দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশকে স্থিতিশীল রাখতে র্যাবসহ দেশের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না থাকলে উন্নয়ন সম্ভব নয়।
ঢাকায় র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে সোমবার সকালে বাহিনীর ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিভিন্ন দেশকে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হচ্ছে, সেখানে যেন জঙ্গিবাদ না থাকে, সন্ত্রাস না থাকে, কোনো রকম অপরাধ না থাকে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে কিন্তু বিনিয়োগ হয়। বিনিয়োগের পূর্বশর্তটাই হচ্ছে সুশৃঙ্খল সামাজিক ব্যবস্থা। সেটাই আমাদের দেশে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি।’
এ ক্ষেত্রে র্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি বলেন, ‘আমাদের এই অবস্থাটা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, যেন বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে পারি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এটা মনে করি, দেশ ও জাতির উন্নয়নে আপনাদের অবদান অপরিসীম। দেশের আইনশৃঙ্খলা যদি সুস্থির না থাকে, দেশ যদি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদমুক্ত না থাকে, দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয় না। আজকে সবার প্রচেষ্টায় আমরা দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি বলেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি মেনে জনগণের সেবক হিসেবে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন। সেটাই আমি আশা করি। আসুন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই।’
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে জঙ্গিবাদ, যা শুধু আমাদের দেশ নয়, সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা একটি বিরাট সমস্যা ছিল। এই জঙ্গিবাদ দমনেও যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে আমাদের এই বাহিনী। কাজেই এই বাহিনীর সদস্যদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
হলি আর্টিজানের জিম্মিদশা অভিযানে বাংলাদেশের সফলতার গল্প ওঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটাই ঘটনা ঘটেছিল হলি আর্টিজানে। এরপর আর তেমন কোনো ঘটনা ঘটতে পারেনি এই কারণে যে, র্যাবসহ আমাদের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর ছিল।’
মাদক নিয়ন্ত্রণেও র্যাবের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে এখন কক্সবাজারে, যেখানে আমরা ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। সেই সঙ্গে সেখানে মাদকের পাচার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। সে জন্য এখন আমরা কক্সবাজারে একটা পূর্ণাঙ্গ ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করে দিচ্ছি, যাতে ওই অঞ্চলের মানুষ অন্তত মাদকের হাত থেকে রক্ষা পায়। কারণ এটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।’
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চরমপন্থিদের ও সুন্দরবনের জলদস্যুদের আত্মসমর্পণে র্যাবের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের বনদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে এবং আমরা তাদের পুনর্বাসন করেছি। তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন তারা বেশ ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারছে। সে ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুন্দরবনে আমাদের যে বিশাল সম্পদ, সেই সম্পদ আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হতে পারে। ওই এলাকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছে এখন।’
চোরাকারবারি, জাল মুদ্রা, ভুয়া পাসপোর্ট প্রস্তুতকারী, অবৈধ ভিওআইপি, ডাকাত, ভেজালবিরোধী অভিযানে র্যাবের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন ‘এখন রোজা সামনে রেখে কিছু মজুতদারি, কালোবাজারির কারবার আছে বাংলাদেশে। সেগুলোর বিরুদ্ধেও আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা অভিযান চালাচ্ছেন।’
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে এবং করোনা মহামারিতে র্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, র্যাবকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে তার সরকার।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইতিমধ্যে ত্রিমাত্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি, যার ফলে যেকোনো ঘটনা ঘটলেই খুব দ্রুত যেন তারা অ্যাকশন নিতে পারে, কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে, সে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা সবার জন্যই করছি; কোনো বাহিনী বাদ নেই। সবাইকে আমরা শক্তিশালী করে দিচ্ছি।
‘তারপরেও আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশ। জল, স্থল, আকাশপথে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করার সক্ষমতা যেন আমাদের প্রত্যেকটা বাহিনীর থাকে, সে ব্যাপারে আমরা কার্যকর ভূমিকা নিয়েছি।’
অনুষ্ঠানে র্যাবের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে গাজীপুরে র্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল কমপ্লেক্স, ঢাকার মোহাম্মদপুরে র্যাব-২ ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্স কমপ্লেক্স, কেরাণীগঞ্জে র্যাব-১০ ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্স কমপ্লেক্স, রংপুরে র্যাব-১৩ ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্স কমপ্লেক্স, ময়মনসিংহে র্যাব-১৪ ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্স কমপ্লেক্স, বঙ্গবন্ধু কর্নার সংবলিত র্যাব হেরিটেজ মিউজিয়ামের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই সময় ঢাকার খিলগাঁওয়ে র্যাব-৩ ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্স কমপ্লেক্সের ভিতও স্থাপন করেন শেখ হাসিনা।