‘বিকাশে দুই হাজার টাকা দিয়ে বলেছিল দুধ কিনে রাখতে। বাড়িতে এসে দুধ নিয়ে যাবে। আমি কথাও বলে রাখছি। সকালে শুনলাম বাপকে মেরে ফেলছে। ওই দুধ আজ দিয়ে যাবে, কে খাবে সেই দুধ। আমার বাপকে যে মারছে তার বিচার চাই, বিচার।’
কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকায় রোববার ভোরে দুর্বৃত্তদের হামলায় ছুরিকাঘাতে নিহত আহমেদ মাহী বুলবুল নামের দন্ত চিকিৎসকের মা বুলবুলি বেগম।
রংপুরের ভগিবালাপাড়ায় রোববার দুপুরে নিহত এ চিকিৎসকের বাড়ি গেলে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় তার।
তিনি জানান, বুলবুলের দুই-এক দিনের মধ্যেই বাড়িতে আসার কথা ছিল। বাড়িতে এসে সেই দুধ নিয়ে যেত। বাড়ির দুধ খুব পছন্দ ছিল তার।
ছেলের খুনি যেই হোক, তাকে গ্রেপ্তারের দাবি মায়ের।
বুলবুলের ছোট বোন লাভলী সামাদ বলেন, ‘ভাই ছিল আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ভাই যে টাকা দিত সেই টাকাই ছিল ভরসা।’
তিনি বলেন, ‘বুলবুল ডাক্তারির পাশাপাশি ঠিকাদারি করতেন। ঠিকাদারি কাজে আজ নোয়াখালী যাওয়ার কথা ছিল। কী থেকে কী হলো আমরা কিছু বুঝতে পারছি না। আমাদের পরিবার এবং তার দুই শিশুসন্তানের কী হবে।’
বুলবুলের ছোট ভাই বকুল বলেন, ‘আমার ভাই বলে বলছি না। তার মতো লোক হয় না। আমার জানা মতে, ভাইয়ের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে তা বুঝতে পারছি না।’ তিনি ভাইয়ের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চান।
দন্ত চিকিৎসক বুলবুল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
প্রতিবেশী আব্দুস সালাম বলেন, ‘ছেলেটা খুব ভদ্র ছিল। কোনো ঝামেলায় জড়াতে দেখিনি। মাঝেমধ্যেই বেড়াতে আসত। এত বড় দুর্ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। ভালো লোকদের কেন এমন হয়। আমরা বিচার চাই।’
নিহত বুলবুলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। চাকরি করাকালীন ১৯৯৯ সালে মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল।
১৯৯৭ সালে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকার মগবাজারে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে প্রাকটিস শুরু করেন।
দিনাজপুরে বিয়ে করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শেওড়াপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন বুলবুল। দেড় বছর বয়সী ছেলে ও সাত বছরের মেয়ে রয়েছে তার।