিট পরিচালনা করে আসছি। রেলওয়ের ৯০ হাজার টিকিট বরাদ্দ থাকে প্রতিদিন বিক্রির জন্য, যার কয়েকগুন টিকিট আমরা বাস ও লঞ্চে প্রতিদিন বিক্রি করি।’

চালু করার প্রথম দিনেই রেলওয়ের সাইট ডাউন নিয়ে ফারহাত দাবি করেন, সে দিন সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রির শুরু হলে মিনিটে ২০ থেকে ২২ লাখ হিট পড়তে থাকে ওয়েবসাইটে। যাকে অস্বাভাবিক বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা, দেশের বাইরে থেকে রেলওয়ের ওয়েবসাইটে হিট আসাটা অনাকাঙ্ক্ষিত। ফলে দেশের মানুষ টিকিট কাটতে পারেননি।’

এরপর থেকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই অনলাইনে মানুষ ট্রেনের টিকিট কাটতে পারছেন বলে দাবি করেন সহজের এই কর্মকর্তা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, সজহডটকমে যে অব্যবস্থাপনা জাতি হিসেবে আমরা মনে করি এটা আমাদের নিয়তি। কারণ রেলের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যখন তাদের টিকিট অপারেশনের জন্য অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে, এই নিয়োগ দেয়ার আগে তাদের সক্ষমতার এবং সীমাবদ্ধতা, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা এসব যাচাই-বাছাই করে তাদের কাজ পাওয়ার কথা ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমলা নির্ভর সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনেক সময় কোনোভাবে প্রভাবিত হয়ে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে একদিকে যাত্রীসাধারণের দুর্ভোগ হচ্ছে, অন্যদিকে রাষ্ট্র মূল্যবান অর্থ অপচয় হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির অব্যবস্থাপনার কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।’

যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সহজডটকম দীর্ঘদিন ধরে দূরপাল্লার বাসের টিকিট সরবরাহ করে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের। হঠাৎ করে তাদের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে ট্রেনের টিকিট বিক্রির দায়িত্ব দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে চাইলে নিজেরাই অনলাইন পদ্ধতি চালু করতে পারতো এবং করা প্রয়োজন। বেসরকারি কোম্পানির হাতে দিয়ে ট্রেনকে দুর্বৃত্তায়ন করা হচ্ছে। এতে টিকিট কালোবাজারির শঙ্কাও উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর