একাত্তরের ২৫ মার্চের বীভৎস গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়। এমনটি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
জাতীয় গণহতা দিবসে দেয়া বাণীতে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তার দেয়া বাণীতে বলেছেন, একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়।
সব বাধা পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ উন্নতি আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপ্রধান। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গঠনে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করার মধ্যদিয়েই আমরা একাত্তরের গণহত্যায় জীবনদানকারী প্রতিটি প্রাণের প্রতি জানাতে পারি আমাদের চিরন্তন শ্রদ্ধাঞ্জলি।’
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারপ্রধান তার দেয়া বাণীতে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তির নীতি অনুসরণ করে সকল প্রকার বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা ও ঔপনিবেশিক মনোভাব পরিহার করলে আমরা সহজেই একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব।’
দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করি।’
জাতীয় গণহত্যা দিবস
১৯৭১ সালের এই দিনে রাতের আঁধারে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। অপারেশন সার্চলাইট নামে তারা মেতে ওঠে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যায়। জাতির জীবনে আসা এই ‘ভয়াল কালরাত’-এ ঘুমন্ত বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা।
জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ এদিন অর্থাৎ ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। তখন থেকে দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ওইদিন পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একযোগে আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। মেশিন গানের গুলিতে, ট্যাংক-মর্টারের গোলা আর আগুনের লেলিহান শিখায় পুরো নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়, তাদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলও। বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ।
ওই রাতে বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান নিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। তার আগেই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতি অর্জন করে স্বাধীনতা।
প্রতীকী ব্ল্যাকআউট
৫১ বছর আগের সেই ক্ষত ভোলেনি বাংলাদেশ। যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয় দিনটি। এদিন পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতাকে প্রতীকী ভাবে স্মরণ করবে দেশ। শুক্রবার রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত এক মিনিটের জন্য বাতি নিভিয়ে সেই কালরাত স্মরণ করবে বাংলাদেশ। কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনাগুলো ব্ল্যাকআউটের আওতামুক্ত থাকবে।
দিনের কর্মসূচি
এ সময় সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় কোনো আলোকসজ্জা করা যাবে না। তবে ২৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে আলোকসজ্জা করা যাবে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সকালে আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হয় গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার। সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণহত্যা নিয়ে ভিডিও চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছে সরকার। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও নাট্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে এক আলোচনা সভা ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রী।’ ২৫ মার্চ কালরাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেড উদযাপন কমিটির আয়োজনে এই আলোচনা সভায় অংশ নেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। মুখ্য আলোচক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সভাপতিত্ব করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।