বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাহাড়ে বোরো মৌসুমে বড় বাধা সেচ সংকট

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৭ মার্চ, ২০২২ ১৩:১৩

রুতান চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড়ের ছড়ায় আগে সবসময় পানি থাকত। এখন শুধু বৃষ্টি হলে ছড়ায় পানি থাকে। গত কয়েক বছর ধান পরিপক্ক হওয়ার আগে সেচ সংকটের কারণে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ কারণে বোরো আবাদ করা ছেড়ে দিয়েছি।’

কৃষি পঞ্জিকায় এখন বোরো ধান আবাদের মৌসুম। আমন ধান সংগ্রহ শেষে ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় বোরো আবাদের প্রস্তুতি। চলে মধ্য ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। বৃষ্টিপাত না থাকায় অনেকাংশেই সেচের ওপর নির্ভরশীল বোরো চাষ। তবে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির চাষীরা প্রতিবছরের মতো এ বছরও চলতি মৌসুমে হতাশ।

জেলায় সেচ সংকটের কারণে চাষাবাদ হয়েছে অর্ধেকের কম জমিতে। শুকনো মৌসুমে পাহাড়ি নদী, খাল ও ছড়ায় পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ঠিকমতো সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর ওপর জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত মূল্যের কারণেও অনেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এতে করে ধানের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য রবি শস্য ও তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা। সেচের আওতাভুক্ত জমিতে চাষ হলেও অধিকাংশ জমি অনাবাদী পড়ে থাকছে ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, খাগড়াছড়িতে সমতল ও পাহাড়ি ঢালু জমিতে চাষযোগ্য আবাদী জমি রয়েছে ৬২ হাজার ৬৭২ হেক্টর। গত আমন মৌসুমে ২৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও বোরো মৌসুমে চাষাবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৪০০ হেক্টরে।

২০১১ ও ২০১২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে পাহাড়ি ছড়ায় অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে পরীক্ষামূলক প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। প্রকল্প এলাকায় ওই সময়ে বোরোসহ অন্যান্য চাষাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে বাঁধের ফলে পাহাড়ি ছড়ার অস্তিত্ব, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র নিয়ে বিরূপ প্রভাব পড়ায় সেটি বাদ দেয়া হয়।

দীঘিনালার বেতছড়ি এলাকার কৃষক মো. নুরুন্নবী বলেন, ‘এ সময়ে মাইনি নদীতে পানিতে থাকে না। এতে করে পানির সংকটে বোরো ধান লাগানো অসম্ভব। দশ বছর ধরে বোরো ধানের মৌসুমে বিকল্প ফসল হিসেবে ভূটা চাষ করছি। এতে মোটামুটি লাভ হচ্ছে।’

জেলা সদরের সাতভাইয়া পাড়ার রুতান চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড়ের ছড়ায় আগে সবসময় পানি থাকত। এখন শুধু বৃষ্টি হলে ছড়ায় পানি থাকে। গত কয়েক বছর ধান পরিপক্ক হওয়ার আগে সেচ সংকটের কারণে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ কারণে বোরো আবাদ করা ছেড়ে দিয়েছি।’

রুমেন চাকমা নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘বোরো আবাদ পাহাড়ের আবহাওয়ার সঙ্গে মেলে না। তেলের অতিরিক্ত মূল্যে সেচ দিয়ে যে ধান হয় তাতে প্রতিবার লোকসান হচ্ছে।’

দীঘিনালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘বোরো মৌসুমে সেচ সংকটে চাষীরা ধানের বিকল্প হিসেবে তামাক কোম্পানিগুলোর লোভে পড়ে ক্ষতিকর এ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সেচ আওতায় বাড়াতে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে নালা নির্মাণ ও পাম্পঘর তৈরির চেষ্টা চলছে। এটি হলে বোরো আবাদ বাড়ার পাশাপাশি তামাক চাষ আরও নিরুৎসাহিত হবে।’

খাগড়াছড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সফি উদ্দিন বলেন, ‘কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সেচ প্রকল্প পাহাড়ে আশানুরূপভাবে কাজ করতে পারছে না। পাহাড়ে সেচ সংকট নিরসনে বিজ্ঞানসম্মত, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও কার্যক্রম দরকার। বৃষ্টির পানিসহ প্রাকৃতিক উৎস ধরে রেখে চাষাবাদ করা গেলে এ অঞ্চলে কেবল বোরো চাষ নয়, কৃষি অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যাবে।’

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি ইনস্টিটিউট (বিনা) খাগড়াছড়ি উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবিএম শফিউল আলম বলেন, ‘দেশের পাহাড়ি ও চরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে সেচ সংকটে চাষাবাদ ব্যাহত হয়। কম সেচ লাগে এমন প্রজাতির ধানসহ বিভিন্ন শস্য বীজ নিয়ে গবেষণা চলছে। এ ধরণের প্রজাতি মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর