বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধর্ষণের অভিযোগ: মুখোমুখি ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি ও কেন্দ্রীয় কমিটি

  •    
  • ২৪ মার্চ, ২০২২ ১৫:৩১

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফয়েজউল্লাহ্‌ বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের একজন সদস্যের বিরুদ্ধের ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে কেন্দ্রীয় কমিটি মনে করেছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র ইউনিয়নের এক সদস্যের বিরুদ্ধের ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় কমিটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে এই সিদ্ধান্ত মানছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের কার্যক্রমের স্থগিতের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফয়েজউল্লাহ্‌। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের একজন সদস্যের বিরুদ্ধের ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে কেন্দ্রীয় কমিটি মনে করেছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ দুপুরেই আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে সম্পাদকমণ্ডলী সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিকে মৌখিকভাবে জানিয়ে দিয়েছি, চিঠিও দেয়ার প্রক্রিয়াও চলছে। একই সঙ্গে এই চিঠি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও দেয়া হবে।’

তবে কেন্দ্রীয় কমিটির সেই সিদ্ধান্ত মানার কোনো কারণ নেই বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি শিমুল কুম্ভকার।

তিনি বলেন, ‘মৌখিকভাবে আমাদেরকে জানানো হয়েছে, তবে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির এই সিদ্ধান্ত মানছি না। কারণ আমরা যখনই জেনেছি সেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধের ব্যবস্থা নিয়েছি। তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছি।’

আরও পড়ুুন : ধর্ষণের অভিযোগে বহিষ্কার ঢাবি ছাত্র ইউনিয়ন নেতা

ঘটনাটি বছর খানেক আগের জানিয়ে শিমুল বলেন, ‘গত ১২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এই কমিটি আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা কিছুই জানতাম না, ১৪ তারিখ আমি বিষয়টি আমি জানতে পারি। এরপর ২০ তারিখ রাতে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ জানায় ভিকটিম সেই মেয়েটি। এরপর ২১ তারিখেই আমরা যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করি। একইসঙ্গে ভিকটিমকেও আমরা জানিয়ে দেই, সে যদি কোনো রকম আইনি পদক্ষেপ নিতে চান আমরা তার সঙ্গে থাকব।’

এদিকে ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংগঠনের একজন সদস্যের দ্বারা ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের ব্যর্থতা, অপরিণামদর্শিতা ও একই সংসদ মাধ্যমে ভিকটিমের প্রতি হওয়া অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী সভায় বেশ কিছু মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

মূল্যায়নগুলো হলো

১. অভিযুক্তকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে সীমাবদ্ধ থাকাকেই যথেষ্ট মনে করা হয়। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব থাকার কোনো অধিকার নেই। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ এতদিনেও ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত আকিফ আহমেদের ছাত্রত্ব বাতিলের কোনো দাবি করেনি। এর মধ্য দিয়ে অভিযুক্তের প্রতি সুস্পষ্ট নমনীয়তা প্রদর্শন করা হয়েছে।২. কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিক প্রেস বিজ্ঞপ্তি আকারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। শুধু ফেসবুক পেজে পোস্ট করে দায় সারার চেষ্টা হয় যাতে সংগঠনের প্যাড, দপ্তর সম্পাদকের স্বাক্ষর ও তারিখ ব্যবহার করা হয়নি।৩. ফেসবুক পোস্টে ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয় যার ফলে ভিকটিম ব্লেমিংয়ের সুযোগ করে দেয়া হয় এবং তাতে অপরাধকে লঘুভাবে উপস্থাপনের প্রয়াসও লক্ষণীয়। উক্ত ফেসবুক পোস্টে বিভিন্ন ব্যক্তি ভিকটিমের জন্য মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করলেও পোস্টটি সরিয়ে নেওয়ার আগ পর্যন্ত সেসব মন্তব্যের একটিও মুছে ফেলা হয়নি।৪. ভিকটিম ব্লেমিংয়ের বিষয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে প্রথম ফেসবুক পোস্টটি সরিয়ে নিয়ে আরেকটি পোস্ট প্রদান করা হয় এবং এবারেও আনুষ্ঠানিক প্রেস রিলিজ প্রদানের প্রয়োজন বোধ করেনি ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাবি সংসদ।৫. সর্বশেষ তৃতীয় আরেকটি পোস্টের অবতারণা করে প্রথম পোস্টে দেওয়া বিতর্কিত বক্তব্যের পক্ষেই যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয় এবং একই সঙ্গে ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ পায় এমন তথ্য সরবরাহ করা হয়। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ করা বাংলাদেশের আইনে অপরাধ ও ছাত্র ইউনিয়নের নীতি বিরুদ্ধ একটি কাজ। এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখা পর্যন্ত উক্ত ফেসবুক পোস্ট অপসারণ কিংবা ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশের জন্য কোনো প্রকার ক্ষমা প্রার্থনা করে কোনো বিবৃতি দেয়নি ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাবি সংসদ।৬. অভিযোগ গ্রহণের তারিখ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেয়া হয়। ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ গ্রহণের তারিখ ২০ মার্চ উল্লেখ করলেও ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউনকে দেয়া বক্তব্যে ১৪ মার্চের কথা বলা হয়। এ ছাড়া অভিযোগকারী ঢাবি সংসদের বিগত কমিটির কাছে প্রথম অভিযোগ করেছে বলে উক্ত রিপোর্টে দাবি করা হয়। এটি সত্য হয়ে থাকলে বিগত কমিটির নেতৃবৃন্দ ধর্ষণের মতো ঘটনায় নির্লিপ্ততা প্রদর্শন করেছিল বলে বিবেচ্য হবে, যা ছাত্র ইউনিয়নের আদর্শ ও সাংগঠনিক নীতির চূড়ান্ত লঙ্ঘন।

সিদ্ধান্ত১. পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের বর্তমান কমিটি স্থগিত থাকবে।

২. আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংগঠনিক ইমেইল ও ফেসবুক পেজ কেন্দ্রীয় সংসদ বরাবর বুঝিয়ে দিতে হবে।৩. ছাত্র ইউনিয়নের নিপীড়ন বিরোধী সেল এ ঘটনায় তদন্ত করবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তারা কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী বরাবর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। উক্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।৪. অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের জন্য বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন দাবি জানাচ্ছে। অভিযোগকারী যদি কোনো প্রকার আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চান সেক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর