বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাস ভাড়ায় জোচ্চুরির সহযোগী বিআরটিএ

  •    
  • ২৬ মার্চ, ২০২২ ১৫:৫৮

গাজীপুরের কাপাসিয়া হয়ে ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের দূরত্ব বিআরটিএ ২২ কিলোমিটার বাড়তি দেখিয়ে যাত্রীদের ঠকানোর সুযোগ করে দিয়েছে । যে রুটে ভাড়া হওয়ার কথা ছিল ২০০ টাকা, সেখানে আদায় করা হচ্ছে ২৭০ টাকা। তাও মালিকদের দাবি, তারা যাত্রীদের স্বার্থের কথা ভেবে ২০ টাকা করে কম আদায় করেন।

আবুল খায়ের খানের বাসা কিশোরগঞ্জের নগুয়ায়। সম্প্রতি ঢাকার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি গেছেন। গাজীপুরের কাপাসিয়া হয়ে বাইকের মাইল মিটারে দূরত্ব এসেছে ৯৮ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার দূরত্ব আসে ৭ কিলোমিটার। এই হিসাবে এই রুটের দূরত্ব হয় ১০৫ কিলোমিটার।

গুগল ম্যাপে এই পথের দূরত্ব দেখাচ্ছে ১০৮ কিলোমিটার।

প্রাইভেট কারে নিয়মিত ভাড়ায় যাত্রী আনা-নেয়া করেন হারিছ উদ্দিন। এই পথের দূরত্ব কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাইটাল থেকে গাজীপুর হয়ে মহাখালীর দূরত্ব ১১০ কিলোমিটারের মতো। আর একরামপুর থেকে নরসিংদীর পাঁচদোনা হয়ে দূরত্ব হয় ১২৫ কিলোমিটারের মতো।’

কিন্তু সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিএ কাপাসিয়া হয়ে পথের দূরত্ব দেখিয়েছে ১৩০ কিলোমিটার আর এ কারণে ভ্রমণ না করেও বাড়তি ২০ বা ২২ কিলোমিটারের ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে বাসযাত্রীদের।

বিআরটিএ কীভাবে দূরত্ব মাপল, সেটি সংস্থাটির কিশোরগঞ্জের কর্মকর্তা কিছুই বলতে পারছেন না।

বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য কেবল রাজধানীতে নয়, দূরপাল্লাতেও যে কম নয়, সেটির প্রমাণ হিসেবেই এই রুটটাকে ধরে নেয়া যায়।

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে বেশ কয়েকটি পথে চলে বাস। এর মধ্যে একটি চলে গাজীপুরের কাপাসিয়া হয়ে। বিআরটিএ কেবল এই ২০ বা ২২ কিলোমিটারের বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুযোগ করে দিচ্ছে তা নয়, তাদের নজরদারির অভাবে নির্ধারিত হারের চেয়েও বেশি হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

বিআরটিএ ঠিক করে দিয়েছে দূরপাল্লায় প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হবে ১ টাকা ৮০ পয়সা। এই হিসাবে এই পথের ভাড়া হওয়ার কথা ছিল ২০০ টাকা (একটি সেতুর টোলসহ)।

বিআরটিএ আরও বলে দিয়েছে, যদি বাসগুলো যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক যাত্রার ব্যবস্থা করে আসন কমায়, তাহলে আনুপাতিক হারে ভাড়া বাড়াতে পারবে। এই নীতিমালার সুযোগ নিয়ে আসন না কমিয়েও বাড়তি হারে ভাড়া আদায় করছে বাস কোম্পানিগুলো।

যদি ১৩০ কিলোমিটারও দূরত্ব হয়, তাহলেও ভাড়া হয় ২৩৪ টাকা। সঙ্গে ৯০ টাকা টোল থাকায় যাত্রীপিছু আরও আড়াই টাকা আসায় ভাড়া হওয়ার কথা বড়জোর ২৩৭ টাকা। কিন্তু ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২৭০ টাকা।

বাড়তি আদায় করেও পরিবহনমালিকদের দাবি, তারা যাত্রীদের কথা ভেবে ২০ টাকা করে কম আদায় করছেন। এই বিস্ময়কর দাবির পেছনে অবশ্য কারণ কী, সেটার ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারছে না।

বিষয়টি নিয়ে বিআরটিএর সহকারী পরিচালক বখতিয়ার উদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘৫১ সিটের ভাড়া ৪০ জনের ওপর ধরলে জনপ্রতি কিছুটা বাড়ে।’

কিন্তু এই রুটে তো ৫২ আসনের বড় বাসগুলো চলে না। ৪০ থেকে ৪২টি আসনেই যাত্রীদের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাহলে আসন কমিয়ে ভাড়া বাড়ানোর যুক্তি তো খাটে না।

বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি, আগামী সমন্বয় মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এটাই একমাত্র রুট নয়

যাত্রীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক খানের তথ্য বলছে, কেবল এই রুট নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটেও বেশি দূরত্ব দেখিয়ে যাত্রীদের পকেট কাটার সুযোগ করে দিচ্ছে বিআরটিএ।

নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরাও দেখতে পাচ্ছি এ রকম অসংখ্য রাস্তায় কিলোমিটার চুরি করা হয়েছে। এ রকম অভিযোগ আমরাও অনেক পেয়েছি। এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বরাবর অভিযোগও করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি চট্টগ্রাম। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-কুমিল্লা এই সড়কগুলোতে আমি যাতায়াত করি। প্রতিটি পথে ঢাকার দূরত্ব বেশি লিখতে দেখেছি।

‘সায়দাবাদ থেকে চট্টগ্রাম ২৬৪ কিলোমিটার হিসাব করে ভাড়া নির্ধারণ করেছিল। আমরা হিসাব করে পেয়েছিলাম ২১০ কিলোমিটার। আমরা অভিযোগ করার পরে তারা ২০ কিলোমিটার কমিয়ে দিয়েছিল।’

গুগল ম্যাপে সায়েদাবাদ থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব দেখাচ্ছে ২৩৬ কিলোমিটার।

বাসমালিকের দাবি, ভাড়া কম নিচ্ছেন

জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক লেলিন রায়হান শুভ্র শাহিন বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, তারা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম আদায় করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিআরটিএ থেকে যে চার্ট পেয়েছি, সে অনুযায়ী প্রতিটি পরিবহনে যাত্রীপ্রতি ১৫-২০ টাকা কম নিচ্ছি।’

তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক পরিবহনশ্রমিক বলেন, ‘ডিজেলই বলেন আর গ্যাসই বলেন, দাম বাড়লে মালিকরা খুশি হয়।’

তিনি বলেন, ‘এ জেলার সকল মালিক ঐক্যবদ্ধ। তারা জানে সবাই মিলে যেই রকম বাসই চলতে দেয়, যাত্রীরাও এর বিকল্প না পেয়ে এগুলো দিয়েই চলাচল করবে। আপনি চাইলে ভালো মানের বাস এনে জেলায় চালাতে পারবেন না।

‘তারা (বাস মালিক সমিতি) যেকোনো সিস্টেমে আপনার পরিবহন বন্ধ করে দেবে। কারণ, একটা ভালো পরিবহন চললে তাদের লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো অচল হয়ে পড়বে।’

কিশোরগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ভাড়া কোথাও চলে না। এই ক্ষেত্রে আমাদের যাত্রীদের যে অধিকার, তা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। ’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাড়া তো বেশিই নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চালকেরা তাদের ইচ্ছামতো স্টপেজ দিয়ে যাত্রী তোলে। অভিযোগ থাকার পরেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

কিশোরগঞ্জের বত্রিশ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ রুটে ছেড়ে যায় বাস। ছবি: নিউজবাংলা

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি বাড়তি ভাড়া আদায় করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

জবাব নেই বিআরটিএ কর্মকর্তার

প্রকৃত দূরত্বের চেয়ে বেশি দূরত্ব দেখিয়ে বাসমালিকদের বেশি টাকা আদায়ের সুযোগ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ কিশোরগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক বখতিয়ার উদ্দিন কিছুই বলতে পারেননি।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আন্তজেলা পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করে হেড অফিস। হেড অফিস থেকে ভাড়া নির্ধারণ করে ওয়েবসাইটে দিয়ে দিয়েছে। ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমার কিছুই করার নাই।’

