বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ আখ্যা দেয়ার পর ঢাকার পুলিশ কমিশনার যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তার জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সত্য বললে গায়ে জ্বালা ধরে।’
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলামের নাম উল্লেখ না করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলবেন না, অশালীন কথা বলবেন না, শিষ্টাচার বিবর্জিত কথা বলবেন না। এই দেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না।’
রোববার বিকেলে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন ফখরুল।
গত মার্চ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা নিয়ে নতুন তথ্য দিতে থাকা বিএনপি নেতা এদিনও বিষয়টি নিয়ে নানা কথা বলেন। দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ফখরুল বলেন, ‘আরেকটা কথা বললে ওদের গায়ে জ্বালা ধরে। স্বীকার করতে হবে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা।
‘এই চট্টগ্রামে, এইখানে ক্যান্টনমেন্টে তিনি দুটি ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে যখন ছিলেন, ২৫ মার্চ রাতে জিয়াউর রহমান সাহেব যখন বাইরে গিয়েছিলেন, তখন তার কোম্পানির ব্যাটালিয়নকে নিরস্ত্র করার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এসেছিল।
‘কিন্তু সে সময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অস্ত্র নিতে দেননি। তিনি বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান না আসলে ওরা অস্ত্র দেবে না। তারপর জিয়াউর রহমান কিন্তু আর বাসায় ফিরতে পারেননি। তিনি সেখানে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সেই কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।’
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রাম থেকে বেগম খালেদা জিয়া ঢাকায় ফিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হয়েছিলেন।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনানিবাসে দুই পুত্রকে নিয়ে অবস্থান করা খালেদা জিয়ার মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা নিয়ে বিএনপি কখনও গর্বভরে কিছু বলেছে এমন নয়, বরং রাজনীতিতে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের এ বিষয়ে নানা সময় কটাক্ষকর বক্তব্যেও বিএনপি কোনো জবাব দেয়নি।
তবে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে বিএনপি হঠাৎ করেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নানা কটাক্ষের পর বিএনপি নেতারা কয়েক মাস এ নিয়ে আর কিছু বলেননি। এবার স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে আবার এই কথাগুলো তুলেছেন ফখরুল।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পাশাপাশি ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলামও বিএনপির এই দাবি নিয়ে কথা বলেছেন শনিবার। পুলিশের একটি আয়োজনে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা পার্টির সিনিয়র নেতারা বলা শুরু করেছেন, তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা। এটা হাস্যকর। যাকে তার স্বামী পরিত্যক্ত করেছিল পাকিস্তানের ওখানে কী করছ...। সেটা আর না বলি। কিন্তু সত্য জিনিস যেটা সেটা কিন্তু দিবালোকের মতো স্পষ্ট।’
পুলিশ কর্মকর্তার এই বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাকে সাবধান করে দেন ফখরুল। বলেন, ‘আপনারা ভেবেছেন সারা জীবনই এভাবে আওয়ামী লীগ সরকার থাকবে, আর আপনাদের সমস্ত অন্যায়গুলো প্রশ্রয় দিয়ে যাবে? সেটা হবে না। সাবধান হয়ে যান।
‘ইতোমধ্যে তো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে র্যাবের ওপরে৷ এখন অপেক্ষা করেন আরও কী কী আসে। এভাবে চরম নিষেধাজ্ঞা আসবে আপনাদের ওপরে। এই জনগণ আপনাদেরকে বেআইনি ঘোষণা করবে৷
‘আমরা সাবধান করে বলছি, দেশনেত্রী সম্পর্কে, আমাদের নেতা তারেক জিয়া সম্পর্কে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া সম্পর্কে কটূক্তি করলে এই দেশবাসী তাদেরকে ক্ষমা করবে না।’
নতুন মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা
দেশে ‘নতুন মুক্তিযুদ্ধের’ ঘোষণাও দেন ফখরুল। বলেছেন, এই যুদ্ধ গণতন্ত্রকে ‘মুক্ত করতে’, তাদের দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের সকলের সঙ্গে একসঙ্গে ঘোষণা করতে চাই, আজ থেকে এই বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য, দেশনেত্রীকে মুক্তি করার জন্য নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। আসুন, আমরা সবাই এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি।’
সব রাজনৈতিক দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি নির্দলীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করে নতুন সরকার গঠনের প্রত্যয়ের কথাও বলেন বিএনপি নেতা।
ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ
মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগও আনেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘যখনই তারা ক্ষমতায় এসেছে, তখনই ইতিহাসকে বিকৃত করেছে।
‘মূল লক্ষ্য ছিল জিয়াউর রহমানকে মুছে ফেলা। কিন্তু জিয়াউর রহমানকে চেষ্টা করলে মুছে ফেলা যায় না। জিয়াউর রহমান আমাদের হৃদয়ে আছেন।’
জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন- এমন দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘হ্যাঁ, অবদান অনেকের আছে, আমরা কারও অবদান অস্বীকার করি না। প্রত্যেকের অবদান স্বীকার করতে হবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘তারা সমস্ত ইতিহাসকে এক ব্যক্তির ইতিহাস গড়ে তুলতে চায়।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে থাকার বিষয়টি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সেই ব্যক্তি তো দেশেই ছিল না, পাকিস্তান ছিল। বাকিরা সব কলকাতায় ছিল। তো এখানে ছিল কে? প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সৈনিকেরা যুদ্ধ করেছে ৷’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দীন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।