একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়সূচির শিরোনামে ‘দ্য ফল এসকে মুজিব রেজিম’ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত অন্যান্য কনটেন্ট দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সরকার ফল করেনি, বঙ্গবন্ধুকে ফেলে দেয়া হয়েছে। এ পার্থক্য যদি আমাদের শিক্ষাক্রম প্রণেতারা না বোঝেন, তাহলে সেটি হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।’
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষাক্রমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এত লেখা, এত বই আমার চোখে পড়েছে। এই মানুষগুলো কি আসলেই তাদের অন্তরে বঙ্গবন্ধুকে লালন করছেন নাকি আমি আছি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক এই ঘোষণা দিয়ে তারা লিখছেন? আমার কাছে মনে হয়েছে, বেশির ভাগ লেখা তৈরি হয়েছে একটা ব্যানার তুলে ধরার জন্য যে, আমিও আছি, আমাকেও মূল্যায়ন করুন।
‘আমি এমন মানুষকেও জানি, যেখানে বঙ্গবন্ধুর ওপর পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা আবেগধর্মী লেখা লিখিয়েছেন, কিন্তু তার জীবনাচরণের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই। বঙ্গবন্ধুকে ব্যানারে তুলে ধরা আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মানসিকতার পরিবর্তন করা এক নয়। নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জীবিত করতে হলে শিক্ষাক্রমে বঙ্গবন্ধুকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আবার বঙ্গবন্ধুকে পড়ানো হবে কিন্তু অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং বঙ্গবন্ধুর যথাযথ দর্শন সম্পর্কিত গ্রন্থ রেফারেন্স গ্রন্থের তালিকায় থাকবে না, এমনটিও হতে পারে না।’
ঢাবির এ অধ্যাপক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন, দর্শন, আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য শিক্ষাক্রমের গুরুত্ব অপরসীম। একটি কোর্সে বঙ্গবন্ধুকে অন্তর্ভুক্ত না রেখে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর নামে কোর্স খোলা প্রয়োজন।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রবন্ধটির লেখক ড. মুহম্মদ মনিরুল হক। তিনি বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষাক্রমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভুক্তি, অবস্থান এবং প্রতিফলন যে সন্তোষজনক নয়, সে বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমে বঙ্গবন্ধু যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি জানিয়ে প্রবন্ধকার বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাক্রমের আলোকে শেখানো কার্যক্রম চালু থাকলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই এখন পর্যন্ত পূর্বের প্রথাগত সিলেবাস ও পাঠ্যসূচি থেকে বের হতে পারেনি।’
গবেষকের উপস্থাপিত তথ্যে জানা যায়, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মোট ২৬০টি কোর্স থাকলেও বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো কোর্স নেই। অন্য শিরোনামের কোর্সে বঙ্গবন্ধুকে উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র ১১টি বিষয়বস্তুতে, যা মোট কোর্স সংখ্যার ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ।
প্রাসঙ্গিক হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ বিভাগের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা রেফারেন্স গ্রন্থের তালিকায় অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থের নাম নেই।
সেমিনারের প্রধান আলোচক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে মুখে কতটুকু উচ্চারণ করি আর ইতিহাসের পাতায় কতটুকু লালন করি, প্রবন্ধকার তা দেখানোর প্রয়াস করেছেন। উৎসবের আনুষ্ঠানিকতায় না রেখে বঙ্গবন্ধুকে সত্যিকারভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ গবেষণার গুরুত্ব অনেক।’
উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম মতিউর রহমানের সঞ্চালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষক, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।