স্কুলছাত্রীর প্রেমের টানে নোয়াখালী থেকে টাঙ্গাইল যাওয়া সেই তরুণীকে তার পরিবারের কাছে তুলে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সেই সঙ্গে মেয়ে দুটির মধ্যে যেন আর যোগাযোগ না থাকে তা নিশ্চিত করতে দুই পরিবারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নিউজবাংলাকে এই তথ্য দিয়েছেন টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল আলম বিজু।
তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা পারভীনের নির্দেশে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার শর্তটি দিয়েছেন। তবে ইউএনও নিউজবাংলাকে জানান, এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তিনি চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের শর্তের বিষয়টি তার জানা নেই।
চেয়ারম্যান সামছুল জানান, নোয়াখালীর মেয়েটি বাসাইলে ওই স্কুলছাত্রীর কাছে চলে এলে এলাকায় শোরগোল শুরু হয়। স্কুলছাত্রীর পরিবারও বিব্রত হয়। সে খবর পেয়ে ইউএনও মেয়ে দুটির পরিবারের সঙ্গে বসতে বলেন।ওই দুই মেয়ে আগে একবার ঢাকায় মিলিত হয়। সেখান থেকে তাদের বুঝিয়ে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। এরপর সোমবার নোয়াখালী থেকে টাঙ্গাইলের বাসাইলে স্কুলছাত্রীর বাসায় চলে আসে সেই তরুণী।
তিনি জানান, বাসাইলের ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর দুই বছর হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলে। জড়িয়ে পড়ে প্রেমে। তবে তাদের এই সম্পর্ক মানতে পারছে না পরিবার।
নিউজবাংলাকে তরুণী বলে, ‘আমি ওকে ভালোবাসি, তাই চলে এসেছি। আমি আমার ফ্যামিলিকে বলেছিলাম, ওর কাছে যাব, কিন্তু ওনারা রাজি হয়নি। তারা আমাদের সম্পর্ক মানবে না, তাই বাড়ি থেকে নিরুপায় হয়ে পালিয়ে এসেছি। এখন ওর পরিবার না মানলে আমরা দুজনে অন্য কোথাও গিয়ে বসবাস করব।’
- আরও পড়ুন: দুই তরুণীর প্রেম, বিয়েতে পরিবারের ‘না’
আর নবম শ্রেণির ছাত্রী বলে, ‘ওকে নিয়ে আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। আমরা ঢাকায় দেখা করেছি। ঢাকায় আমাদের ফ্যামিলি গিয়ে আমাদের আলাদা করে নিয়ে এসেছে। আমার ফোন নিয়ে নিয়েছিল। কয়েক দিন পর ফোন ফেরত দেয়। তখন আবার আমরা কন্টাক্ট করে ওকে আমার বাসায় নিয়ে এসেছি।
‘সামাজিকভাবে আমাদের মানবে না, কিন্তু আমি ওর সঙ্গেই থাকতে চাই। বাঁচলেও ওর সঙ্গে, মরলেও ওর সঙ্গে। পুলিশ বা তারা যদি আমাদের মেরে ফেলতে চায়, তাহলে দুজনকে একসঙ্গেই মারবে। আর যদি বাঁচিয়ে রাখতে চায়, তাহলে দুজনকেই রাখতে হবে।’
এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্কুলছাত্রীর বাড়িতে ভিড় জমাতে থাকে উৎসুক লোকজন।
চেয়ারম্যান সামছুল আলম বিজু বলেন, ‘ইউএনও মহোদয় আমাকে বিষয়টি সমাধানের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে দুই মেয়ের অভিভাবকের সঙ্গে বৈঠকে বসা হয়। সেখানে অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেকা রেখে তাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এই দুই মেয়ে যাতে আর যোগাযোগ করতে না পারে সে ব্যাপারে তাদের পরিবারকে নির্দেশ নেয়া হয়েছে।’
ইউএনও নাহিদা পারভীন বলেন, ‘নোয়াখালীর ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই মেয়ের পরিবারকে খুঁজে বের করা হয়। এরপর ফুলকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বলা হয়। তিনি তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে লিখিত রেখে দুই মেয়েকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।’
মেয়ে দুটির মধ্যে যোগাযোগ না রাখার নির্দেশের বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যানকে বিষয়টা দেখতে বলেছি, আপনারা ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
দুই তরুণীর যোগাযোগে কোনো আইনি বাধা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলে, ‘তারা প্রাপ্তবয়স্ক, কারও স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ নেই। আমার দায়িত্ব হচ্ছে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা... নাগরিক হিসেবে কারও অধিকারে আমরা বাধা দিতে পারি না। তবে কেউ আইনবিরোধী বা সমাজবিরোধী কাজ করলে আমরা আইন অনুযায়ী দেখব। তারা বেআইনি বা অনৈতিক কাজ না করলে তো আর আমাদের কিছু বলার থাকে না।’