পরে আরও প্রশ্নের মুখে বখতিয়ার বলেন, ‘দূরত্বের ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাবেন সড়ক ও জনপথ বিভাগে।

সেখানে গিয়ে কথা হয় সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক রোড রয়েছে। কোন পথে দূরত্ব কত সেটা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।’

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে ভাড়া নির্ধারণ কমিটি আছে, তার ১৩ সদস্যের মধ্যে ১২ জনই বাসমালিক, শ্রমিক। একজন আছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি। তারা বাস ভাড়া নিয়ে কোনো কাজ করেন না।

এই কর্মকর্তাও জানান, দূরত্বের হিসাব তারা জেলা থেকে নেন না। ভাড়া নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে হেড অফিস থেকে হিসাব নিয়ে তারা চূড়ান্ত তালিকা করেন।

‘মালিক-প্রশাসন আঁতাত’

যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সব সময় অভিযোগ করে আসছি, দূরত্ব নির্ধারণ সব সময় আঁতাতের মধ্য দিয়ে হয়। কর্মকর্তারা বাসমালিকদের সুযোগ করে দিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেন।’

তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে ভাড়া নির্ধারণ কমিটি আছে, তার ১৩ সদস্যের মধ্যে ১২ জনই বাসমালিক, শ্রমিক। একজন আছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি। তারা বাস ভাড়া নিয়ে কোনো কাজ করেন না।

‘আমরা যারা নিবন্ধিত যাত্রী সংগঠন আছি, আমরা এই জায়গাটাতে বারগেইনিংয়ের সুযোগ চাইলেও দেয়া হয় না।’

যন্ত্রণা দেয় বাসের আসন

মিঠামইন উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন মহাখালী টার্মিনাল থেকে টিকিট নিয়ে অনন্যা পরিবহনে এসে নামেন গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাই জানডা শেষ। দাঁড়ান একটু টানাটুনা দিয়া লই। লক্কড়-ঝক্কড় বাসে বইয়া থাইক্যে শরীরের বারোটা বাইজ্যে গেছে গা।’

কী সমস্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিটের ওপরে ফ্যান আছে ঠিহই, সারা রাস্তাত একবার আর চলতে দেখলাম না। চালানির কথা কইছিলাম, হেলপারে কয় মামা গতকালকেও ঠিক আছিন। আজকে সকালে নষ্ট হইছে। যাত্রীডি নামাইয়া গিয়া আগে ফ্যান ঠিক করমু।’

আবদুল্লাহপুরের পর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত পুরোটা রাস্তায় কী পরিমাণ ধুলাবালি এসে শরীরে পড়েছে তার কোনো হিসাব নেই। আপনি ইচ্ছে করলেই জানালা বন্ধ করবেন সেই সুযোগও নাই। কারণ এইসব পরিবহনের বেশির ভাগেরই জানালা নষ্ট।

তোফাজ্জলের পেছনেই ছিলেন নান্দাইল মুসুল্লী এলাকার বাসিন্দা রিমন আহাম্মেদ। তিনি নিজে থেকেই বলেন, ‘ভাই এগুলো জিজ্ঞেস করে কোনো লাভ নাই। এই পরিবহনে যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন কেবল তারাই জানেন কী পরিমাণ ভোগান্তি যে পোহাতে হয়!’

তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহপুরের পর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত পুরোটা রাস্তায় কী পরিমাণ ধুলাবালি এসে শরীরে পড়েছে তার কোনো হিসাব নেই। আপনি ইচ্ছে করলেই জানালা বন্ধ করবেন সেই সুযোগও নাই। কারণ এইসব পরিবহনের বেশির ভাগেরই জানালা নষ্ট।’

মাথায় হাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দেখেন মাথার চুল জট বেঁধে গেছে। কাপড়চোপড়ের কথা নাইবা বললাম।’

তাদের সঙ্গে কথা শেষ করতেই এগিয়ে আসেন আরেক যাত্রী। তিনি ক্ষুব্ধ। কারণ হিসেবে বলেন, ‘এমন সাংবাদিক কত আইল আর গেল। টেলিভিশন আর পত্রিকায় রিপোর্টও করল, কিন্তু পরিবহন সেবার মান তো আর উন্নত হইলো না।

‘এরা (পরিবহনমালিক) এই জিনিসটা খুব ভালো করেই জানে, মিডিয়াতে নিউজ হইলে দুই-এক দিন একটু-আধটু আলোচনা/সমালোচনা হবে, তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।’

ছারপোকাও কামড়ায়। যাদের অ্যালার্জি আছে তারা এই বাসে পাঁচ ঘণ্টা জার্নি করলে বাসায় গিয়ে আরও পাঁচ ঘণ্টা চুলকাবে এইটুকু আমি নিশ্চিত।

ইটনা উপজেলার ছিলনী গ্রামের বাসিন্দা হাসিব রহমান বলেন, ‘এই বাসের সিটগুলো এত কাছাকাছি যে হাঁটু নাড়াচাড়াও করা যায় না। আবার দূরত্বের পরিমাণে ভাড়াও নেয় বেশি।

‘তা ছাড়া ছারপোকাও কামড়ায়। যাদের অ্যালার্জি আছে তারা এই বাসে পাঁচ ঘণ্টা জার্নি করলে বাসায় গিয়ে আরও পাঁচ ঘণ্টা চুলকাবে এইটুকু আমি নিশ্চিত।’

বাসে অতিরিক্ত আসন, যাত্রীদের চলাচলে ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে গতানুগতিক জবাব আসে তার কাছে। বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন বাসগুলো বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সব রুটেই বাড়তি ভাড়া

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে বাস চলে নানা দিক দিয়ে। একরামপুর, বত্রিশ ও গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ে বাসগুলো। একটি রুট গাজীপুরের কাপাসিয়া দিয়ে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হয়ে; একটি নরসিংদীর পাঁচদোনা হয়ে, একটি ভৈরব-নরসিংদী হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত।

একরামপুর ও গাইটাল থেকে নরসিংদী হয়ে যেসব গাড়ি চলে, সেগুলোর দূরত্ব ১২০ থেকে ১২৫ কিলোমিটার। আর ভৈরব হয়ে চলা পথ ঢাকার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত গুগল ম্যাপে ১৩৫ টাকা, বিআরটিএর রুটে ১৪০ কিলোমিটার।

কিন্তু গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে ভৈরব হয়ে ঢাকায় চলা যাতায়াত পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আনিসুজ্জামান রিপন দাবি করেন, ‘কিশোরগঞ্জ থেকে সায়েদাবাদের দূরত্ব ১৫৩ কিলোমিটার।’

একরামপুর থেকে মহাখালী পর্যন্ত চলা উজান-ভাটি আর গাইটাল থেকে মহাখালী পর্যন্ত চলা অনন্যা ও অনন্যা ক্লাসিক ভাড়া নেয় ২৭০ টাকা। আর গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে ভৈরব হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত চলা যাতায়াত পরিবহনের (গেইটলক) ভাড়া নেয়া হয় ৩০০ টাকা। যাতায়াত পরিবহন (লোকাল) ২৫০ টাকা।

করিমগঞ্জ উপজেলার চামড়াবন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি পর্যন্ত চলে দুটি পরিবহন। একটি ভাটিবাংলা পরিবহন, অন্যটির নাম হাওরবিলাস। এই বাসগুলোতে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৩০০ টাকা।

শাহপরান পরিবহন নামের একটি বাস যায় মিরপুর-১৪ নম্বরে। এস ইসলাম নামের একটি বাস চলে কামরাঙ্গীরচরে। যোগাযোগ নামের আরেকটি বাস চলে চাঁনখারপুলে। এগুলো ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে। প্রতিটি বাসেই অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর এর কারণ কৌশলে বাড়তি দূরত্ব দেখানো।

এ বিভাগের আরো খবর