শুরুটা হয়েছিল ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে। এরপর প্রতিদিন গড়ে ৫০ কিলোমিটার করে পায়ে হেঁটে ৭৫ দিনে ৬৪ জেলায় পা রাখার মাইনফলক স্পর্শ করেছেন অ্যাথলেট সাইফুল ইসলাম শান্ত।
মঙ্গলবার সবশেষ জেলা হিসেবে কক্সবাজারে গিয়ে হাজির হন তিনি। এই সময়ের মধ্যে পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার পথ।
শুধু ভ্রমণ করাই নয়, অভিযানকালে প্রত্যেক জেলায় একটি করে বৃক্ষরোপণ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন শান্ত।
দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচির প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে তিনি তরুণ সম্প্রদায়সহ সব বয়সের নাগরিকদের মাঝে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেন। এ ছাড়া প্রকৃতি রক্ষায় বৃক্ষরোপনের গুরুত্ব, পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতনতা ও জীবন বাঁচাতে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও সচতেনা তৈরি করেছেন।
‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্জার’ এর সহায়তায় এবং ‘হাইকার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ’ এর তত্ত্বাবধানে পায়ে হেঁটে দেশ ভ্রমণ কর্মসূচিতে অংশ নেন শান্ত। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে যাত্রা শুরু করি। ৭৫ দিন পর আজ কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে ৬৪ জেলার ৩ হাজার কিলোমিটার পথ শেষ হয়েছে। আমার কাছে এটি অ্যাডভেঞ্চার যেমন, তেমনি দেশের প্রকৃতি রক্ষায় সচেতনতা বাড়ানোর কাজটিও ছিল গুরুত্বপূর্ণ।’
৬৪ তম জেলা হিসেবে কক্সবাজারের শহীদ মিনারে গিয়ে অভিযান শেষ করেন শান্ত
অভিযানে যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শান্ত বলেন, ‘আগামী দিনে শুধু দেশে নয়, পায়ে হেঁটে বিদেশেও এমন সচেতনামূলক কর্মসূচী হাতে নেয়ার পরিকল্পনা আছে।’
শান্তর বিষয়ে ‘হাঁটাহাঁটি দ্য ওয়াচ’ সংগঠনের আহ্বায়ক জাকারিয়া মাহমুদ উচ্ছ্বাস বলেন, ‘গত ১৬ ডিসেম্বর আমাদের সংগঠন যাত্রা শুরু করে। সেদিন ১৬ জন অ্যাথলেট বিজয়-৭১ স্মরণে ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে ময়মনসিংহের ভালুকা পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেয়। শান্ত আমাদের সক্রিয় সদস্য। তিনি যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন তা অভাবনীয়। ৩ হাজার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেয়া যেমন অ্যাডভেঞ্চারাস তেমনি চ্যালেঞ্জিংও।’
‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্জার’ এর প্রধান নির্বাহী লিপটন সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিজেও ১৮ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছি। শান্ত আমাদের ছোট ভাইয়ের মতো। আমরা এক সঙ্গে কাজ করি। অ্যাথলেট হিসেবে তাকে যতটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন সবটুকু দেয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, আগামী দিনেও ভাল কিছু করবে শান্ত।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগাল ও পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতক সাইফুল ইসলাম শান্তর বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। তিনি দেশের বৃহৎ রানিং গ্রুপগুলোর সক্রিয় সদস্য এবং কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় ‘দেবিদ্বার রানার্স’ নামে ২ হাজার সদস্যের একটি রানিং গ্রুপ পরিচালনা করছেন। একজন নিয়মিত অ্যাথলেট হিসেবে তিনি ভ্রমণ, হাঁটাহাঁটি ও ট্রেকিং করেন।
এর আগে ২০২০ সালের ১২ আগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪০ দিনে পায়ে হেঁটে দেশের ১৬টি জেলার ১০০০ কিলোমিটার (কুমিল্লা থেকে বাংলাবান্ধা) পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গত ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার হাঁটার একটি সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করেন।