বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সচ্ছলদের হাতেও ‘ফ্যামিলি কার্ড’

  •    
  • ২৮ মার্চ, ২০২২ ১৯:০৭

উপকারভোগী এক কোটি পরিবারের তালিকায় করোনাকালীন নগদ সহায়তা পাওয়া ৩০ লাখ নাম সরাসরি স্থান পেয়েছে। ৫৭ লাখ ১০ হাজার পরিবার যৌথভাবে বাছাই করেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের কমিটি। এর বাইরে ঢাকা সিটি করপোরেশনে ১২ লাখ এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনে ৯০ হাজার পরিবার রয়েছে।

প্রয়োজন অনুযায়ী সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী বাছাই ও তাদের তালিকা তৈরি দেশে নতুন নয়। কিন্তু প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। দেখা দেয় নানা অসংগতি। এতে সরকার হয় বিব্রত। সুবিধাভোগী বাছাইয়ের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনও অনেক সময় সম্ভব হয় না।

রমজান মাস সামনে রেখে দেশে প্রথমবারের মতো ফ্যামিলি কার্ড বিতরণের উদ্যোগেও নানা অসংগতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, যাচাই-বাছাই করেই ফ্যামিলি কার্ডের সুবিধাভোগীদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সামান্য কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও সার্বিক বিচারে তালিকা যথার্থ হয়েছে।

তবে নিউজবাংলার কাছে যে তথ্য এসেছে তা প্রশাসনের বক্তব্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেমন ময়মনসিংহ শহরের আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টার এলাকার চার তলার বাড়ির মালিক আব্দুল জব্বার কার্ড পেয়েছেন। তার মতোই ময়মনসিংহে এই কার্ড পেয়েছেন হামিদ উদ্দিন রোডের বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী আব্দুল জলিল ও তার স্ত্রী।

দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম অস্বাভাবিক। এর মাঝেই আসছে রমজান মাস। রমজানকে উপলক্ষ করে বাজারে আরও অস্থিরতার শঙ্কায় ভোক্তারা। এ অবস্থায় সরকার দেশের নিম্ন আয়ের ও দরিদ্র মানুষের জন্য ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। কার্ডধারীরা বাজার মূল্যের চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি) নিয়োজিত ডিলার থেকে তেল, ছোলা, চিনি, খেজুর ও মসুর ডাল কিনতে পারছেন। এতে সরকারকে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা বাড়তি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর মানবিক এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারবে। এর সুবাদে স্থানীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের চাহিদা কমে আসবে। ফলে বাজারে এসবের দাম স্থিতিশীল থাকবে।পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮ মার্চ থেকে জেলাগুলোতে পণ্য পাঠানো শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রায় প্রতিটি জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য পৌঁছে গেছে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি জেলায় খাদ্য অধিদপ্তর, বিএডিসি ও নির্ধারিত গুদামে টিসিবির পণ্য গ্রহণ শেষে প্যাকিং চলছে।

ফ্যামিলি কার্ড প্রদানে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীই তালিকায় জায়গা পেয়েছে। সামর্থ্যবানের মতো বিতর্কিত কোনো ব্যক্তির এখানে জায়গা হয়নি। যৌথভাবে তালিকা তৈরির কাজটি করেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন। ফলে এখানে কারও একচ্ছত্র আধিপত্যের সুযোগ ছিল না।

জানা গেছে, উপকারভোগী বাছাইয়ের লক্ষ্যে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তিন স্তরের পৃথক কমিটি কাজ করেছে। গ্রামপর্যায়ে উপকারভোগীদের প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজটি করেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নিয়ে গঠিত কমিটি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কমিটি স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে সুপারিশকৃতদের নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করেছে। সবশেষে চূড়ান্ত বাছাই হয়েছে জেলা পর্যায়ে। এখানে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বাধীন কমিটির সন্তুষ্টিতে তালিকা অনুমোদন পেয়েছে।

সুবিধাভোগী বাছাইয়ে স্বচ্ছতা নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান। তিনি বলেন, ‘সুবিধাভোগী বাছাইয়ের কাজটি অতি স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়েছে। এখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন যৌথভাবে সমন্বয় করে বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুবিধাভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তালিকায় টার্গেট করা মানুষের নামই জায়গা পেয়েছে। সুবিধাভোগীদের পুরো তালিকা (ছবিযুক্ত নাম-পরিচয় ও পেশাসংবলিত) জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।’

সুবিধাভোগী যারা

রংপুর জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হওয়া তালিকা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের দরিদ্র্যপীড়িত নিম্ন আয়ের মানুষই এতে স্থান পেয়েছে।

