বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কৃষক বলছে মাথায় হাত, কর্মকর্তাদের দাবি অল্প ক্ষতি

  •    
  • ২৯ মার্চ, ২০২২ ১৩:১৭

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক নয়ন বলেন, ‘রোববার সিলেট থেকে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হবিগঞ্জে এসেছিলেন। আমরা তাদেরকে নিয়ে মাঠ পরিদর্শন করেছি। পানির অভাবে কিছু ক্ষতি হলেও এ বছর তেমন খরা পরেনি। এ কারণে যে পরিমাণ ক্ষতি হওয়ার ছিল সে পরিমাণে ক্ষতি হবে না।’

খরা ও মৌসুমজুড়ে বৃষ্টি না হওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে হবিগঞ্জের অনেক বোরো জমি। চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে এসেও ধানে শীষ আসেনি; যাও এসছে, খরায় চিটা হয়ে গেছে। এতে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকদের। বলছেন, তাদের ফসলের বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে।

বৃষ্টির অভাব ও অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বোরো জমি কিছুটা নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করলেও তেমন ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ হাজার হেক্টর চাষ হয়েছে হাওরে। জেলায় মোট উৎপাদন লক্ষামাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ লাখ টন।

এ ব্যাপারে জেলার চাষিদের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের।

জানান, মূলত নভেম্বর মাস থেকে বোরো আবাদ শুরু হয়। তবে জমিতে ভালো ফলনের ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির শেষ ও মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় জমিতে ফুল আসতে শুরু করে। যে কারণে সঠিক তাপমাত্রার সঙ্গে পরিমাণ মতো বৃষ্টি প্রয়োজন।

প্রয়োজনের সে সময়ে চলতি বছর এক ফোঁটা বৃষ্টিও হয়নি। এক দিকে বৃষ্টিপাতের অভাব, অন্যদিকে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে ব্যাঘাত ঘটেছে সেচেরও। সব মিলিয়ে বোরো জমিতে এবার দৈন্যদশা।

কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খরার কারণে বিভিন্ন জায়গায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত সেচ দিতে হয়েছে। এতে বেড়েছে উৎপাদন খরচও। কিন্তু খরার প্রভাবে বাড়তি সেচ দিয়েও কৃষকরা বোরো ধানের স্বাভাবিক উৎপাদন ধরে রাখতে পারেননি।

নবীগঞ্জ উপজেলার তারান গাঁও গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান। ৮৪ শতকে জমি করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার অধিকাংশ জমিই খরায় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তিনি দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। ৮৪ শতক জমি করছিলাম সারা বছর খাওয়ার জন্য, কিন্তু সব ধান খরায় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এই জমি কাইট্টাই কি করমু। কাটলে যে ধান পাইমু ইতা কামলা, মাড়ার মিশিনেই নিবগা। আমি কিতা পাইমু?’

গন্ধা গ্রামের আক্কাস মিয়া বলেন, ‘এ বছর এক ফোঁটা বৃষ্টিও হইছে না। ২২৪ শতক ক্ষেত করছিলাম। বৃষ্টি না হওয়ায় সব ক্ষেত নষ্ট হই গেছে। এর অর্ধেক কাটাইতাম পারতাম না। বাকি অর্ধেক কিছুটা কাডানু যাইব।’

বানিয়াচং উপজেলার মাখালকান্দি গ্রামের কৃষক গৌড়চাঁদ বলেন, ‘চৈত মাসের প্রথমে একটা বৃষ্টি হইলে ধানের খুব বালা হয়। তাড়াতাড়ি ধানের তোড় বাইর হয়। ই বছর বৃষ্টি হইছে না। যে কারণে ধানের তোড় বাইর হইতেছে না। মাঝে মাঝে একটা দুইটা বাইর হইতেছে ইতাও রইদের লাগি ঝইলা যাইতেছে।’

আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমি ৪২০ শতকে জমি করছি। অন্য বছর এই জমি থেকে ৩০০ মণ ধান পাইতাম। ইবার সব ধান রইদে ঝইলা গেছে। এখন এক শ মন ধানও পাইমু কি না জানি না।’

সরেজমিনে বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা যায়, তীব্র খরা এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে সেচ দিতে অতিরিক্ত খরচ যোগ হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় পর্যাপ্ত পানিও মিলছে না। হাওরের নদী-ডোবাগুলোও শুকিয়ে গেছে। যে নদী ও ডোবা থেকে অন্য বছর সেচ দেয়া হতো, সেগুলো এবার ফেটে চৌচির হয়ে রয়েছে।

বোরো জমিতে পানি থাকাতো দূরের কথা, অধিকাংশ জমির মাটি শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। লাল রং ধারণ করার পাশাপাশি শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের গাছও। বিভিন্ন হাওরের ডোবাগুলোর তলদেশের পানি পর্যন্ত শুকিয়ে মাটি ফেটে গেছে। নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কোন কোন জমি গরু দিয়ে খাইয়ে দিচ্ছেন চাষিরা।

তবে পানির সংকট, বৃষ্টির অভাব ও অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বোরো জমি নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করলেও তেমন ক্ষতি হবে না বলে জানান হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যোন) নয়ন মণি সূত্রধর।

বলেন, ‘হাওর কিংবা নন হাওর। সব জায়গার বোরো জমিতে রোদের প্রখরতা বেশি থাকে। কারণে সেখানে বাড়িঘর বা গাছপালা থাকে না। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তাপমাত্রা হলে জমির ক্ষতি হয়। এ ছাড়া যখন জমিতে ফ্লাওয়ারি শুরু হয়, তখন অতিরিক্ত তাপমাত্র হলে স্ত্রী ফুলের যে ভেজা জায়গাটি আছে সেটি শুকিয়ে যায়। এতে পরাগায়ণ সঠিকভাবে হয় না। ফলে ধানে বেশি চিটা হয়।’

নয়ন মণি বলেন, ‘রোববার সিলেট থেকে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হবিগঞ্জে এসেছিলেন। আমরা তাদেরকে নিয়ে মাঠ পরিদর্শন করেছি। পানির অভাবে কিছু ক্ষতি হলেও এ বছর তেমন খরা পরেনি। এ কারণে যে পরিমাণ ক্ষতি হওয়ার ছিল সে পরিমাণে ক্ষতি হবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর