কানাডার টরন্টোতে ফ্লাইট চালুর মাধ্যমে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সঙ্গে আকাশপথে যুক্ত হতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সরাসরি ফ্লাইট শুরুর জন্য অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে না।
ক্যাটাগরি ২ থেকে ক্যাটাগরি ১ এ উন্নীত হতে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশপথের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির (এফএএ) চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়। এখন অপেক্ষা এফএএ এর চূড়ান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদনের। মন্ত্রণালয় আশা করছে, খুব শিগগিরই এ বিষয়ে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।
এক সময় নিয়মিত নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসলেও ১৯৯৬ সালে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশকে ক্যাটাগরি-২ এ অবনমন করে এফএএ। সে সময় এই রুটে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোলান্ড অ্যান্ড ডগলাসের তৈরি ডিসি-১০ মডেলের উড়োজাহাজ ব্যবহার করতো বিমান।
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের এ অবনমনের ফলে সে দেশে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ হারায় বিমান। ক্যাটাগরি-১ এর মর্যাদা পুনরুদ্ধারে বেশ কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা চলছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের কাছ থেকে ১২টি নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজও কিনেছে বিমান। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের।
বোয়িংয়ের কাছ থেকে কেনা উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে আছে দুটি বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন, চারটি বোয়িং ট্রিপল সেভেন আর ছয়টি বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। এর মধ্যে ট্রিপল সেভেন ও ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজগুলো একটানা ১৬ ঘণ্টার বেশি উড়তে সক্ষম।
এ দীর্ঘ সময়ে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছে এফএএ-এর প্রতিনিধি দল। সবশেষ গত ফেব্রুয়ারিতেও একটি দল বাংলাদেশ সফর করে।
অবশ্য এর মধ্যে ২০১৪ সালে একবার ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ দিয়ে নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল বিমান। বিমানের সেই সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন স্টিল এক সংবাদ সম্মেলনে টিকিট বিক্রির ঘোষণাও দিয়েছিলেন। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিমান চলাচলে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। তারপরে অবশ্য সে উদ্যোগ আর আগায় নি।
বেসামরিক বিমান চলাচল প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিউইয়র্ক ফ্লাইটের জট খুলতে তাদের (এফএএ) প্রতিনিধি আসার কথা ছিলো কোভিডের আগে। কিন্তু কোভিডের কারণে এটা বাধাগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে একটি টিম বাংলাদেশ সফর করেছে।
‘তারা শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো দেখেছে। এতে তারা খুশি হয়েছে। তাদের এই অডিটের জন্য আমাদের একটি ফি দেয়ার কথা ছিলো, সফরের পুরো খরচটি আমাদের দেয়ার কথা ছিল, তারা এটা ওয়েভ করেছে। নিজস্ব খরচেই তারা অডিটের কাজ করেছে। তারা সেটিসফায়েড।’
তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার প্রশ্নে আমাদের বিমানবন্দরে যে ব্যবস্থাপনা, তা কিন্তু বিশ্বের যে কোনো বিমানবন্দরের চেয়ে বেশি। আমাদের এখানে দুইবার সিকিউরিটি চেক করতে হয়। তারপর ডগ স্কোয়াড আছে, ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন আছে। সামগ্রিক দিক দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো।
‘আইকাও (আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) এবং ফেডারেল এভিয়েশনের যারা এসেছিল তারাও এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এরপর আরেকটি দল আসবে, তারা ফিরে গিয়ে যে রিপোর্ট দেবে তার উপরই নির্ভর করবে নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু হওয়ার বিষয়টি। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই তারা আসবে।’
- আরও পড়ুন: টরন্টোতে বিমানের ফ্লাইট শুরু ২৬ মার্চ
আগামী ২৬ মার্চ রাত ১১টায় টরন্টোতে পরীক্ষামূলকভাবে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে বিমান। পুরোদমে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু হতে জুন পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।