বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডলফিনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে কবে

  •    
  • ২৮ মার্চ, ২০২২ ১৮:০৫

বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপরিচালক কামরুল ইসলাম জানান, ভেসে আসা এসব ডলফিন বঙ্গোপসাগরের অগভীর অঞ্চলে থাকে। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর পর এরা অক্সিজেনের জন্য ভেসে ওঠে। তখন দুর্ঘটনায় এগুলো মারা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কুয়াকাটায় সমুদ্র সৈকতে আবারও পাওয়া গেছে একটি মৃত ডলফিন। চার ফুট দৈর্ঘ্যের এই ডলফিনের শরীরের অর্ধেকেরও বেশি চামড়া উঠে গেছে।

সৈকতের কিছুটা পূর্বে জাতীয় উদ্যানের পাশে সোমবার সকালে স্থানীয়রা এটি পড়ে থাকতে দেখে।

এ নিয়ে গত তিন মাসে কুয়াকাটা সৈকতে পাঁচটি মৃত ডলফিন পাওয়া গেল। গত বছর এখানে পাওয়া যায় ২৩টি মৃত ডলফিন।

গত সপ্তাহে চারটি বড় আকারের মৃত কচ্ছপ কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পাওয়া যায়। এ ছাড়া কয়েক মাসে হাজারও মৃত জেলিফিশ ভেসে আসে এখানে।

তবে এখনও সংশ্লিষ্ট কেউ এসব প্রাণীর মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানাতে পারেনি। তারা শুধু অনুমাননির্ভর কারণের কথাই জানাচ্ছেন।

সোমবার ভেসে আসা ডলফিনের বিষয়ে কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য কে এম বাচ্চু মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালে মৃত ডলফিনটি দেখতে পাই। গত দুই বছরে যতগুলো মৃত ডলফিন সৈকতে ভেসে আসতে দেখেছি তার সব কয়টির শরীরে হয় আঘাতের চিহ্ন ছিল অথবা জাল প্যাঁচানো ছিল।

‘তবে আজকের এই ডলফিনটির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্নও পাওনা যায়নি। শরীরের কোথাও জাল প্যাঁচানো ছিল না। তা ছাড়া এটির শারীরিক গঠনেও ছিল ভিন্নতা। চামড়া উঠে যাওয়ায় এক রকম ফ্যাকাসে রং হয়ে গেছে। হয়তো অল্প সময় আগেই এর মৃত্যু হয়েছে। একে বনের মধ্যে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।’

ইকো-ফিশ-২ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতির বরাতে বাচ্চু বলেন, ‘ইন্টারনেটের ছবির সঙ্গে মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে এটি পোর‌পোইজ প্রজাতির ডলফিন।’

কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির টিম লিডার রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। গত বছরের মতো এবারও কুয়াকাটায় মৃত কচ্ছপ ও ডলফিন ভেসে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো জেলেদের জালে, বড় সামুদ্রিক যানের ধাক্কায় ও বয়স বেশি হওয়ায় মারা যাচ্ছে। আমরা বিষয়টা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।’

বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপরিচালক কামরুল ইসলাম জানান, ভেসে আসা এসব ডলফিন বঙ্গোপসাগরের অগভীর অঞ্চলে থাকে। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর পর এরা অক্সিজেনের জন্য ভেসে ওঠে। তখন দুর্ঘটনায় এগুলো মারা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কামরুল বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসা মৃত ডলফিনগুলো হাম্পব্যাক প্রজাতির। ডলফিনের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে প্রচুর গবেষণা দরকার। এদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বের করতে হবে। পানির ভারসাম্য ঠিক আছে কি না তা খুঁজে বের করতে হবে। মৎস্য ইনস্টিটিউটের পক্ষে এটা করা সম্ভব।’

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী মনে করেন, সাগরের পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে এসব ডলফিন মারা যেতে পারে। এ ছাড়া সাগরে খাবারের অভাব ও অক্সিজেন স্বল্পতার কারণেও মৃত্যু হতে পারে।

অধ্যাপক আলী বলেন, ‘হঠাৎ করে সাগরে কী এমন এমন হলো যে ডলফিন মারা যাবে? আপনি দেখেন, লাখ লাখ জেলিফিশ মারা যাচ্ছে। কয়েকটি বড় আকারের কচ্ছপ মারা গেল। সাগরের নির্দিষ্ট কোনো অংশে অক্সিজেনের স্বল্পতা, খাদ্য সংকট বা জলবায়ুর প্রভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।’

অনেকে দূষণের কারণে প্রাণীর মৃত্যুর ধারণা করলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিটি পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণগত মান ভালো ও গ্রহণযোগ্য মাত্রায় পেয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, ডলফিনগুলো দূষিত পানির কারণে মারা যায়নি।

‘বৃষ্টি না হওয়ায় সাগরের কোনো কোনো অংশে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বর্ষা শুরু হলে সাগরের লবণাক্ততা কমে যাবে। তখন প্রাণীর অকালমৃত্যু কমে যাবে’, বলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মাসুদুর রহমান।

কী ছিল ২০২০ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ জানান, ২০২০ সালে ডলফিন মারা যাওয়ার কারণ উদঘাটনে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। কমিটি পাঁচটি কারণের কথা জানায় তার মধ্যে দুটিকে ডলফিনের মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

ওই দুই কারণ হলো, সাগরে জেলেদের জালে আটকে যাওয়া আর বড় জাহাজের পাখায় আঘাত পাওয়া।

অনেকে দূষণের কারণে প্রাণীর মৃত্যুর ধারণা করলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিটি পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণগত মান ভালো ও গ্রহণযোগ্য মাত্রায় পেয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, ডলফিনগুলো দূষিত পানির কারণে মারা যায়নি।

তদন্ত কমিটি মৃত ডলফিনের ময়নাতদন্ত করার কথা বললেও তা এখনও হয়নি বলে অভিযোগ এই মৎস্য কর্মকর্তার। তিনি জানান, ডলফিনের ময়নাতদন্ত করার মতো যন্ত্রপাতি ও লোকবল মৎস্য অধিদপ্তরের নেই।

এমদাদুল্লাহ বলেন, ‘ডলফিনের পোস্টমর্টেম বন বিভাগ ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের করার কথা। মৎস্য অফিসের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। আমরা তাদেরকে বলেছি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কেন প্রাণীগুলো এভাবে মারা যাচ্ছে। তারপর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মৃত ডলফিনের স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ জানা যাবে না। এর আগে আরেকটি মৃত ডলফিনের স্যাম্পল আমরা মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠিয়েছি। সেটির রিপোর্ট এখনও আসেনি।

‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। তবে সেই কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।’

এ বিভাগের আরো খবর