ফ্যামিলি কার্ডের তালিকায় থাকা এসব মানুষের বেশির ভাগই দরিদ্র কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, গৃহিণী ও স্বল্প আয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এদের বাইরে সুনির্দিষ্ট পেশা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে- রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দর্জি, নাপিত, মুচি, জেলে, মাঝি, ধোপা, অটোচালক, দোকান কর্মচারী, বেসরকারি কর্মচারী, ট্রাকচালক, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, মোটর শ্রমিক, নৌ শ্রমিক, ইটভাটার শ্রমিক, রাইস মিল শ্রমিক, গ্রামপুলিশ, ঝাড়ুদার, আনছার সদস্য, মুয়াজ্জিন, খতিব, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ইলেকট্রিশিয়ান, টিভি মেকার, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, পল্লি চিকিৎসক, স্টোর লেবার, বুট মেকার ও ছাত্র-ছাত্রী। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায়ে তালিকাভুক্ত এসব ব্যক্তির ছবিযুক্ত নাম, পরিচয়, বয়স, পেশা ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে।

একই নমুনা দেখা গেছে কুষ্টিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, জামালপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায়। তবে জেলার ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী কিছু সুনির্দিষ্ট পেশার মানুষ টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ‘জেলায় সিটি করপোরেশনের আওতায় ফ্যামিলি কার্ড সুবিধা পেয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার এবং জেলা পর্যায়ে ৮৬ হাজার। এসব সুবিধাভোগীকে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় নির্বাচন করেছি। এই সুবিধাভোগী নির্বাচনে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে তিন স্তরের কমিটি কাজ করেছে।’

আরও কয়েকটি জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকেও অভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে।

যেভাবে সুবিধাভোগী বাছাই করা হয়

উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসংখ্যা ও দারিদ্র্য সূচক বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

টিসিবির কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, এক কোটি লোকের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম বিবেচনায় নেয়া হয়েছে করোনাকালীন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে নগদ সহায়তা দিতে প্রণীত ডাটাবেজকে। ওই তালিকায় থাকা ৩০ লাখ পরিবারকে সরাসরি টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় নেয়া হয়েছে। এক কোটি পরিবারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাকি সুবিধাভোগী বাছাইয়ে বড় কাজটি করেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসন। এ তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে সারা দেশের ৫৭ লাখ ১০ হাজার পরিবার। ইতোমধ্যে তাদেরকে ফ্যামিলি কার্ড দেয়া হয়েছে। এর বাইরে ঢাকা সিটি করপোরেশনে ১২ লাখ এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনে ৯০ হাজার উপকারভোগী রয়েছে। টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে তাদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হবে।

যেভাবে পণ্য পাচ্ছে উপকারভোগীরা

ভর্তুকি দামে টিসিবির পণ্য কিনতে সুবিধাভোগী প্রতিটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দেয়া হয়েছে।

টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, উপকারভোগীরা ফ্যামিলি কার্ড দেখিয়ে নিজ নিজ এলাকায় টিসিবি নিয়োজিত ডিলার থেকে পাঁচটি পণ্য বাজার মূল্যের প্রায় অর্ধেকে কিনতে পারবেন। ইতোমধ্যে গত ৬ মার্চ থেকে রাজধানীতে ১৫০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। এর বাইরে রাজধানীসহ দেশের সব মহানগরী, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উপকারভোগী পরিবারের কাছে ভর্তুকির পণ্য পৌঁছে দিতে ২০ মার্চ থেকে একযোগে বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

উপকারভোগীদের কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে দুই ভাগে। প্রথম দফায় এক কোটি পরিবার ১১০ টাকা লিটার দরে দুই লিটার সয়াবিন, ৫৫ টাকা দরে দুই কেজি চিনি ও ৬৫ টাকা দরে দুই কেজি মসুর ডাল কিনতে পারবে। তা চলবে রমজানের আগে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফায় বিক্রি কার্যক্রম শুরু হবে ৩ এপ্রিল। শেষ দফায় অভিন্ন দাম ও পরিমাণে আগের তিনটি পণ্যের সঙ্গে বিক্রি করা হবে ২ কেজি করে ছোলা।

এসব পণ্য সুশৃঙ্খলভাবে বিক্রি করতে ৯টি তদারক দল, একটি উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় দল ও একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

ভোক্তা অধিকার-সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের মাঝে টিসিবির পণ্য বিতরণের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। এর প্রভাব দুভাবে পড়বে। এটা ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় ভোক্তা পর্যায়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। অন্যদিকে এক কোটি পরিবার মানে পাঁচ কোটি লোক এর সুফল ভোগ করবে। ফলে রমজানে চাহিদাযোগ্য এসব পণ্যের বাজারে একটি স্থিতিশীলতা থাকবে।

এ বিভাগের আরো খবর